বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
জয়নগরে মন্দির ভিত্তিক স্কুলের সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের সাথে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় শ্যামনগরে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির কর্মি টি এস অনুষ্ঠিত তালায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত সাতক্ষীরায় বিজয় দিবসে সদর উপজেলা বিএনপির র্যালি কলারোয়ায় টালি মালিক সমিতির নব—কমিটি গঠন সভাপতি গোষ্ট পাল ও সাধারণ সম্পাদক তুহিন সাতক্ষীরায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত আশাশুনি রিপোর্টার্স ক্লাব ও আশাশুনি থানার বিজয় দিবস প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ নুসরাতের নৃশংস হত্যাকারী জনির ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন আশাশুনি আশার উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ছোঁয়া লেগেছে কৃষিতে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার লাঙল-জোয়াল আর মই

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩

এম এম নুর আলম \ এক সময় গ্রামবাংলার কৃষকরা এক টুকরো লোহার ফাল আর কাঠ দিয়ে তৈরি লাঙল, জোয়াল ও বাঁশের তৈরি মই ব্যবহার করে গরুর সাহায্যে জমি চাষা করতেন। বর্তমানে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে কৃষিতে। এখন সেই লাঙল, জোঁয়াল, মই এবং গরুর স্থান দখল করেছে ইঞ্জিন চালিত পাওয়ার ট্রিলার বা কলের লাঙ্গল। অথচ কৃষিকাজে সাতক্ষীরা জেলার মানুষ যুগের পর যুগ ধরে লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। এতে করে একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা হতো, অন্যদিকে কৃষকের অর্থ সাশ্রয় হতো। হাল চাষের সময় গরু যাতে কোনো খাদ্য খেতে না পারে, সেদিক লক্ষ্য রেখে পাট, বেত, বাঁশের কঞ্চি অথবা লতাজাতীয় এক ধরণের গাছ দিয়ে তৈরি গোমাই, তুরি (অনেকে ঠুসি নামে চেনেন) গরুর মুখে বেঁধে দেওয়া হতো। তাড়াতাড়ি হাল চালানোর জন্য ব্যবহার করা হতো বাঁশের বা শক্ত কোন লাঠি দিয়ে তৈরি পাচুনি (লাঠি)। আর চাষ কাজের জন্য হালের গরু ছোট থাকাকালে পোষ মানাতে বেশ কিছুদিন সময় লাগতো। ভোররাত থেকে শুরু করে প্রায় দুপুর পর্যন্ত জমিতে হালচাষ করতেন তারা। এটি খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, কয়েক বছর আগে এসব গরুর হালে লাঙ্গল-জোয়াল আর মই সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন গ্রামের জমিতে হরহামেশাই দেখা যেত। চাষিদের অনেকে নিজের জমিতে হালচাষ করার পাশাপাশি অন্যের জমি চাষিয়ে পারিশ্রমিক হিসেবে কিছু অর্থও উপার্জন করতেন। তারা হাজারো কর্মব্যস্ততার মধ্যেও কখনো কখনো ফুরফুরে আনন্দে মনের সুখে ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি ও ভাটিয়ালী গান গেয়ে গেয়ে জমিতে চাষ দিতেন। এখন হাতে গোনা দু-একজন কৃষককে পাওয়া যায় যারা এ হালচাষকে এখনো টিকিয়ে রেখেছেন। চাষিরা জমিতে হাল নিয়ে আসার আগে চিড়া-গুড় অথবা মুড়ি-মুড়কি দিয়ে হালকা জল খাবার খেয়ে নিতেন। তবে হুকা ও পাতা বা কাগজের তৈরি বিড়ি খাওয়া তাদের অভ্যাসে পরিণত ছিল বলে মনে করেন অনেকে। আবার একটানা হট হট, ডাই ডাই, বাঁই বাঁই, বস বস আর উঠ উঠ করে যখন ক্লান্তি আসত, তখন সূর্য প্রায় মাথার ওপর খাড়া হয়ে উঠত। এ সময় চাষিরা সকালের নাস্তার জন্য হালচাষে বিরতি রেখে জমির আইলের ওপর বসতেন। তাদের নাস্তার ধরনটাও ছিল ঐতিহ্যবাহী। এক থালা পান্তা ভাতের সঙ্গে কাঁচা অথবা শুকনো মরিচ, সরিষার খাঁটি তেল আর আলু ভর্তা। গরুর লাঙল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় দুই বিঘা জমি চাষ করা সম্ভব। আধুনিক যন্ত্রপাতির থেকে গরুর লাঙলের চাষ আরও গভীর হয়। এতে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ও ফসলের চাষাবাদে সার, কীটনাশক কম লাগত। তবে, দিনে দিনে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে এসব গরুর হাল, কৃষি উপকরণ কাঠের লাঙ্গল, জোয়াল, বাঁশের মইসহ আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। কৃষিবিদরা জানান, আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে এখন সবখানেই। লাঙল দিয়ে জমি চাষাবাদ করতে অনেকটা সময় লাগতো। এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে অনেক কম সময়ে অধিক জমি চাষ করা যায়। যার কারণে জমির মালিকরা লাঙল দিয়ে জমি চাষে আগ্রহ হারিয়েছে। তবে এটা গ্রাম বাংলার এক সময়ের ঐতিহ্য। যা কালের বিবর্তনে আগামীতে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com