এফএনএস স্পোর্টস: বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া। ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে এসে ফুটবল ক্যারিয়ার গড়েছেন। ১০ বছর আগে, ২০১৩ সালে। ঐ সময়টায় আরও একাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি এসেছিলেন। কিন্তু তখন কেউ টিকে থাকতে পারেননি। গরম, আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারা, খাদ্যাভ্যাসে মানিয়ে নিতে না পারাসহ আরও সমস্যা ছিল। কিন্তু ময়মনসিংহের ছেলে জামাল ভুঁইয়া টিকে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ফুটবলে। অদম্য মানসিকতায় জামাল নিজের জায়গা করে নেন ক্লাব ফুটবলে, পরে জাতীয় দলে। তখন যারা জাতীয় দলের মাঝমাঠে খেলতেন, তারাও জাতীয় দলে নিজেদের বিকল্প কাউকে দেখতেন না। কচ্ছপ আর খরগোশের দৌড়ের গল্পের মতোই। সেটিও জামালকে সুযোগ করে দিয়েছিল। এরপর যা হয়েছে, সেই গল্পটা সবার জানা। জামাল ভুঁইয়া পাকাপোক্ত আসন গেড়ে বসেছেন জাতীয় দলে, মাঝমাঠের গিয়ার বক্সের মুঠোয়। আর্মব্যান্ড হাতে জাতীয় দলের সেনাপতি হয়ে গেলেন। অধিনায়ক হয়ে জামাল ভুঁইয়া জাতীয় দলের একে একে ৭৬টা ম্যাচ খেলে ফেললেন। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে শুরু করে এশিয়ান গেমস ফুটবল, অলিম্পিক গেমস ফুটবল বাছাই এবং বিশ্বকাপ ফুটবল বাছাই পর্যন্ত। এর মধ্যে জাকার্তা এশিয়ান গেমস ফুটবলে জামালের গোলে কাতারকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার গল্পটা উজ্জ্বল। আর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ৭৫ ম্যাচে গোল করেছেন ১টি। আর সেটি হচ্ছে ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কায় মালদ্বীপের বিপক্ষে ২-১ গোলে জয়ের ম্যাচটাতে। ২০১৮ সাল থেকে জামাল বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক। আগে-পরে সব সময় বলে আসছিলেন, জামাল সাফের ট্রফি দেশকে উপহার দিতে চান। কিন্তু কোনো দিনও শোনা গেল না, বাংলাদেশকে সাফের ট্রফি উপহার দিতে অধিনায়ক হিসেবে কী কাজটা করেছেন তিনি। এখন জামালের বয়স ৩৩। তার খেলার প্রশংসার কথা দেশের কারো মুখে শোনা যায় না। ২০১৮ সাল থেকে অধিনায়ক হওয়ার পরও একজন ফুটবলারও বলেননি জামাল পুরো দলকে একটা ছাতার নিচে আনতে সবাইকে উজ্জীবিত করেছেন। স্বাভাবিকভাবে যা যা করে সেটাই, বাড়তি কিছু চোখে পড়েনি বলে টিমমেটদের উপলব্ধি। একক ভাবনায় থাকা জামাল কখনো মোহামেডান-আবাহনীতেও খেলেননি। সমর্থকনির্ভর দেশের দুই ক্লাবের জার্সি গায়ে খেলতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের জামাল তারকা খ্যাতি পেয়েও নিজ দেশ ডেনমার্কের কোনো ক্লাবে খেলার সুযোগ পেয়েছেন বলে শোনা যায়নি। তার পরও আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগের দলে ডাক পেয়ে সেখানে নাম লিখিয়েছেন। বাংলাদেশের ফুটবলে খেলে জামাল অর্থ-বিত্ত সবই করেছেন। ফুটবল খেলেছেন বড় পারিশ্রমিকে। বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন জগতেও জামালের নাম উঠেছে। খ্যাতি, অর্থ, প্রচার-সবই পেয়েছেন জামাল। কিন্তু জামালের যে আসল জায়গা, সেই বাংলাদেশ ফুটবল দল থেকেই তিনি যেন ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছেন। সংকুচিত হয়ে আসছে জামালের বাংলাদেশ। জাতীয় দলের এই অধিনায়ককে এখন ৯০ মিনিট খেলতে দেখা যায় না। ম্যাচের পর ম্যাচ খেলছেন, কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে তাকে তুলে নিচ্ছেন কোচ। গত ৩ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। সাফে অধিনায়ক জামালকে ভুটানের বিপক্ষে ৯০ মিনিট খেলতে দেখা গেলেও কঠিন ম্যাচে লেবাননের বিপক্ষে তুলে নিতে হয়েছিল। মালদ্বীপের বিপক্ষে তুলে নিয়ে শেখ মোরসালিনকে নামিয়েছিলেন কোচ। সেই মোরসালিন পরে জাতীয় দলের মূল একাদশে জায়গা পেলেও জামালকে বসিয়ে দিতে হয়েছে। জাতীয় দলের ম্যানেজার আমের খান জানান, কোচের পরিকল্পনা ছিল ৬০ মিনিট পর জামালকে তুলে আনবেন।’ ম্যাচের পর ম্যাচ এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে ফুটবল মহলে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে-জামাল কি তাহলে একাদশে থাকার মতো পরিস্থিতিতে নেই? জামালও কি সেটাই উপলব্ধি করছেন? জামাল এশিয়ান গেমস ফুটবলে খেলবেন না। আর আর্জেন্টিনায় খেলার কারণে দেশের ক্লাব ফুটবলে খেলার কথা ভাবনায় রাখছেন না তিনি। আর্জেন্টিনায় থাকতেই জামাল জানিয়েছিলেন, জাতীয় দলের ম্যাচগুলো খেলবেন।’ আসছে মৌসুমে নতুন ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিও করেননি। ১ সেপ্টেম্বর আর্জেন্টিনা থেকে ঢাকায় সকালে পৌঁছে সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, আর্জেন্টিনার সোল দ্য মায়ো ক্লাবে ভালো পারফরম্যান্স করতে পারলে ওপরের লিগে সুযোগ পাবেন।’ জামাল সেই ভাবনায় থাকলে ঢাকার ক্লাব ফুটবলের পাঠও শেষ ধরা যায়। আর জাতীয় দলে ৬০ মিনিটের স্থায়িত্ব শূন্য মিনিটে চলে আসে কি না, তা-ই বা কে জানে! জামাল দূরদর্শী। হয়তো উপলব্ধি করছেন।