বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে কোনো বাধা দেখছি না: বদিউল আলম ষড়যন্ত্র থেমে নেই: তারেক রহমান একাত্তরের অমীমাংসিত সমস্যা মীমাংসা করুন —পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ডিজিটাল বিপ্লবের পূর্ণ সুবিধা এখনও গ্রহণ করতে পারিনি: ড. ইউনূস নিষেধাজ্ঞায় থাকা রোটা বন্দর দিয়েই ইসরাইলে অস্ত্র পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন যুদ্ধে সেনা পাঠাবে পশ্চিমা দেশগুলো? আদানির বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ, পর্যালোচনার দাবি বাংলাদেশের রেস্তোরাঁয় বসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ধূমপান, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি ছড়ালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাশিয়ার কুস্কের্ উত্তর কোরিয়ার ১০০ সেনা নিহত, দাবি দক্ষিণ কোরিয়ার পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনার বাড়ি সাতক্ষীরায় বইছে আনন্দের জোয়ার

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি \ সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের বাড়ি সাতক্ষীরায় বইছে আনন্দের জোয়ার। সাতক্ষীরা শহরের সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা সাবিনা খাতুন। জয়ের পর সাবিনার বাড়িতে ফুল ও মিষ্টি নিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জেলা ফুটবল ফেডারেশন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার নেতৃবৃন্দসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার ফুটবল প্রেমিকরা। এদিকে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ সকল খেলোয়াড়কে অভিনন্দন জানিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির ও পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পরিবারে পাঁচ বোনের মধ্যে সাবিনা চতুর্থ। বড় বোন সালমা খাতুন সম্প্রতি লেবানন থেকে বাড়ি ফিরছেন। মেঝো বোন হালিমা খাতুন বর্তমানে লেবানন আছেন। বাড়িতে রয়েছেন মা মমতাজ বেগম, সেজো বোন শিরিনা খাতুন ও ছোট বোন মুন্নী। বাবা সৈয়দ আলী গাজী একজন ভাঙ্গাড়ী ব্যবসায়ী ছিলেন। সাতক্ষীরা শহরে স্ত্রী ও ৫ কন্যা সন্তান নিয়ে অত্যন্ত কষ্টে জীবন যাপন করতেন। ২০১০ সালে বড় মেয়ে সাবিনা ও ২০১২ সালে মোঝো মেয়ে হালিমাকে লেবননে পাঠানোর পর সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। মেয়েদের সহযোগিতায় শহরের সবুজবাগ এলাকায় ৬ কাঠা জমি ক্রয় করে একপাশে একতলা বাড়ির অর্ধেক আংশ শেষ করে বসবাস করছিলেন। পরে সাবিনা জাতীয় নারী ফুটবল দলে চান্স পান। সংসারে কেবল সুঃখ শান্তি ফিলো ঠিক তখনই তার বাবা ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর আল­াহ’র ডাকে সাড়া দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। সাবিনার মা মমতাজ বেগম বলেন,সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ নারী দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শুনে কী যে আনন্দ লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এই দলে আমার মেয়ে রয়েছে এর চেয়ে গর্বের কিছু হতে পারে না। আমার মেয়ের ধ্যান-জ্ঞান ফুটবলকে নিয়ে। টুর্নামেন্টে আট গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ায় আমাদের আনন্দের অন্ত নেই।তিনি আরও বলেন, ওর বাবা যদি আজ বেঁচে থাকতো তাহলে কী যে খুশি হতো তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। সাবিনার সাফ জয়ের প্রতিক্রিয়ায় তার বড় বোন সালমা খাতুন বলেন, আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। সাবিনা দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। সেরা গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছে। সাবিনা সাতাক্ষীরার গর্ব ও দেশের গর্ব। তিনি আরো বলেন, সাবিনা খেলায় জয়লাভ করার পর আমার কাছে নেপাল থেকে কয়েকবার মোবাইল করেছে। জানতে চেয়েছে আমরা তার খেলাগুলো দেখেছি না। বিশেষ করে ফাইনাল খেলা। তাছাড়া মা কেমন আছে শুনছে। আজ ২১ তারিখ তারা সবাই দেশে ফিরবে বলে জানিয়েছে। মাকে দোয়া করতে বলেছে। বিশেষ করে মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে মোবাইল করে বলেছে মায়ের জন্যে কি নিয়ে আসবো। আর তোমাদের কিছু লাগবে কিনা জানতে চেয়েছে। বাড়ি থেকে ঢাকা বিমান বন্দরে বোনকে রিসিভ করতে যাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কেউ যাবো না। কারণ করোনার কারনে আমাদের যাওয়ার অনুমতি নেই। সাবিনার সেজো বোন শিরিনা খাতুন বলেন, আমার পিতা খুব গরীব মানুষ ছিলেন, ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করতো সাবিনা। ইচ্ছা ছিল ফুটবলার হবে। প্রথম দিকে বাসা থেকে বাধা দিলেও পরে যখন ভালো খেলতে লাগলো তখন আর কেউ বাঁধা দেয়নি। এখন আমাদের মুখ উজ্জল করেছে। সাবিনার জন্য সবার কাছে আমরা দোয়া চাই। সাবিনা যখন সাতক্ষীরা নবারণ গার্লস স্কুলে পড়তো,তখন ফুটবল কোচ আকবর আলীই আমার বোন সাবিনাকে ফুটবলের প্রশিক্ষন দিতেন। আমরা মনে করি তিনিই আমার বোনকে এ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, এতবড় জয় আকবর আলী স্যার দেখে যেতে পারলেন না। গত দুই মাস আগে তিনি মারা গেছেন। সাবিনার বান্ধবী সাতক্ষীরা শহরের রুমা,লিজু,সুরাইয়া ও রওশনারা খাতুন যথাক্রমে বলেন, তারা যখন ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে পড়তেন। তখন থেকে সাবিনাসহ তারা সবাই কোচ আকবার আলী স্যারের কাছে ফুটবলের প্রশিক্ষণ নিতেন। এক পর্যায়ে আমাদের মধ্য থেকে সাবিনাই একমাত্র জাতীয় নারী ফুটবল দলে চান্স পেয়েছিলো। আজ সাবিনা জাতীয় ফুটবল নারী দলের অধিনায়ক হয়ে দক্ষিন এশিয়ার ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমরা গর্বিত। দেশবাসি গর্বিত । আমরা তার জন্য দোয়া করি। সে যেন বাংলাদেশের মুখ এভাবে উজ্জ¦ল রাখতে পারে। সাতক্ষীরা শহরের শেখ সুমন বলেন, সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ নারী দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এতে আমাদের জেলার দুই মেয়ে খেলেছে। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তারা ফুটবলে বিপ্লব আনলো। প্রতিবেশী নিত্যনন্দ আলিম ও সুনীর কুমার মন্ডল জানান, সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ নারী দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সাতক্ষীরার সাবিনা এই দলের অধিনায়ক হওয়ায় সাতক্ষীরা শহরসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন তাদের বাড়িতে আসছেন। অনেকই মিষ্টি ও ফুল নিয়ে আসছেন পরিবারের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানাতে। বাড়িতে যেন একটি আনন্দের জোয়ার বইছে। পরিবারের পক্ষ থেকে দর্শনার্থীদের মিষ্টি মুখ করানো হচ্ছে বলেও তারা জানান। সাতক্ষীরা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আরিফ হোসেন প্রিন্স বলেন,নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় গর্ব অনুভব করছি। সাবিনা ও মাসুরার মতো খেলোয়াড়রা সাতক্ষীরার মাটি থেকে আজ জাতীয় দলে শক্ত জায়গা করে নিয়েছে। তাদের এ সফলতার ধারা অব্যাহত থাকুক। তিনি বলেন, সাতক্ষীরার মানুষদের মাঝে ধর্মান্ধতা ছিল। মেয়ে মানুষ ফুটবলসহ যেকোন খেলা খেলবে কেনো! আপনারা জাহান্নামে যাবেন- এসব বলে পিছিয়ে দেয়া হয়। অথচ আজ মুসলিম অনেক দেশগুলোতে নারী দলের ফুটবল দল রয়েছে তারা খেলছে। সাতক্ষীরার সাবিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। সাতক্ষীরাবাসী এ জয়ে আনন্দিত। তিনি আরও বলেন, সাবিনা দুটি হ্যাট্রিকসহ আটটি গোল করে সেরা গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড় হয়েছে। এটি ইতিহাস হয়ে থাকলো। আমরা মনে করি এটি ঐতিহাসিক বিজয়। সাবিনা সাতক্ষীরায় ফিরলে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। যেহেতু সাবিনা এখন শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে এখন সে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে খেলাধুলার সুযোগ পাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com