মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন

বারবার খননেও বিবর্ণ প্রাণহীন প্রাণসায়ের \ ঘটাতে হবে প্রাণসঞ্চার \ হতে পারে পর্যটন স্পট

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২২ মে, ২০২২

মাছুদুর জামান সুমন/মীর আবু বকর \ প্রাণসায়ে প্রাণ ফিরে আনার বারবার চেষ্টা করা হলেও প্রাণসায়ের প্রাণ হীনতার মহাক্ষেত্রে নিমজ্জিত। সাতক্ষীরা শহরের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহমান এক সময়ের খরস্রোত প্রাণসায়ের সময়ের ব্যবধানে বাস্তবতার নিরিখে প্রাণহীন, স্রোতহীন, জরাজীর্ণ খালে রূপান্তরিত হয়েছে। জমিদার প্রাণনাথ মহাশয়ের স্মৃতি বিজড়িত যৌবনের প্রাণসায়েরে বইতো প্রাণের উচ্ছ¡াস, উৎসব। আর সেই মনোমুগ্ধকর অপার সৌন্দর্যে ভাসমান থাকতো বড় বড় পালতোলা নৌকা, পণ্যবাহী জাহাজ, পন্যের পরসা সাজিয়ে নৌ যানের কলকল, আর সো সো শব্দ তরঙ্গে মুখরিত হতো প্রাণসায়েরের দুই তীর। যাতায়াত আর যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও অসামান্য, অনবদ্য, ভূমিকায় ছিলো প্রাণসায়ের। প্রাণসায়েরের গতি পথের জাহাজ স্টেশন ছিল এল­ারচর। কলিকাতা, খুলনা সহ জেলার অভ্যন্তরীন যোগাযোগের প্রতিক ছিল বর্তমানের স্রোতহীন, দখলে, দূষনে, দুর্গন্ধে, পরিপুর্ণ প্রাণসায়ের। গত কয়েক দশকে প্রাণসায়ের সংস্কারে, খননে, সৌন্দর্য বর্ধনে অর্থ বরাদ্ধ হয়েছে। জীবন ফেরাতে খনন কাজ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, মর্যাদার প্রতিক প্রাণসায়ের যৌবনে আর ফিরতে পারেনি। বার্ধক্যের চিরচেনা যবু-থবু ভগ্নদশা ভর করেছে। প্রাণসায়ের নিয়ে গবেষণাকারী, পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর মন্তব্য প্রকৃত পক্ষে প্রাণসায়েরের প্রাণ ফেরাতে কর্মসূচি গ্রহন করা হলে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন হতো। পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, বা পৌরসভা যে সংস্থা খনন কাজের সিডিউল করুক না কেন তা বাস্তবতার নিরিখে যথাযথ কারন নকসা বা খনন সংক্রান্ত বিষয়াবলী পাশ কাটানোর সুযোগ থাকে না। কিন্তু প্রশ্ন থাকে অর্থ বরাদ্ধ পরবর্তি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে! এক্ষেত্রে অভিমত খনন কাজে হয়ত শুভঙ্করের ফাঁকি। পরিকল্পনার অভাব অথবা দায়িত্বহীনতার নজির। সাতক্ষীরাবাসি প্রত্যক্ষ করেছে জেলার মর্যাদার ধারক প্রাণসায়েরকে নিয়ে কিভাবে অপতৎপরতা চলেছে। যে অপতৎপরতায় অনিয়ম, দুর্নীতিই কেবল শেষ কথা নয়। দখল বজায় রাখতে আবার দখলচ্যুত করনে প্রানসায়েরের আশপাশের ব্যবসায়ীদের জিম্মি করা। একাধিকবার সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক প্রাণসায়ের খননে অর্থ বরাদ্ধ হয়েছে কিন্তু কাঙ্খিত ফলাফল অর্জিত হয়নি। প্রাণসায়ের প্রেমিদের অনেকের ভাষ্য যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে প্রাণসায়েরের প্রাণের সঞ্চার ঘটানো যাচ্ছে না। সাতক্ষীরা শহরের জনসাধারনের প্রতিদিনের সঙ্গী এই খাল, শহরের পানি নিষ্কাসনে, বিশেষ ভূমিকা রক্ষাকারী প্রাণসায়ের চিত্তবিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। গত কয়েকদিন যাবৎ প্রাণসায়েরের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শনে দেখা গেছে কোন কোন অংশে ময়লা আবর্জনার স্তুপ, কচুরিপনায় পুর্ণতা, নানান ধরনের জলজ উদ্ভিদ, কোন কোন অংশ পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা, স্বচ্ছ জলরাশির পরিবর্তে কোন কোন এলাকায় কালো আর হলুদভাব পানির মিশ্রন। শহরের পরিবেশ রক্ষার যথাযথ মাধ্যম হওয়ার বিপরীতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের আয়োজন চলমান প্রাণসায়ের খাল কেন্দ্রিক। শহরের বাসিন্দাদের অনেকে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিল, খুলনার রূপসা নদী ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা পর্যটকদের, সৌন্দর্য পিপাসুদের অতি কাঙ্খিত। সুষ্ঠ পরিকল্পনায় প্রাণসায়েরেও আলোর বিচ্ছুরন ঘটাতে পারে। দুরদুরান্ত হতে প্রাণসায়েরে এসে সময় কাটাতে বিনোদন আর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। মুুন্সিগঞ্জের আকাশনীলা, দেবহাটার রূপসী ম্যানগ্রোভ, আশাশুনির চাপড়া রিভারভিউ কেওড়া পার্কের মতই প্রাণসায়ের পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে। ইতিহাস খ্যাত এই খাল শহরের অভ্যন্তর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সাতক্ষীরার বিশ লক্ষাধিক মানুষের অতি মর্যাদার, গর্বের। প্রাণসায়েরের বুকে পালতোলা নৌকা, পন্যবাহী জাহাজ, যাতায়াত যোগাযোগের জলযান আবারও ফিরুক। প্রাণসায়ের চিত্তবিনোদনের উপযুক্ত হোক, পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হোক, দখলে, দূষনে, গতিহীনতায় থাকা প্রাণসায়ের নিজ ঠিকানায় ফিরুক এমন আকুতি আর প্রত্যাশা সাতক্ষীরাবাসির।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com