জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) তৃতীয় ঢেউ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কভিড রোগীর সংখ্যা বর্তমানে উর্ধ্বমূখী। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে দৈনিক রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার পর্য়ন্ত ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ৬৩জন রোগী ভর্তি থাকার পর শুক্রবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭২জন। গতকাল শনিবার সুস্থ হয়ে আটজন রোগী বাড়িতে ফিরলেও নতুন ১৮জন ভর্তি হওয়ায় এখন রোগীর সংখ্যা এ হাসপাতালে ৮২জন। রাজধানীর আরেকটি আগারগাঁও ২৫০ শয্যার বিশিষ্ট বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আগে দুই সপ্তাহের অনুপাতে দৈনিক গড়ে নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫জন। প্রাপ্তক তথ্যমতে, টানা চার দিন দৈনিক দুই হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত পর গত ২৪ ঘন্টায় কিছুটা কমছে। তবে মৃত্যু বেড়েছে; গত ২৪ ঘন্টায় শনিবার মারা গেছে ৬জন। এই ঊর্দ্ধমুখী ধারার প্রকোপ মোকাবিলায় সরকারের একাধিক দপ্তর বেশ কিছু বিধি-নিষেধ দিয়েছে। কিন্তু করোনার প্রথম. দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ের তুলনায় এবার স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতে কাগুজে নির্দেশনা বাস্তবায়নে তৎপরতা কম। জনস্বাস্থ্যবিদরা আশঙ্কা করছেন এখনই ভাইরাসটির লাগাম টানতে না পারলে সংক্রমণ পরিস্থিতি ফের ভয়াবহ হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এশিয়া বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল ইসলাম বলেন, যারা অসুস্থ হচ্ছেন এবং যারা মারা যাচ্ছেন তাদের কভিড ব্যতিত অন্যান্য কোন রোগ আছে কি না তা আগে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। টিকা নিয়েছেন কি না, কয়টি টিকা নিয়েছে সেটাও জানতে হবে। আর বুস্টার ডোজ নেয়ার পর কতদিন অতিবাহিত হয়েছে সেটিও জানা জরুরি। যদি ছয়মান পেরিয়ে যায় তাহলে চতুর্থ ডোজ টিকা নেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিসংখ্যান জানার পর বলা যাবে, -কোন বয়সের মানুষ কভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ও মারা গেছেন, – সেটা পরিস্কার হবে। তিনি বলেন, যদি এর বাইরে নতুন কভিড রোগী পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মানায় অবহেলা করার কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ছড়ায় ওমিক্রন, এর সাব-ভ্যারিয়েন্ট বের হয়েছে। তাই করোনায় আক্রান্ত হলে যথা-শিঘ্রই চিকিৎসা নিতে হবে। বিলম্বে চিকিৎসা নেয়াটা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সাবেক এই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, উর্দ্ধমুখী ¯্রােতের মধ্যে মানুষ কোন বিধ-নিষেধই মানছে না। মানানোর ব্যপারে তেমন উদ্যোগও চোখে পড়ছে না। পরিস্থিতি ভালো হওয়ার কোন লক্ষণ মনে হচ্ছে না। ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি জ্বর হচ্ছে। জনঘনত্ব বেশি হওয়ায় করোনা ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু অনেকে সংক্রামিত হলেও বুঝতে পারছে না। অন্যদিকে নতুন ধরন ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্ট ১১০টি দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এরইমধ্যে কুরবানির ঈদ শুরু হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে বিপনী বিতানে ভিড় হবে। মানুষ গ্রামে যাবে। গণপরিবহনে চাপ বাড়বে। এতে ঢাকায় সংক্রামিত ব্যক্তি গ্রামেও ছড়িয়ে যাবে। সামাজিক সংক্রমণ হবে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালেল পরিচালক ব্রি. জে. নাজমুল হক বলেন, কভিড পজিটিভ নিয়ে শনিবার পর্যন্ত ৮২জন ভর্তি হয়েছেন। এর আগে বৃহস্পতিবারে ৭২জন এবং বুধবারে ৬৩জন রোগী ভর্তি হন। শুধু গতকালই ১৮জন ভর্তি হয়েছেন। রোগী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার ক্ষেত্রও বাড়াচ্ছি। ডিএমসির ৮শ রোগীকে একত্রে চিকিৎসা দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। রোগী ভর্তি বিবেচনায় নন-কভিড সেবা সংকুচিত করে কভিড সেবাটিকে বাড়িয়ে দিচ্ছি। রোগীর অবস্থা কি জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, এখানে ক্রিটিক্যাল রোগী ছাড়া কেউ ভর্তি হয় না। ভর্তি রোগীর মধ্যে তৃতীয় ঢেউয়ে মারাও যাচ্ছেন। শুক্রবারই কভিড পজিটিভ দু’জন রোগী মারা গেছেন বলে জানান তিনি। ২৫০শয্যা বিশিষ্ট বক্ষব্যাধি হাসপাতের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, কভিড পরিস্থিতি এখন উধর্বমুখী। তাই রোগী আগের চেয়ে বাড়ছে। দৈনিক ১৪ থেকে ১৫ জন এ রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। অথচ গত দুই সপ্তাহ আগেও রোগীর সংখ্যা কম ছিল। বেশি ভর্তি হলেও রোগীর অবস্থা সেই ২০২০-২১ সালের মত ভয়াবহ ও ক্রিটিক্যাল অবস্থা না। মনে রাখতে হবে, -সংক্রমণ যেহেতু বাড়ছে, তাই মৃত্যুর ঝুঁকিটা থেকে যায়। শারীরিক সক্ষমতা আগের চেয়ে কম তাদের কভিড হলে ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করে। তাই সবাইকে আহবান জানাচ্ছি ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য, স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য এবং স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খাওয়া। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায় করোনার চর্তুথ ঢেউ মোকাবিলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে বেশি অনীহা রয়েছে। এ ব্যপারে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কার্যকর তৎপরতা কম। আগের ঢেউগুলোতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শপিংমলে জীবাণু নাশক টানেল প্রতিস্থাপন করা হয়। এবারে সেসব নিয়মকানুন বাস্তবয়নের ছিটে-ফোটাও নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, যেখানে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি জড়িয়ে আছে, সেখানে উদ্বেগের বিষয়টি বরাবরই থাকে। চতুর্থ ঢেউ রোধে ইতোমধ্যে সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাস ট্রেন স্টেশন, কোরবানির পশুরহাটগুলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে দেখভালের কথা বলা হয়েছে। সঙ্গে সবারই সচেতনতা ও দায়িত্ব বোধের বিষয়টি আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। এজন্য মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ ও ধর্মমন্ত্রণালয় থেকেও নির্দশনা দেওয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে মনিটরিং টিম করা হবে।