এফএনএস: আজ সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনেই বাংলাদেশের মুক্তিপাগল মানুষ পেয়েছিল মুক্তির স্বাদ। পরদিন ১৬ ডিসেম্বর কেবল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। ঢাকা’ মার্কিন দূতাবাসের কনসাল জেনারেলের মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধানের উদ্দেশে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান লে. জেনারেল এ কে নিয়াজী আত্মসমর্পণের ব্যাপারে ১৪ ডিসেম্বর যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, এর জবাব এসেছিল ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে। ঢাকা থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বদলে বার্তাটি পাঠানো হয়েছিল মার্কিন দূতাবাসে। সেখান থেকে বার্তাটির সারকথা চলে যায় ওয়াশিংটনে। মার্কিন কর্মকর্তারা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। পাকিস্তানি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিদ্দিক শরীফ তার ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্ধে এ ঘটনার বর্ণনা লিখেছেন, কি‘ তাতে ইয়াহিয়া খান চরিত্রটির বর্ণনা পাওয়া যায় না। ইয়াহিয়া তখন নিজের দুঃখ—দুর্দশা লাঘব করার জন্য কোথাও ব্যস্ত ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়ের প্রাক্কালে আত্মসমর্পণ ছাড়া পাকিস্তানি বাহিনীর সামনে আর কোন পথ খোলা ছিল না। আত্মসমর্পণের বিস্তারিত আয়োজনের জন্য ১৫ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা থেকে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা এবং পরে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উভয় পক্ষ যুদ্ধ বিরতি কার্যকর করেছিলেন। সে সময় যৌথবাহিনীর পক্ষে জেনারেল নিয়াজীর সাথে প্রথম যোগাযোগ করেছিলেন টাঙ্গাইলের পথে আগত ভারতীয় মেজর জেনারেল নাগরা। নিয়াজীর সদর দফতরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুক্তিবাহিনীর একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন বর্তমান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। সেদিনই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যৌথবাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে যোগ দিতে বিকেল সাড়ে ৫টায় হেলিকপ্টারযোগে সস্ত্রীক ঢাকায় এসেছিলেন লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরা। সে এক বিরল দৃশ্য। বাংলাদেশের আকাশ—বাতাস, প্রতিটি জনপদ অন্যরকম আনন্দে উদ্বেলিত। তেজগাঁও’ ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অরোরাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন জেনারেল নিয়াজী। বিমানবন্দর থেকে যথাক্রমে বিজয়ী ও বিজিত দু‘জেনারেল সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) গিয়েছিলেন। ডিসেম্বরের এ দিনই মূলত স্বাধীন হয়েছিল দেশের প্রতিটি অঞ্চল। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।