এফএনএস বিদেশ : বিতর্কিত ‘হিজাব ও শালীনতা আইন’ স্থগিত করেছে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। আইনটিকে ‘অস্পষ্ট ও সংস্কারের প্রয়োজন’ বলে অভিহিত করে এর ধারাগুলো পুনর্মূল্যায়নের ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। গত জুলাইয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে হিজাব ইস্যুতে ইরানি নারীদের প্রতি আচরণের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন পেজেশকিয়ান। তিনি তাদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে ক্ষুব্ধ তরুণ প্রজন্মের ইরানিদের কাছে বিষয়টি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। প্রস্তাবিত নতুন আইনে নারীদের চুল, হাত বা পায়ের নিচের অংশ প্রকাশের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছিল। অবশ্য আইনটি অধিকারকর্মীদের দ্বারা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী, যারা বারবার নিয়ম ভঙ্গ করবে এবং যারা নিয়ম নিয়ে উপহাস করবে তাদের বড় অঙ্কের জরিমানা এবং সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হতো। নারীদের ওপর কঠোর পোশাকবিধিকে ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রের শাসকরা কয়েক দশক ধরে জাতীয় নিরাপত্তার অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে। অবশ্য মানবাধিকার সংগঠনগুলো এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ইরানি কর্তৃপক্ষ ‘আগের শ্বাসরুদ্ধকর দমনমূলক ব্যবস্থাকে আরও দৃঢ় করতে চাইছে’। গত সপ্তাহে ৩০০ এরও বেশি ইরানি অধিকারকর্মী, লেখক এবং সাংবাদিক নতুন হিজাব আইনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নিন্দা জানিয়েছেন। তারা এটিকে ‘অবৈধ এবং অকার্যকর’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানকে তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ কট্টরপন্থি গোষ্ঠীগুলোর চাপ থাকা সত্ত্বেও, ইরানের তরুণ প্রজন্ম সরকারের বিধিনিষেধের মুখোমুখি হতে ভীত নয়। পেজেশকিয়ানের সমর্থকরাও বিশ্বাস করেন, নতুন হিজাব আইন তরুণ নারীদের এটি লঙ্ঘন করা থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হবে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তবে আইনটির সমর্থকরা এটি এগিয়ে নিতে প্রেসিডেন্টের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। তারা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দ্বিধা—দ্বন্দ্বের সমালোচনা করেছেন এবং আইন কার্যকরের জন্য এটিতে স্বাক্ষরের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, আইনটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত সরকারের আরেকটি গণবিক্ষোভের আশঙ্কাকে ইঙ্গিত দেয়, যেমনটি দুই বছর আগে দেখা গিয়েছিল। ২০২২ সালে কুর্দি তরুণী মাহসা ‘জিনা’ আমিনির মৃত্যুর পর থেকে হিজাব নিয়ে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। মাহসাকে পোশাকবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আটক করা হয়েছিল ও পুলিশ হেফাজতে তার মৃত্যুর পর দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হয়।