এফএনএস: বাস ডাকাতির ঘটনায় বাসে উঠা ও গন্তব্যস্থলের যে কোনো থানায় মামলা দায়ের করা যাবে। কোনো থানা এ ধরনের ঘটনায় ভুক্তভোগীর মামলা নিতে অনাগ্রহ দেখালে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কে এম হাফিজ আক্তার। ডিএমপির এ অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, বেশকিছু ডাকাত রাতে রাজধানী ও আশপাশে যাত্রীবাহী বাসে বা বাস ভাড়া করে ডাকাতি করছে। ইদানীং এ ধরনের ঘটনা অনেক বেড়েছে। গত ২০ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর উত্তরায় ডাকাত দলের কবলে পড়েন টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শফিকুল ইসলাম সজীব। তিনি প্রাণে বেঁচে ফিরলেও চোখ বেঁধে রাতভর তাকে বেদম পেটান ডাকাত দলের সদস্যরা। এ ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের একটি দল। কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় এই ডাকাতচক্রটি পূর্বপরিকল্পিতভাবে আর.কে.আর পরিবহনের একটি বাসকে ভাড়ার কথা বলে সাভারের গেন্ডা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে ডাকাতরা প্রথমে বাসের চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে বাসটি নিয়ে ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন সড়কে ঘুরতে থাকে। টার্গেট করে যাত্রী উঠিয়ে পরবর্তীতে অস্ত্রের মুখে তাদের জিম্মি করে। এরপর হাত-মুখ বেঁধে তাদের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে তাদের নির্জন স্থানে নামিয়ে দেয়। এ চক্রটি ঢাকা জেলার সাভার, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে একইভাবে দীর্ঘদিন ডাকাতি করে আসছিল। তাদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া বাস ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে ডাকাতরা নিজেদের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলেও জানান ডিবির এ কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে, ওই চিকিৎসক (ডা. শফিকুল ইসলাম) ডাকাতির ঘটনার পর বিভিন্ন থানায় ঘুরেছেন মামলা দায়েরের জন্য। কিন্তু তিনি প্রথমে কোনো আইনি সহায়তা পাননি। এ ক্ষেত্রে ডাকাতির ঘটনার পর ভুক্তভোগী কীভাবে আইনি সহায়তা নিতে পারেন, এমন প্রশ্নে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, বাসে ডাকাতির ক্ষেত্রে চলার পথ থেকে শুরু করে বাসটি যে এলাকা দিয়ে যাবে এবং যে এলাকায় যাত্রা শেষ করবে এর যে কোনো এলাকার থানায় ভুক্তভোগী মামলা করতে পারবেন। এ ঘটনায় মামলা নেওয়ার গড়িমসি সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। তিনি বলেন, যে কোনো ঘটনা ঘটলেই ভুক্তভোগীর অভিযোগ নিতে হবে। তা না হলে আমরা অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে পারবো না। আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি জেনে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছি। এরপরই গ্রেপ্তারদের একাধিক ডাকাতির ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ডা. শফিকুল গত রোববার উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেছেন। উনি যেহেতু উত্তরা থেকে উঠেছেন সেজন্য উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলাটি করেছেন। মামলা না হলে আমাদের জন্য ক্ষতিকর। আর যেসব থানা প্রাথমিকভাবে মামলা নিতে চায়নি তারা হয়তো চিন্তা করেছে বাসটি কোথায় থেকে আসছে, কীভাবে গ্রেপ্তার করবে এসব বিষয়। তবে এটা ঠিক কাজ হয়নি। এ বিষয়ে ওইসব থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। ডাকাতির মামলা বেশি হয়ে গেলে ডিএমপির পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা আছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন কোনো চাপ ডিএমপির পক্ষ থেকে নেই। যে কোনো ঘটনার মামলা থানাকে অবশ্যই নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় ডাকাতির মামলা নিয়ে অনেক কাজ করতে হয়, সেক্ষেত্রে অনেক থানা মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করে। কিন্তু এ বিষয়ে শক্তভাবে বলা হয়েছে মামলা নিতে, না হলে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাবে। সম্পত্তি সংক্রান্ত যে কোনো অপরাধের অভিযোগ নেওয়ার বিষয়টিও বলা হয়েছে। মামলা না নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে ডাকাতির ঘটনায় ভুক্তভোগীদের থানা থেকে ‘ভুল তথ্য’ দেওয়া হয়। যেসব থানা মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নে ডিবিপ্রধান বলেন, ডাকাতি মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। এ বিষয়গুলো আমরা দেখছি। এরইমধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এসব ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। থানাকে এমন কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে ডাকাতি মামলা নেওয়া যাবে না। বরং যে কোনো ঘটনায় মামলা নিতে শক্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে গত রোববার আমাদের ক্রাইম কনফারেন্সে আলোচনা হয়েছে। সেখান থেকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতার অভাবে ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে কি না, জানতে চাইলে ডিএমপির এ অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই অপরাধীরা নিরাপদ এলাকা বেছে নেয়। বাসটি যখন ১২ ঘণ্টা ঘুরছিল এবং ডাকাতি হচ্ছিল তখন বাসটিকে নজরদারিতে আনা হয়নি। যখনই এরকম কয়েকটি ঘটনা ঘটে তখনই আমরা তৎপরতা শুরু করি। তারপর এসব ঘটনা আবার কমে যায়। এখানে আমরা কারও অবহেলার বিষয়টি বলতে চাচ্ছি না। আমরা যদি ঠিকভাবে এগুলা নজরদারিতে রাখি, তাহলে অটোমেটিক্যালি এসব ঘটনা কমে যাবে। আর চিহ্নিত কিছু এরিয়ায় আমরা নজরদারি বাড়াচ্ছি। হাইওয়ে পুলিশ ডাকাতদের কোনো ধরনের সহায়তা করে কি না, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা এমন কোনো তথ্য দেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যখনই কোনো ডাকাত চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করি, দেখা যায় মামলার বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে তারা আবার জামিনে বের হয়ে একই পেশায় যুক্ত হয়। তাদের গ্রেপ্তার করতে যত সময় লাগে, তারচেয়েও কম সময়ে তারা জামিনে বের হয়ে যায়। ডা. শফিকুলের সঙ্গে ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত বাসটি ডাকাত দল নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে ভাড়া নেয় জানিয়ে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বাস কর্তৃপক্ষের কোনো জড়িত থাকার প্রমাণ আমরা পাইনি। সাধারণত দেখা যায়, ডাকাত দলের সদস্যরা বাসটিকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের টাকা দিয়ে ভাড়া করে। তারা তাদের সুবিধা মত জায়গায় যাওয়ার পর বাসের চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে। আবার অনেক সময় কম যাত্রী দেখে বাসে উঠে ডাকাতরা চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে। ১২ ঘণ্টা ধরে বাসটিতে ডাকাতি চললেও পুলিশ চেকপোস্ট সেটি ধরতে না পারার কারণ সম্পর্কে কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, রাতে অনেক গাড়ি একসঙ্গে চলাফেরা করে। রাস্তায় ৫০০টি গাড়ির ভেতর একটিতে ডাকাতি চললে নজরে আসার সুযোগ থাকে না। এদিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে মহানগর ও আন্তঃজেলা দুর্র্ধষ ডাকাত দলের মূলহোতাসহ আরও আট সদস্যকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে তেজগাঁও গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- মোজাম্মেল হোসেন আপেল, জাহাঙ্গীর আলম, জমির খান, মজিবর রহমান মজিদ, মাসুম গাজী, শফিকুল খরাদি, কুদ্দুস আলী ও কাউছার মিয়া। তাদের কাছ থেকে ডিবির নকল জ্যাকেট, একটি দুনালা বন্দুক, একটি ওয়্যারলেস সেট, একটি হ্যান্ডকাফ, ছুরি ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ) হারুন অর রশিদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম, শাহাদত হোসেন সুমা, ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনসের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন প্রমুখ।