আব্দুল মজিদ কৃষ্ণনগর (কালিগঞ্জ) থেকেঃ বারোমাসি তরমুজ চাষে ভাগ্য খুলেছে কালিগঞ্জের সিরাজুল ইসলাম ও সহিদুল ইসলামের। বারোমাসি তরমুজ দেখতে আকর্ষণীয়, খেতে সুস্বাদু তরমুজের বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় চলতি মৌসুমে তার লাভ ছাড়িয়েছে লক্ষাধিক টাকা। সিরাজুলের সাফল্য সাড়া ফেলেছে এলাকার অন্য কৃষকদের মাঝেও। জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক সিরাজুল প্রচলিত জাতের সবজি ও ফলের পাশাপাশি শখ ও কৌতূহলের বশে গত বছর পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু করেন থাই জাতের তরমুজ চাষ। ফলন ভালো ও বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে চাষ করেন কানিয়া, মুনিয়া ও সুইটব্লাক নামের তিন প্রজাতির থাই তরমুজ। বারোমাসি তরমুজ আবাদে সাফল্যের খবরে ফসলটির প্রতি আগ্রহ জেগেছে স্থানীয় কৃষকদের। প্রতি দিনই আশপাশের গ্রাম থেকে কৃষকরা দেখতে আসছেন তরমুজ ক্ষেত। তরমুজ ক্ষেত সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, জমিতে তরমুজের জন্য তৈরি করা হয়েছে ঘেরের ভেঁড়িতে সারি সারি মাচা। মাচা গুলোতে তিন ধরনের তরমুজ ঝুলছে। কানিয়া জাতের তরমুজ গুলো ডোরাকাটা সবুজ রঙের। তবে এর ভেতরের অংশ হলুদ রঙের। পাশের মাচায় ঝুলছে হলুদ রঙের বাঙ্গি সদৃশ তরমুজ। এর নাম মুনিয়া, ভেতরের অংশ লাল। কিছু মাচায় কালচে সবুজ রঙের সুইট ব্লাক তরমুজ, এরও ভেতরের অংশ লাল রঙের। সফল চাষী সিরাজুল ইসলাম দৃষ্টি পাত কে জানান, তিন ধরনের তরমুজ চাষ করলেও বাজারে কানিয়া তরমুজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এর পরই রয়েছে সুইট ব্লাক। গত বছর স্থানীয় উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফারুক আহমেদের থেকে এসব তরমুজের বীজ সংগ্রহ করেন তিনি। গত মৌসুমে লাভবান হওয়ায় এ বছর চাষের পরিধি বৃদ্ধি করে ছেন। আগামীতে আরও বড় পরি সরে বারোমাসি তরমুজ আবাদের পরিকল্পনা রয়েছে তার। তিনি আরো জানান, তরমুজ আবাদের জন্য তৈরি করা মাচাতেই ফল সংগ্রহ শেষে শসা, করল্লা, শিম সহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করা যায়। ফলে একই মাচা বারবার ব্যবহারে সাশ্রয় হয় কৃষকের। তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন নিত্য নতুন ফসল আবাদে আমার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। গত বছর পাঁচ কাঠা জমিতে তরমুজ পরীক্ষামূলক চাষ করি। বাজারে দেখলাম ভালো চাহিদা। এ বছরে বারোমাসি তরমুজ রোপণ করে দারুণ ফলন পেয়েছি। বাজারেও ভালো চাহিদা আছে, প্রতি কেজি ৫৫/৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বল্প সময়ে ভালো লাভ হওয়ায় তার দেখাদেখি বারোমাসি তরমুজ আবাদে আগ্রহী হয়েছেন এলাকার অন্য কৃষকরা। সাফল্যে খুশি জেলার কৃষি বিভাগও। নতুন ফসল উৎপাদনে উদ্যমী চাষিদের সহযোগিতার আশ্বাসও দিলেন তারা। ইউনিয়ন কৃষি উপ সহকারী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, সিরাজুল ইসলাম বিভিন্ন সময় নতুন নতুন ফসল চাষে সফল হয়েছেন। এবার থাই তরমুজ চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। আমরা এ ধরনের প্রচেষ্টায় সর্বাত্মক সহযোগিতা দিচ্ছি। আশা করছি, আগামীতে বারোমাসি তরমুজ উৎপাদন অনেক বাড়বে। ইউপি চেয়ারম্যান সাফিয়া পারভীন বলেন কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া, বেনাদোনা, সোতা, রঘুনাথপুর, কালিকাপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক ফসলের চাষ হযে থাকে। প্রতিদিন নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে কয়েক ট্রাক সবজি, তরমুজ, খিরাই, শষা ও তরিতরকারী রপ্তানি করা হয়। আমি চেষ্টা করি কৃষকরা যেনো নির্বিঘেœ তারা চাষাবাদ করতে পারেন।