এফএনএস : বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন ঘুমধুম এলাকার জনবসতি এলাকায় বোমাসদৃশ দুটি মর্টারশেল আছড়ে পড়েছে। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে মিয়ানমার থেকে মর্টারশেল দুটি নিক্ষেপ করা হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। তবে এ সময় কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ওই গ্রাম ছেড়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, গতকাল বিকালে বিকট শব্দে গোলাটি উত্তর পাড়ার আয়াজের বাড়ির কাছে এসে পড়ে। পরে আরও একটি গোলা কাছাকাছি রাস্তায় নিক্ষেপ করা হয়। আমরা আতঙ্কে আছি, জানিনা কখন কি হয়। এ কারণে গ্রাম ছেড়ে অনেকে পাশের গ্রামে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ গণমাধ্যমকে বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে ওপারে গোলাগুলি হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে জেনেছি রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এতদিন পাহাড়ে গোলা ছুড়লেও আজকে উত্তর পাড়ায় মর্টার শেলগুলো পড়েছে, স্থানীয়রা আতঙ্কে আছে।’ ঘটনাস্থলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা অবস্থান নিয়েছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে জানতে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে দায়িত্বরত ৩৪ বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কর্তব্যরত কেউ ফোন রিসিভ করেননি। তবে বিজিবির হেড কোয়ার্টারের পরিচালক অপারেশন মেজর ফয়েজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনার পর পরই সীমান্তে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবির জোয়ানরা। এদিকে রাখাইনে উত্তেজনার কারণে ঘুমধুমের দক্ষিণ কোনাপাড়া সীমান্তের শূন্যরেখায় বাস করা ৬২১টি পরিবারের ৪ হাজার ২০০ রোহিঙ্গারাও আতঙ্কিত। শূন্য রেখার আশ্রয় শিবিরে বাস করা রোহিঙ্গা ছৈয়দ হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ করেই রাখাইনে তুমুল সংঘর্ষ হচ্ছে, আমরা আতঙ্কে আছি কখন জানি আমাদের হতাহত হতে হয়। মিয়ানমারের বিজিপি চৌকি বসিয়ে আমাদের নজরদারি করছে, নিজ দেশে আদৌ ফেরত যাবো কিনা জানি না।’ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের উত্তর মংডুর ৩৮নং সীমান্ত পোস্ট সংলগ্ন এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখাইনের বিচ্ছিন্ন বাদী সংগঠন আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। এ ছাড়াও রাখাইনের পালেতুয়া এলাকায় সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩৭ জন মিয়ানমারের সেনাসদস্য নিহত হয়েছে। কূটনৈতিক রিপোর্টার জানান, সীমান্তে মর্টারশেল ছোড়ার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে মিয়ানমারকে সতর্ক করবে বাংলাদেশ- এমনটাই জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু বাজার এলাকায় রোববার মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারশেলের বিষয়ে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তে অবিস্ফোরিত মর্টারশেল পড়ার বিষয়টি দুর্ঘটনা নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুর্ঘটনাবশত হলে মিয়ানমারকে অবশ্যই সতর্ক করা হবে। তবে এটি উদ্দেশ্যমূলক হলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তা খোলাসা করেননি তিনি। রোববার সন্ধ্যায় নিজ দপ্তরের বাইরে অপেক্ষমাণ গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্র সচিব। সেখানে তিনি বলেন, এর আগেও সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টার শেল পড়েছিল। তখন বাংলাদেশ কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল।