সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের ক্ষমতা কুক্ষিগতকারী বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বলসহ দুর্নীতিবাজদের বিচারের দাবীংেত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ সাতক্ষীরা শহর শিবিরের উদ্যোগে আন্ত:থানা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের কমিটি গঠন আশাশুনি সমাজ কল্যাণ পরিষদে অর্থে ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও অনুদান বিতরণ নূরনগর আমীরের শপথ মজলিশে শূরা নির্বাচন ও কর্ম পরিষদ গঠন আশাশুনি টঙ্গী ইজতেমায় হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন সাতক্ষীরা উলামা পরিষদের মানব বন্ধন সাতক্ষীরায় কৃষি ঋণ কমিটির সভা নেহালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসুস্থ ছাত্রীর বড়ীতে \ উচ্ছ্বাসিত শিক্ষার্থী পরিবার বটিয়াঘাটায় ইজতেমায় হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বজ্রপাতে প্রাণহানি বাড়ছে

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২

এফএনএস : বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বজ্রপাতে প্রাণহানি বাড়ছে। পৃথিবীতে বজ্রপাতে যতো মানুষ মারা যায়, তার এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশে ঘটছে। বাংলাদেশেই বজ্রপাতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। হাওর, বাঁওড় ও বিল এলাকার জেলাগুলোয় বজ্রপাতে মৃত্যুর পরিমাণ বেশি। ঝড়বৃষ্টির সময় খোলা মাঠ, জলাশয়, নৌকা ও পথঘাটে যারা চলাচল করে তারাই বজ্রপাতের শিকার। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে বজ্রপাতের ঘটনা ১৫ শতাংশ বেড়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিরূপ প্রকৃতি, উষ্ণতা বৃদ্ধি, উঁচু বৃক্ষ নিধনসহ বিবিধ কারণে প্রতি বছরই বজ্রপাত বাড়ছে। তার সাথে পাল­া দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। বিশেষ করে গ্রামের মানুষের কাছে বজ্রপাত এখন ভয়াবহ আতঙ্কের বিষয়। এপ্রিল থেকে মে-জুন পর্যন্ত বজ্রপাতের মৌসুম। তবে এখন সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। আর একজন মৃত্যুর সঙ্গে অন্তত ১০ জন আহত হয়ে থাকে বলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বজ্রপাতে আহতরা স্থায়ীভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে বজ্রপাতে ২৬৫ জনের মৃত্যু ঘটছে। গত এক যুগে ওই মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজারেরও বেশি। চলতি জুন মাসের দেশের ১৩ জেলায় ৩১ জন বজ্রপাতে নিহত হয়েছে আর আহত হয়েছে আরো কয়েক জন। গত বছর বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু অতীতের যে কোনো বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। ২০২১ সালে মারা গেছে ৩৬৩ জন। বজ্রপাতে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের বেশির ভাগই খোলা মাঠ ও খেত অথবা হাওরের মধ্যে কৃষিকাজ করছিল। এমন পরিস্থিতিতে বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে অ্যারেস্টর বা বজ্রপাতনিরোধক যন্ত্র এবং আগাম সতর্কীকরণ যন্ত্র বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তাছাড়াও সরকার বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের মতো বজ্রপাত আশ্রয়কেন্দ্র করার পরিকল্পনা করেছে। ৪৭৬ কোটি টাকার ওই প্রকল্প মূলত দেশের বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে দীর্ঘদিন আগে ওই উদ্যোগ গৃহীত হলেও তাতে গতি নেই। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে হাওরাঞ্চলসহ দেশের বজ্রপাতপ্রবণ ২৩ জেলায় বজ্রনিরোধক বা অ্যারেস্টর বসানোর জন্য প্রায় ৯০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও একনেক বৈঠকে অনুমোদনের অপেক্ষায় তা বেশ কয়েক বছর ধরে পড়ে আছে। সূত্র আরো জানায়, সরকারি-বেসরকারি তথ্যানুযায়ী ২০১১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে বজ্রাঘাতে ৩ হাজার ১৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ২০১১ সালে ১৭৯ জন, ২০১২ সালে ২০১ জন, ২০১৩ সালে ১৮৫ জন, ২০১৪ সালে ১৭০ জন, ২০১৫ সালে ১৬০ জন, ২০১৬ সালে ২০৫ জন, ২০১৭ সালে ৩০১ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৯ সালে ১৬৮ জন, ২০২০ সালে ২৩৬ জন এবং ২০২১ সালে ৩৬২ জন বজ্রাঘাতে মারা গেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কৃষিকাজের সময় ৭০ শতাংশ, সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ি ফেরার পথে এবং গোসল কিংবা মাছ শিকারের সময় ১৩ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রাঘাতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের প্রায় ৭০ শতাংশই কৃষক। তবে শহরের ভবনগুলোতে বজ্রপাত প্রতিরোধক দন্ড থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম। বজ্রপাতের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক বছর হিসেবে ২০১৬ সালকে ধরা হয়। মৃত্যুর সংখ্যার কারণে তার আগের বছরের ১৭ মে বজ্রপাতকে ‘দুর্যোগ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মার্চ-এপ্রিল ও মে মাসে হাওরাঞ্চলের কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনা জেলায় বজ্রপাত বেশি হয়। জুন, জুলাই, আগস্টে সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও বরিশালে বেশি বজ্রপাত হয়ে থাকে। তাছাড়া কুড়িগ্রাম ও পঞ্চগড়ে বজ্রপাত বেশি হয়। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়। যদিও বজ্রপাতের আগাম বার্তা পেতে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ জেলায় বজ্রপাতের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ যন্ত্র স্থাপন করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। যন্ত্রটি সাইরেন বাজিয়ে লাল হলুদ ও নীল রঙের মাধ্যমে বজ্রপাতের সতর্ক সংকেত দেয়। তার মাধ্যমে বজ্রপাত ও বজ্রঝড় কোন অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হবে তা এক ঘণ্টা আগেই আবহাওয়া অফিস জানিয়ে দিতে পারে। এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু বাংলাদেশে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ‘আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ (প্রাক-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা) ও লাইটেনিং অ্যারেস্টর (বজ্রপাতনিরোধক) স্থাপনের মাধ্যমে মানুষকে রক্ষার পদক্ষেপ নেয়া যায়। আর ওই কাজটি সরকারকেই করতে হবে। তাছাড়াও বেশি দরকার সচেতনতা। বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে অন্তত ৪০টি বজ্রপাত হয় বলে আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। বিশ্বে বজ্রপাতে যত মানুষ মারা যায় তার এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশে। বিগত বছরগুলোয় অন্তত ১৫ শতাংশ বেড়েছে বজ্রপাত। প্রযুক্তির ব্যবহার করে বজ্রপাতে মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে। বিশ্বের দেশে দেশে ওই প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। একেকটি বজ্রপাতের সময় প্রায় ৬০০ মেগা ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। অথচ একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য মাত্র ১০০ ভোল্ট বিদ্যুতই যথেষ্ট। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া বজ্রপাতের অন্যতম কারণ। সেক্ষেত্রে ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বজ্রপাতের আশঙ্কা অন্তত ১২ শতাংশ বেড়ে যায়। তাছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহার বৃদ্ধি, অতিরিক্ত জনঘনত্ব ও বজ্রপাত মৌসুমে মাঠে-ঘাটে এবং জলাশয়ে মানুষের কর্মক্ষেত্রে সম্পৃক্ততা বেশি হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে হাওর এলাকায় একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। কারণ হাওরে বজ্রপাত সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায়। প্রথমে ১৫টি স্থানে বজ্রনিরোধক বা অ্যারেস্টর বসানো হবে। ওই উদ্যোগ সফল হলে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে আসবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com