বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের বিনাভোটে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল সহ দোষরদের দুর্নীতির প্রতিবাদে ও সদস্যপদ বাতিলের দাবীতে মানববন্ধণ ও সমাবেশ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো: মাসুদ রানা বৈদেশিক বিনিয়োগের এখনই উপযুক্ত সময় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে, কর্মসংস্থানে, রপ্তানীতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে ত্রিমাত্রিক আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরে রূপ নিয়েছে মোংলা বন্দর বাগেরহাটে হরিণের মাংসসহ আটক ৬ শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব একনেকে ৪২৪৬ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন লন্ডন ক্লিনিকে নেওয়া হয়েছে খালেদা জিয়াকে ৯৯৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ: এস আলমের ছেলেসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন মূল্যস্ফীতির কারণে মধ্যবিত্তরাও চাপে: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

বাংলাদেশে নতুন শুরুর অপেক্ষায় রোমাঞ্চিত মুর

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩

এফএনএস স্পোর্টস: সংবাদ সম্মেলন শেষ করে ফিরে যাচ্ছিলেন পিটার মুর। হঠাৎ পরিচিত এক ফটোসাংবাদিককে দেখে থামলেন। কুশল বিনিময় করলেন হাসিমুখে। খুনসুটিও জমে উঠল খানিকটা। বাংলাদেশে তিনি আগেও এসেছেন কয়েক দফায়। পরিচিত অনেকে তো থাকবেই। তবে এদেশে তিনি পুরনো মুখ হলেও এবার তার পরিচয়টা নতুন। আগে প্রতিবারই এসেছেন জিম্বাবুয়ের হয়ে। সেই মুর এখন আইরিশ ক্রিকেটার। নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের সবশেষ ম্যাচটি মুর খেলেছিলেন ২০১৮ সালের নভেম্বরে, মিরপুরে জিম্বাবুয়ের হয়ে। থমকে যাওয়া সেই টেস্ট ক্যারিয়ার পুনরুজ্জীবিত করার হাতছানি তার সামনে সেই শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামেই। এবার আয়ারল্যান্ডের হয়ে। চট্টগ্রামে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি শোনালেন ঠিকানা বদলের সেই গল্প। মুরের ক্যারিয়ারের নতুন শুরুটা বাংলাদেশে হবে কি না, তা জানা যাবে আর দিন দুয়েক পরই। তবে শুরুটা হয়েছিল তার এখানেই। ২০১৪ সালে মিরপুরে ওয়ানডে দিয়ে তার আন্তর্জাতিক অভিষেক। জিম্বাবুয়ের হয়ে সেবার দুটি ওয়ানডে খেলেন সেই সময়ে তরুণ কিপার-ব্যাটসম্যান। পরের চার বছরে আরও তিনবার বাংলাদেশে আসেন তিনি। খেলেন ২ টেস্ট, ৭ ওয়ানডে ও ৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। শুধু জাতীয় দল নয়, বাংলাদেশ সফরে করেছেন তিনি জিম্বাবুয়ের ‘এ’ দলের হয়েও। সবশেষ ২০১৮ সালের সফরে মিরপুরে খেলেন টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ৮৩ রানের ইনিংস। প্রায় পাঁচ বছর পর আবার বাংলাদেশে এলেন তিনি আয়ারল্যান্ডের হয়ে। আইরিশ পাসপোর্ট অবশ্য আগে থেকেই ছিল তার। তাই ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই খোলা ছিল আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলার দুয়ার। তবে তখন তিনি বেছে নেন জন্মভ‚মিকে। এখন তাহলে জিম্বাবুয়ে ছেড়ে আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত কেন? প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসি ফুটে উঠল মুরের মুখে। যেন বোঝাতে চাইলেন, ‘এটা তো বলা যাবে না!’ রহস্য অবশ্য খোলাসা করলেন একটু পরই। তার সিদ্ধান্তে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে ২০১৯ সালে জিম্বাবুয়েকে দেওয়া আইসিসির নিষেধাজ্ঞা। ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে জিম্বাবুয়েকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় আইসিসি। যে কারণে ওই বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ঠিকানা বদলে ফেললেও সম্পর্ক ছিন্ন করেননি মুর। এখনও খেলছেন জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া ক্রিকেটে। মূলত কখনও দল বদলানোর ইচ্ছেও ছিল না তার। ২০১৬ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, আর্থিক দিক থেকে খুব একটা নিরাপদ না হলেও জিম্বাবুয়ে ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা নেই তার। সেই মুরই জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের অধ্যায়ের ইতি টেনে আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলার জন্য তিন বছর ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, এক পূর্ণ সদস্য দেশ থেকে আরেক পূর্ণ সদস্য দেশে যাওয়ার জন্য তিন বছর অপেক্ষা করতে হয়। ২০১৯ সালের অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন মুর। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে সেই টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের সেরা ৯২ রানের অপরাজিত ইনিংসটি খেলেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। পরে গত বছরের অক্টোবরে তিন বছর পূর্ণ হলে আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলার অনুমতি পান তিনি। ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বছর ত্যাগ স্বীকার করার পেছনে যে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের পারিপার্শ্বিক অবস্থার বড় প্রভাব ছিল, তা ফুটে উঠল মুরের কণ্ঠে। “আমার এখনও অনেক বন্ধু আছে জিম্বাবুয়েতে। তাদের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। তারা এখন আবার উন্নতি করছে। দারুণ একজন কোচ পেয়েছে। অনেক ভালো ক্রিকেটারও আছে। দারুণ সমর্থন পায় তারা। তবে একটা সময় ছিল, যখন সবকিছু ভালো যাচ্ছিল না। আমি তখন দল বদলানোর সিদ্ধান্ত নিই।” আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলার অনুমতি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল যে নাগরিকত্ব, দাদীর সৌজন্যে সেটি পেয়েছেন তিনি। নতুন দেশের হয়ে খেলতে নামার আগে এই বিষয়ক পরিসংখ্যানও মুখস্থ তার। “আমার দাদী আইরিশ নাগরিক। তার সূত্রেই ছোটবেলা থেকে আমারও আয়ারল্যান্ডের পাসপোর্ট আছে। (জিম্বাবুয়ে ছাড়ায়) আমার কোনো আক্ষেপ নেই। আশা করি, দুটি ভিন্ন দেশের হয়ে টেস্ট খেলা ১৭তম ক্রিকেটার হব আমি (হাসি)।” ক্রিকেটের কারণে বাবা-মাকে জিম্বাবুয়েতে রেখেই আয়ারল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছেন মুর। শুধু পরিবার নয়, পরিচয় বদলের জন্য তাকে ত্যাগ করতে হয়েছে ক্যারিয়ারের সম্ভাব্য সোনালি সময়ও। “প্রায় নিয়মিতই বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে জিম্বাবুয়েতে যাই। যখন তাদের বলেছি, আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলবৃঅন্যরকম ছিল। আমি জিম্বাবুয়ের সহ-অধিনায়ক ছিলাম। তখন ২-৩ বছর ত্যাগ স্বীকার করাৃ আমার বয়স এখন ৩২, মানে ২৯ থেকে ৩২ বছর পর্যন্ত আমাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। ক্যারিয়ারের সেরা সময় বলা যায়।” শুধু সহ-অধিনায়কত্বই নয়, ২০১৯ সালে জিম্বাবুয়েকে ৪টি ওয়ানডেতে নেতৃত্বও দিয়েছেন মুর। সাফল্য পেয়েছেন শতভাগ। দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা তার কাছে অতুলনীয়। তবে আরও বড় প্রাপ্তির অপেক্ষায় এখন তিনি। “জিম্বাবুয়ের অধিনায়কত্ব করা অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল। আমার জন্য অনেক বড় সম্মানের ব্যাপার। তবে আমি মনে করি, আমার জন্য সবচেয়ে বড় সম্মানের বিষয় হবে, যদি আয়ারল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলতে পারি।” “আমি খুব রোমাঞ্চিত। আমার সবশেষ টেস্ট ম্যাচ ছিল ঢাকায়। ব্যক্তিগত দিক থেকে বেশ ভালো খেলেছিলাম। ম্যাচটি আমরা পঞ্চম দিনে নিয়েছিলাম। আবার এখানে ফেরা অনেক সম্মানের। এই চ্যালেঞ্জের দিকে তাকিয়ে আছি।” নতুন অধ্যায়ের দুয়ারে দাঁড়িয়ে তিনি ফিরে গেলেন সেই ছেলেবেলায়, যখন ক্রিকেটকে আপন করে নিতে শুরু করেছিলেন। “আমি স্কুল জীবন থেকে ক্রিকেট খেলি। আমার দুই ভাইও ক্রিকেট খেলত। আমার বাবাও ক্রিকেট ভালোবাসতেন। আমি এমন একটি পরিবারে বড় হয়েছি, যেখানে সবাই ক্রিকেট পছন্দ করে সবাই। এভাবেই ক্রিকেটে চলে আসি।” “আগে শুধু ব্যাটসম্যান ছিলাম। ১৯ বছর বয়সে প্রথম কিপিং শুরু করি। আগে অফ স্পিন করতাম। পরে বুঝতে পারলাম, স্কোয়াড সাজানোর সময় তারা সবসময় দুজন কিপার নেয়। আমার মনে হয়েছে, এটিকেই সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো উচিত (হাসি)।” মুরের তিন বছরের ছোট ভাই অ্যান্থনি মুরও খেলেছেন পেশাদার ক্রিকেট। ২০১৯ সালে জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে চার ম্যাচে মাঠে নামেন তিনি। তবে ক্রিকেটে সুবিধে করতে না পেরে বদলে ফেলেছেন ক্যারিয়ারের গতিপথ। “সে (অ্যান্থনি) এখন ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছে। আইনজীবী হিসেবে কাজ করছে। আয়ারল্যান্ডে পড়ালেখা করেছে সে। পরে চলে এসেছে জিম্বাবুয়েতে। আমার ক্ষেত্রে উল্টো। আমি শুরু করেছি জিম্বাবুয়েতে, এখন আয়ারল্যান্ডে আছি (হাহা)।”

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com