এফএনএস : বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিকে পুরো বিশ্বের নজর রয়েছে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তাই তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয় সেই প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে মডেল নির্বাচন হোক, এমনটিই চাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচন ও সমসাময়িক অন্যান্য ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় সোমবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন বিøঙ্কেন। ২০ মিনিট ধরে চলা বৈঠকে বাংলাদেশে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্বের ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেন ড. মোমেন। তিনি এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে বৈঠকের বরাত দিয়ে ড. মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, আমি (মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে) বলেছি, অবশ্যই। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। আমরাও মডেল নির্বাচন চাই। এ ব্যাপারে আপনারাও আমাদের সাহায্য করেন, যেন আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে পারি। আলোচনায় কোন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশি গুরুত্ব দিয়েছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ে (যুক্তরাষ্ট্র) গুরুত্ব দিয়েছে।’ দুই পররাষ্ট্র মন্ত্রীর এই বৈঠকে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রসঙ্গ ছাড়াও রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন, শ্রম ও অর্থনৈতিক ইস্যু, বাক স্বাধীনতা, সংখ্যালঘু ইস্যু, ইউক্রেন যুদ্ধ, খুনি রাশেদ চৌধুরীর প্রত্যাবাসন ইত্যাদি বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কামনা : দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। একই প্রশ্নের ধারাবাহিকতায় তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েও আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তারা চান এখানে একটি আদর্শ নির্বাচন হবে। আমি বলেছি- অবশ্যই, আমরাও আদর্শ নির্বাচন চাই। আমাদের রক্তে গণতন্ত্র, আমাদের রক্তে জাস্টিস। আমরা গণতন্ত্র, জাস্টিস ও সম্মান সমুন্নত রাখার জন্য ৩০ লাখ প্রাণ দিয়েছি। তবে এ বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনারাও আমাদের সহায়তা করুন; যাতে করে আমরা অবাধ, সুষ্ঠ ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে পারি। চলতি বছরের শেষে অথবা সামনের বছরের শুরুতে প্রথমে বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকার সব পক্ষকে নিয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ দেখালেও এখন পর্যন্ত অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে আসতে সম্মত হয়নি। এমনকি দলটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে সরকার প্রতিশ্রææতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরা বলেছি-অবশ্যই, আমরাও এটি চাই। আমরা অবাধ, সুষ্ঠ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। এটি করার জন্য আমরা ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্র করেছি; যাতে করে কোনও জাল ভোট না হয়। আমরা স্বচ্ছ ব্যালট বক্স করেছি, আমরা একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করেছি। তাদের বাজেটও স্বাধীন এবং নির্বাচনের সময়ে তাদের হাতে সব ক্ষমতা থাকে। তারা (ইসি) যেকোনও লোককে বদলি করতে পারে, যেকোনও লোককে সাসপেন্ড করতে পারে এবং এরমধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকও আছে। গত ১৪ বছরে দেশে অসংখ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানিয়েছেন, এরমধ্যে গুটি কয়েক নির্বাচনে সমস্যা হয়েছে এবং সেখানে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু নির্বাচন একা একা হয় না। আমরা আপনাদের পর্যবেক্ষক চাই এবং আমরা তাদের স্বাগত জানাবো। যুক্তরাষ্ট্রকে বেশি সংখ্যক পর্যবেক্ষক পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তবে পর্যবেক্ষক যেন বাংলাদেশি-বংশোদ্ভূত লোক না হয়।’ সরকার একা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না’ মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এর জন্য সকল বিরোধী দলকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরও প্রতিশ্রæতি দিতে হবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে। তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। দেশের নির্বাচনে সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে নির্বাচনে লোক মারা যায়। কিন্তু আমরা চাই না আমাদের একটি লোকও মারা যাক। আমরা খুব ইগোইস্টিক। আমরা এত উদ্বেলিত হয়ে যাই যে, আমরা লোক মেরে ফেলি। আমরা চাইছি যে, একটি লোকও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যেন মারা না যায়। যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল চায় বাংলাদেশ : বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলিতা বজায় থাকলে যুক্তরাষ্ট্রেরই লাভ বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বৈঠকের আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা (বৈঠকে) একটি ইস্যু তুলে ধরেছি। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক তহবিল আছে, ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স, কিন্তু আমরা সেগুলো পাই না। এটি যেন যুক্তরাষ্ট্র বিবেচনা করে এবং আমরা যেন পাই। তারা জানিয়েছে- যে এখানে শ্রম ইস্যু আছে। আমরা তাদের জানিয়েছি যে, আমরা শ্রমের বিষয়ে দুটি কমিটি করেছি…এগুলো কাজ করছে। আমরা শ্রম পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক উন্নত করেছি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বৈঠকে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টির বিষয়টি মার্কিনিরা তুলেছেন। আমরা বলেছি- আমরা এখনও স্বল্পোন্নত দেশ। ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি উন্নয়নশীল ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য। আমরা ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাবো। এছাড়া আমরা এই সুবিধা ২০২৯ সাল পর্যন্ত তো পাচ্ছি।’ ‘বাক স্বাধীনতা’ : যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের বাক স্বাধীনতা ও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি- আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করেছি বাক স্বাধীনতা হরণ করার জন্য নয়। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। আমাদের দেশে ১ হাজার ২৪১টি দৈনিক পত্রিকা বের হয়, ৪৩টি টিভি চ্যানেল আছে এবং তারা হাইপার অ্যাকটিভ। বাংলাদেশে বিরোধী দল যখন-তখন বিক্ষোভ করতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে আমরা সতর্ক। বিক্ষোভ করতে আমাদের আপত্তি নেই। আলোচনা-সমালোনাতেও আমাদের আপত্তি নেই। তবে এখানে সম্পদ ও সম্পত্তি কেউ ক্ষতি করলে আমরা শাস্তি দেবো। ‘সংখ্যালঘু’ প্রসঙ্গ : সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেকোনও নির্যাতনে ক্ষেত্রে সরকার অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়। এটি হিন্দু সম্প্রদায়, নাকি আহমেদিয়া সম্প্রদায়; সেটি বিষয় নয়। এসব ক্ষেত্রে সরকার চায় সবাই মিলেমিশে থাকতে।’ ‘বাংলাদেশে কিছু লোক আছে, যারা সংখ্যালঘুদের দেখতে পারে না, ঝামেলা করতে চায়’ বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘কিন্তু সরকার এ বিষয়ে অনেক কঠোর।’ ‘ইউক্রেন যুদ্ধ’ বন্ধে আহ্বান : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। জ্বালানি ও নিত্যপণ্যসহ সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষও কষ্টে আছে। এমন তথ্য তুলে ধরে ওই যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য উদ্যোগ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি এ বিষয়ে কোনও সাহায্য করতে পারলে, তা করতেও আগ্রহী ঢাকা। বৈঠকের পরে এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে লোকজনের অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমরা তাদের বলেছি- এটি (যুদ্ধ) পারলে বন্ধ করো। এর জন্য সাহায্য লাগলে আমাদের বলো।’ যুদ্ধের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, দরিদ্র লোক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন- উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের গরীব লোক যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সেজন্য আমরা অনেক ভালো কাজ করেছি। আমরা প্রায় দেড়কোটি লোককে সস্তায় খাবার দেই। অনেক লোককে বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি; যারা বিধবা বা যাদের চাকরি নাই।’ রাশেদ চৌধুরীর প্রত্যাবাসন : বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদে চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছে। তাকে ফেরত চায় বাংলাদেশ। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সুশাসন চায়, আইনের শাসন চায়। এখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) কোনও খুনি থাকুক, এটি তোমার দেশের নাগরিকরা পছন্দ করে না। তুমি খুনিকে ফেরত দাও।’ বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ ‘মোটামুটি দমন করেছে’ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক এবং আমরা এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত যা হয়েছে, সেই বিষয়ে তোমরা জানো। আমরা এধরনের দুর্ঘটনা আর দেখতে চাই না। র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানিয়েছি- তাদের (র্যাব) কারণে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ বন্ধ হয়ে গেছে।’ জো বাইডেনকে লেখা প্রধানমন্ত্রীর চিঠি হস্তান্তর : বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। চিঠিটি তিনি শুরু করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রশংসা দিয়ে এবং শেষ করেছিলেন ‘জয় বাংলা’ দিয়ে। ওই চিঠির উত্তর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি বিøনকেনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরের চিঠিটি হস্তান্তর করেছেন। বৈঠকের পরে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে একটি চিঠি দিয়েছেন।’ এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশ আসার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওয়াশিংটনে দুদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সোমবারের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. আব্দুল মোমেন জানান, বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রও চায়, বাংলাদেশে মডেল নির্বাচন হোক। এ সময় দুদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং গত ৫০ বছরের দৃঢ় সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে আগামী ৫০ বছরের জন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করার আকাঙ্খা ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে বিস্তৃত, গতিশীল ও বহুমুখী উল্লেখ করে ড. মোমেন এ সম্পর্ককে আরও উন্নত, বর্ধিত ও সুদৃঢ় করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি ‘জয় বাংলা’ দিয়ে শেষ হওয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পাঠানো বার্তার জন্য ধন্যবাদ জানান। বৈঠকে উভয় নেতা অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব জোরদার ও বহুমুখীকরণ, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান, জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রম অধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা এবং নির্বাচনসহ পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশে শ্রম খাত সংস্কারের চলমান এবং সম্পন্ন কাজ সম্পর্কে অ্যান্টনি বিøঙ্কেনকে অবহিত করে ড. মোমেন আশা প্রকাশ করেন, দুদেশের মধ্যে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই প্রচেষ্টাগুলোকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হবে। পাশাপাশি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে শ্রম পরিস্থিতির উন্নতির জন্য দুদেশের মধ্যে চলমান যৌথ কর্মকাণ্ডেরর অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সদ্ব্যবহার করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতকে বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান। ড. মোমেন মার্কিন সরকারকে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় উদার সহায়তা এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর ওপর জোর দেন। এসময় অ্যান্টনি বিঙ্কেন ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে উদারভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা আব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। এসময় ড. মোমেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আবারও অনুরোধ জানান। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে পাঠানো উষ্ণ বার্তার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান, দূতালয় উপ-প্রধান মিস ফেরদৌসী শাহরিয়ার, মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলম এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অ্যান্টনি বিøঙ্কেনের সঙ্গে কাউন্সিলর ডেরেক শোলে, জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট জুলিয়েটা ভালস নয়েস, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শ্রম বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট কারা ম্যাকডোনাল্ড, দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট মিস আফরিন উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কঠোরতম : ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিঙ্কেন এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরপরই এক ব্রিফিং অনুষ্ঠান হয়। এতে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের কঠোরতম আইনগুলোর একটি বলে উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান উপ-মুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, সর্বশেষ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ ধাপ পিছিয়ে ১৬২তম হয়েছে। আর এজন্য সবচেয়ে বড় কারণ হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। তিনি বলেন, আমাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী, সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের কঠোরতম আইনগুলোর একটি হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এবং এই আইন সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছি। মুক্ত গণমাধ্যম এবং সচেতন নাগরিক যে কোনো দেশ এবং তার গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন কন্টেন্টের ওপর যে নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রয়েছে তার প্রভাব নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে প্যাটেল বলেন, বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বে অবাধ ও নিরপেক্ষ নীতিকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে কোনো রাজনৈতিক প্রার্থী বা কোনো দলকে পৃষ্ঠপোষকতা করে না। প্যাটেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে আরও গভীর সম্পর্ক চায়। আর সে কারণেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিøঙ্কেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সোমবার বৈঠক করেছেন।