এফএনএ বিদেশ: শুধু বাতাস আর পানি থেকেই বিমান ও জাহাজে ব্যবহৃত জ¦ালানি তৈরি করেছেন সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা। সৌরশক্তিতে উৎপাদিত সম্পূর্ণ কার্বন নিউট্রাল এই জ¦ালানি ব্যবহারে হবে না পরিবেশের কোনো দূষণ। স¤প্রতি বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল জুলে প্রকাশিত হয়েছে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন। আগামী ২০২৩ সাল থেকে পুরোদস্তুর উৎপাদন শুরু হবে সিনথেটিক গ্যাস বা সিনগ্যাস নামের এই জ¦ালানির। এই আবিষ্কার বিশ্বের প্রচলিত জীবাশ্মনির্ভর জ¦ালানির গতিপথ পাল্টে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। জানা যায়, পৃথিবীতে মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ৫ শতাংশই হয় বিমানে ব্যবহৃত জ¦ালানির দূষণ থেকে। বিমানে ব্যবহৃত জেটফুয়েল কেরোসিন থেকে নির্গত হয় বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড। পাশাপাশি জাহাজের জ¦ালানিতেও পরিবেশের ব্যাপক দূষণ হয়। অল্পদিনেই এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। কারণ, সৌরশক্তি ব্যবহার করে শুধু বাতাস ও পানি থেকেই একধরনের জ¦ালানি তৈরিতে সমর্থ হয়েছেন সুইজারল্যান্ডের একদল বিজ্ঞানী, যা ব্যবহার করা যাবে বিমান কিংবা জাহাজে। কাগজে-কলমে কিংবা ল্যাবরেটরিতে নয়, পুরোদস্তুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্ল্যান্টে তৈরি হচ্ছে এই জ¦ালানি, যা আর অল্প দিনের মধ্যে আসতে যাচ্ছে বাজারে। ল্যাবরেটরিতে সফল পরীক্ষা শেষে ইতোমধ্যে স্পেনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে এই জ¦ালানি তৈরির প্ল্যান্ট চালু করেছেন গবেষক দল। এই প্ল্যান্টে বর্তমানে সৌরশক্তি পানি আর বাতাসকে ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে সিনগ্যাস বা সিনথেটিক গ্যাস নামের এই জ¦ালানি, যা থেকে পাওয়া যাচ্ছে বিমান ও জাহাজে ব্যবহৃত জ¦ালানি কেরোসিন ও মিথানল।এর সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে এই জ¦ালানি ব্যবহারে পরিবেশের কোনো দূষণ হবে না। সিনগ্যাস তৈরির প্রক্রিয়ায় বায়ুমন্ডল থেকে যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করা হয়, ইঞ্জিনে ব্যবহারের সময় ঠিক সে পরিমাণই তা বায়ুমন্ডলে নির্গত করে। অর্থাৎ, জ¦ালানিটি সম্পূর্ণভাবে কার্বন নিরপেক্ষ। মাদ্রিদে অবস্থিত জ¦ালানি তৈরির প্ল্যান্টে স্থাপন করা হয়েছে ১৬৯টি সোলার প্যানেল। এর মাধ্যমে সৌরশক্তি ঘনীভ‚ত করা হয় একটি টাওয়ারে অবস্থিত রিঅ্যাক্টরে। সেখানে পানি ও কার্বন ডাই-অক্সাইডকে সিনথেটিক গ্যাসে পরিণত করা হয়, যার মূল উপাদান হাইড্রোজেন ও কার্বন মনোঅক্সাইড। এই সিনথেটিক গ্যাস থেকে কেরোসিন ও মিথানল উৎপন্ন করা হয়। বিজ্ঞানী অ্যালডো স্টেনফিল্ড জানান, সৌরশক্তি দিয়ে এই সোলার রিঅ্যাক্টর পরিচালিত হয়। সেখানে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পানি ও বাতাস থেকে পাওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে সিনগ্যাস উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়ায় উচ্চ তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়, যা আমরা সৌরশক্তির সাহায্যে সরবরাহ করছি।আপাতত এ প্রক্রিয়ায় পাওয়া সৌরশক্তির কর্মদক্ষতা ৪ শতাংশ। তবে শিগগিরই এর ক্ষমতা ১৫ শতাংশে উন্নীত হবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সে ক্ষেত্রে আরও কম সোলার প্যানেল ব্যবহার করে অধিক পরিমাণ জ¦ালানি পাওয়া যাবে। ফলে এর উৎপাদন খরচও কমে আসবে, যা বাজারে প্রচলিত জীবাশ্ম জ¦ালানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে সুইস এয়ার। আগামী ২০২৩ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হবে সোলার জেট ফুয়েল তৈরির কারখানার কাজ। এ ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে সিনহেলিয়ন নামের একটি কোম্পানি। এই কোম্পানির পরিচালক ফিলিপ ফারলার জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের মধ্যেই বছরে এক কোটি লিটার জেট ফুয়েল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা তাদের।