বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন

বিদ্যুৎ ঘাটতি সামালে বেশি দামের এলএনজির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: জ্বালানি সঙ্কটে দেশে বিদ্যুৎ সঙ্কট তীব্র। সামনে রমজান ও বোরো চাষের সেচের জেরে তা আরো তীব্র হওয়ার শঙ্কা। এমন পরিস্থিতিতে সরকার বিদ্যুৎ ঘাটতি সামাল দিতে বেশি দামের এলএনজির ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। সেজন্য গ্যাস সরবরাহ ঠিক রাখতে জ্বালানি বিভাগ এলএনজি আমদানি বাড়াতে যাচ্ছে। মূলত গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে দিয়ে ঘাটতি মোকাবেলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। লোডশেডিং সামাল দিতে শুধু রমজানের জন্য বাড়তি চার কার্গো এলএনজি কেনার অতিরিক্ত প্রাক্কলন করা হয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে গত আট মাসে কয়লার দাম কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ। একই সময়ে স্পট মার্কেটে প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়েছে এলএনজির দাম। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার রমজানের পাশাপাশি গ্রীষ্ম মৌসুমেও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে। কারণ তখন দৈনিক ৭০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে দিয়ে ঘাটতি মোকাবেলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেজন্য এলএনজি আমদানি বাড়াতে যাচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবেলায় বিগত সরকারও এলএনজিকে গুরুত্ব দিয়েছিল। তবে একপর্যায়ে দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়াও সরকার পণ্যটির আমদানি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় আকারে ঘাটতি তৈরি হয়। ব্যাপক হারে বেড়ে যায় দেশজুড়ে লোডশেডিংয়ের মাত্রাও। তারপরও বিদ্যুতে ঊর্ধ্বমুখী দামের জ্বালানি পণ্যের ওপর নির্ভরতা বাড়ানো হচ্ছে। তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) আর্থিক চাপও বাড়বে। সূত্র জানায়, বিদ্যুতের চাহিদা আসন্ন রমজানে ১৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট তৈরি হবে। ওই সময় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় দিনে ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো সরবরাহ হচ্ছে। অতিরিক্ত ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করে সরবরাহ করা হবে। জ্বালানি বিভাগ শুধু রমজানের জন্য বাড়তি চার কার্গো এলএনজি কেনার অতিরিক্ত প্রাক্কলন করেছে। আসন্ন রমজান ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ আগামী জুনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ৪ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ ৩ বিলিয়ন ডলার এবং বাকি অর্থ জ্বালানি আমদানি, অর্থাৎ বিদ্যুৎ কেন্দে্রর জন্য ফার্নেস অয়েল ও গ্যাস আমদানির জন্য। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহের অনুরোধ জোনানো হয়েছে। এ নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বৈঠকও করেন। সেখানেই এ অর্থ চাওয়া হয়। সূত্র আরো জানায়, বিশ্ব বাজারে এখন নিম্নমুখী কয়লার দাম। জ্বালানিটির দাম গত আট মাসে টনপ্রতি প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে। একই সময় আবার স্পট মার্কেটে ক্রমেই বেড়েছে এলএনজির দাম। গত আট মাসে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়েছে। সামনে এ দাম আরো ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার জোরালো সম্ভাবনাও রয়েছে। এদিকে দেশে বড় পাঁচটি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে রয়েছে। সেগুলোর মোট সক্ষমতা ৬ হাজার ৭৮৭ মেগাওয়াট। জ্বালানি সংকটের কারণে ব্যবহার করা যায় না ওসব বিদ্যুৎ কেন্দে্রর অর্ধেক সক্ষমতা। শীত মৌসুমে ওসব কেন্দে্রর উৎপাদন দুই—আড়াই হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে। গ্রীষ্মে অন্তত পাঁচ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে বিপিডিবি জানিয়েছে। তবে বিষয়টি অর্থের ওপর নির্ভর করছে। প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া গেলেই কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালানো হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ বিষয়ে জানিয়েছেন, শুধু যে এলএনজি আমদানি করে লোডশেডিং কমানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তা নয়। কয়লা ও গ্যাস দুটো পণ্যই আমদানি করা হবে। তবে রমজানে বিদ্যুতের চাহিদার প্রাক্কলন বেশি হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবেলার চেষ্টায় গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোয় অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। তাতে বাড়তি এলএনজি কার্গো আমদানি করা হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কয়লা ও এলএনজি দুটো পণ্যই আমদানি করতে হবে। লজিস্টিকস সাপোর্টের বিষয়ে কয়লার চেয়ে এলএনজি ভালো। সরকারের লক্ষ্য জ্বালানির জোগানটা নিরবচ্ছিন্ন রাখা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন সাশ্রয়ী করা।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com