এফএনএস স্পোর্টস: ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে এক দশকের সম্পর্কের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে কেভিন ডে ব্রুইনে যেন আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন, কেন তিনি ক্লাবের ইতিহাসে অন্যতম সেরা। বিদায়ের ঘণ্টা বেজে যাওয়ার পরও দলের হয়ে মাঠে উজাড় করে খেলছেন এই বেলজিয়ান মিডফিল্ডার। গত শুক্রবার রাতে উলভারহ্যাম্পটনের বিপক্ষে একমাত্র গোলটি করে দলকে গুরুত্বপূর্ণ তিন পয়েন্ট এনে দেন ডে ব্রুইনে। তবে তার এই আলো ছড়ানো পারফরম্যান্সের মাঝেও কোচ পেপ গুয়ার্দিওলার মুখে ফুটে উঠেছে বিব্রত এক প্রশ্নÑ তাহলে তাকে কেন রাখা হলো না?
৩৫ মিনিটে করা ডে ব্রুইনের গোলেই ১—০ ব্যবধানে জয় পেয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। বল দখলে সিটির আধিপত্য থাকলেও (৬৪%) আক্রমণে ছিল ধারহীনতাÑ৯টি শটে লক্ষ্যে ছিল মাত্র ২টি। এই চাপের ভেতর থেকেই ভরসার প্রতীক হয়ে ওঠেন ৩৩ বছর বয়সী ডে ব্রুইনে।
এই জয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকল গুয়ার্দিওলার দল। ৩৫ ম্যাচে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন অবস্থান করছে তৃতীয় স্থানে। তাদের পেছনে রয়েছে নিউক্যাসল (৬২ পয়েন্ট), চেলসি ও নটিংহ্যাম ফরেস্ট (৬০ পয়েন্ট), এমনকি অ্যাস্টন ভিলাও (৫৭ পয়েন্ট) এখনও আলোচনায়। কারণ, এবারের মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ থেকে পাঁচটি দল চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশ নেবে।
ডে ব্রুইনের এই পারফরম্যান্সের পর কোচ গুয়ার্দিওলার কণ্ঠে ছিল প্রশংসার সুর,
“তাকে শুধু ধন্যবাদ দিতে চাই। প্যালেসের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ছিল তার, আজকেও জয় এনে দিল। এমন পারফরম্যান্স দিয়ে বিদায় নিতে পারা দারুণ।”
কিন্তু এর ঠিক পরেই আসে সেই বিব্রতকর প্রশ্নÑ যে ফুটবলার এখনও এত কার্যকর, তাকে কেন বিদায় জানাতে হচ্ছে?
গুয়ার্দিওলা এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে বরং স্মৃতিচারণে ফিরে গেলেন:
“ডে ব্রুইনে ছাড়া এই ক্লাব এত কিছু অর্জন করতে পারত না। সে অসাধারণ, তার বিকল্প পাওয়া কঠিন। সে শুধু মাঠেই নয়, সিটির অসংখ্য সমর্থকের হৃদয়েও জায়গা করে নিয়েছে।”
২০১৫ সালে জার্মান ক্লাব ওলফসবুর্গ থেকে সিটিতে আসেন কেভিন ডে ব্রুইনে। এরপর এক যুগ ধরে ক্লাবের মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন তিনি। সিটির হয়ে জিতেছেন ১৬টি শিরোপা, যার মধ্যে রয়েছে ৬টি প্রিমিয়ার লিগ ও ঐতিহাসিক প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাও। মৌসুম সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন দুইবার।
ডে ব্রুইনেও যেন নিজের প্রতি আস্থা হারাননি। ম্যাচশেষে বলেন,
“সতীর্থদের অনেকেই বলেছে, আমার চলে যাওয়া তাদের কষ্ট দিচ্ছে। কিন্তু জীবন মাঝে মাঝে এমনই। পারফরম্যান্স দিয়ে দেখিয়েছি আমি এখনও এই ক্লাবে খেলার মতো ফিট এবং প্রস্তুত।”
তার ভবিষ্যৎ ঠিকানা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে (গখঝ) যেতে পারেন তিনি, সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে শোনা যাচ্ছে শিকাগো ফায়ার—এর নাম।
শেষ পর্যন্ত ডে ব্রুইনের বিদায় মেনে নিতে কষ্টই পাচ্ছে ম্যানচেস্টার সিটি সমর্থকরা। তার মাঠের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে ক্লাবের সঙ্গে আবেগের বন্ধন। আর সেই সম্পর্কের শেষ অধ্যায়ে দাঁড়িয়ে ডে ব্রুইনে আবারও নিজেকে প্রমাণ করলেনÑ তার মতো খেলোয়াড় শুধু দলের নয়, সময়ের সম্পদ।