জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ বাণিজ্যিকভিত্তিতে বালু বা মাটি উত্তোলনে স্বচ্ছতা ফেরাতে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনকে যুগোপযোগী করা হচ্ছে। সংশোধনের জন্য আনীত এই আইন-২০২১ নামে অভিহিত হবে। ইজারাদারদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে প্রস্তাবিত আইনে কঠিন শর্ত জুড়ে দেয়া হচেছ। বালু বা মাটি তোলায় কোন ইজারাদার দুর্নীতির আশ্রয় নিলে সংশ্লিস্ট প্রতিষ্ঠান আজীবন নিষিদ্ধ হবে। এর আগে প্রতিষ্ঠানটিতে কালো তালিকার্ভুক্ত করা হবে। পাশাপাশি অপরাধের কাজে ব্যবহ্নত ড্রেজার (খননযন্ত্র), বালু বা মাটিবাহী যানবাহন বা সংশ্লিষ্ট সামগ্রী সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। এ ধরণের বিধান রেখে ভুমি মন্ত্রণালয় প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে। করণীক ত্র“টি যাচাই সাপেক্ষে শিঘ্রই মন্ত্রিপরিষদ সভায় অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। ভুমি মন্ত্রণালয় তাদের প্রস্তাবনায় বলেছে, বালু ও মাটি উত্তোলনে কোন অপরাধ করলেও সংশ্লিস্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হবে। অপরাধী বালুমহালের ইজারাদার হলে তার ইজারা বাতিল বা ইজারামূল্য সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে এবং আগামীতে যাতে কোন বালুমহাল ইজারায় অংশ নিতে না পারে তজ্জন্য কালো তালিকার্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিধানসহ অন্য কোন বিধান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অমান্য করলে বা এই আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে অথবা বালু বা মাটি উত্তোলনের জন্য বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করিলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী ব্যক্তিগণ (এক্সিকিউটিভ বডি) বা তাহাদের সহায়তাকারী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ অনুর্ধ্ব ২ বছর বারাদন্ড বা সর্বনি¤œ ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। বিদ্যমান আইনের ধারা বিলুপ্ত, ভুমি মন্ত্রণালয়ের সংশোধনী প্রস্তাবের পাশাপাশি অধিকতর যাচাই-বাছাই কমিটিও নতুন কিছু বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ধারা ২ (১) এর ৪(ক) ধারায় জেলা প্রশাসককে যুক্ত করা হয়েছে। বিপনের ক্ষেত্রে বালুমহালের সংজ্ঞা সুনিদিষ্ট করার জন্য সরকারি মালিকানাধীন শব্দ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ করার বিধানে উন্মুক্ত স্থান, চা বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশের সঙ্গে ভূগর্ভ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে। ২ এর (৪) ধারায় বালু উত্তোলন নিষিদ্ধের আশঙ্কায় ফসলি জমি যুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে ব্যক্তি মালিকাধীন ভূমি হতে প্রয়োজনীয় বালু বা মাটি উত্তোলনের সুনিদিষ্ট বিধান না থাকার কারণে আইনের অস্পষ্টতার সুযোগে অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকাধীন ভূমি থেকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে অবাধে বালু উত্তোলন করে কৃষি জমি নষ্ট করাসহ পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করা হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকাধীন নিজস্ব প্রয়োজনে নিজ জমি স্বল্প পরিসরে বালু উত্তোলন করতে বাধার সম্মুখিন হচ্ছেন। তাই এ ধরণের বিপত্তি নিরসনের জন্য এই বিধানটি সন্নিবেশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। হাইড্রোলিক জরিপের এখতিয়ার বিদ্যমান আইনে শুধু বিআইডব্লিউটিএকে প্রদান করা হলেও এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড বা সরকারের অন্য এজেন্সি কর্তৃক জরিপের বিধান যুক্ত কর হয়েছে। তালিকার বাইরে থাকা প্রতিষ্ঠান বালুমহাল ইজারায় অংশ নিলেও এখন শুধু তালিকার্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারবেন – এ প্রস্তাব করা হয়েছে। বালুমহাল ইজারা দেয়ার আগে জামানাত রাখা, শর্ত ভঙ্গে জামানাত বাজেয়াপ্ত করণ, অনলাইন পদ্ধতিতে ইজারা কার্যক্রম অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বালু উত্তোলন, বালুমহালের চৌহদ্দি, বালুর পরিমাণ, বিক্রয় মূল্য নির্ধারণসহ আরও কতিপয় প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক সময় সময় নিদের্শনা সংক্রান্ত বিধান সন্নিবেশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আবার বালুমহাল ইজারা দেয়া সম্ভব না হলে খাস আদায়ের ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে।