বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
জয়নগরে মন্দির ভিত্তিক স্কুলের সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের সাথে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় শ্যামনগরে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির কর্মি টি এস অনুষ্ঠিত তালায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত সাতক্ষীরায় বিজয় দিবসে সদর উপজেলা বিএনপির র্যালি কলারোয়ায় টালি মালিক সমিতির নব—কমিটি গঠন সভাপতি গোষ্ট পাল ও সাধারণ সম্পাদক তুহিন সাতক্ষীরায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত আশাশুনি রিপোর্টার্স ক্লাব ও আশাশুনি থানার বিজয় দিবস প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ নুসরাতের নৃশংস হত্যাকারী জনির ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন আশাশুনি আশার উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে মাথাপিছু ভর্তুকি ৩ হাজার টাকা: উপদেষ্টা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

এফএনএস: বিদ্যুৎ খাতে প্রতিযোগিতা না থাকা ও গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে আমাদের বেশি দামে জ্বালানি কিনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, জ্বালানি খাতে বছরে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু ভর্তুকির এ হার প্রায় ৩ হাজার টাকা। গতকাল শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত জ্বালানির সহনীয় মূল্য ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, গ্রাহকরা প্রতি ইউনিটের বিদ্যুতের গড় মূল্য ৮ দশমিক ৫৫ টাকা দিলেও সরকার তা ১২ থেকে ২৫ টাকায় কিনে থাকে। এলএনজি আমদানিতে প্রতি ইউনিট ৭০ টাকা খরচ পড়লেও শিল্প খাতে ৩০ টাকা হারে সরবরাহ করা হচ্ছে। মূল্যের এ পার্থক্যটা সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে প্রতিযোগিতা না থাকা এবং গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে আমাদের অধিক মূল্যে জ্বালানি ক্রয় করতে হচ্ছে। আমাদের ৪ হাজার এমএমসিএফটি গ্যাস প্রয়োজন, আমাদের রয়েছে ৩ হাজারের কম। ঘাটতি মেটাতে নিজেদের গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম বাড়াতে হবে। ভোলায় প্রায় ৭০ সিএমএফএফটি গ্যাস মজুত রয়েছে, যা উত্তোলনে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হবে। এখন থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ছাড়া কোনো দরপত্র আহ্বান করা হবে না। ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, তেল আমদানিতে উন্মুক্ত দরপত্রের কারণে আগের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম দামে পাওয়া গেছে। এর ফলে সাশ্রয় হবে ৩৭০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতে আইপিপির পরিবর্তে মার্চেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবস্থা চালু হবে। পর্যায়ক্রমে ৪০টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে এবং এ ধরনের প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান সরকার থেকে করা হবে। সরকারি কিছু সংস্থা যেমন- বিদ্যুৎকেন্দ্র, রেল, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক বিভাগের অনেক জমি আছে, যেগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। সেখানে এ ধরনের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প করা হবে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্বিবিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও খনিজসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তামিম। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ ব্যবহারিক হবে না, বরং এক্ষেত্রে ৩ থেকে ৫ বছরের কর্মপরিকল্পনা অধিক কার্যকর। বাংলাদেশকে জ্বালানি আমদানি করতে হবে, তবে অদূর ভবিষ্যতে দেশকে জ্বালানি স্বনির্ভর করা ও জ্বালানির মূল্য হ্রাসে নিজেদের গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দেন তিনি। অধ্যাপক তামিম আরও বলেন, নবায়ানযোগ্য জ্বালানি শক্তি উৎপাদনের জন্য আমাদের গৃহস্থালির ছাদ ব্যবহার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে ২০২০-২১ অর্থবছরের পর টাকার অবমূল্যায়ন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান জ্বালানি আমদানি এবং আন্তর্জাতিক জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে গ্যাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি সিস্টেম লসের কারণে কমপক্ষে ৫ শতাংশ গ্যাস নষ্ট হচ্ছে, যা ১৩০ এমএমসিএফডির সমতুল্য। স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বিগত ৫০ বছরে আমাদের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর থেকে শিল্প ও সেবা খাত নির্ভর হয়ে উঠেছে। এখন জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ ও সহনীয় মূল্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিগত দুই দশকে আমাদের জ্বালানির ব্যবহার প্রায় ৪ গুণ বেড়ে ৪৫ মিলিয়ন টন অফ অয়েল ইকুইভ্যালেন্ট (টিওই) পৌঁছে গেছে। শিল্পখাতে জ্বালানির চাহিদা মেটাতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি বিকল্প নেই। অনুষ্ঠানে নির্ধারিত বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম, বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউএবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. নূরুল আক্তার, আইএফডিএল বাংলাদেশ পার্টনার ব্যারিস্টার শাহওয়ার জামাল নিজাম এবং বিএসআরএমের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স সৌমিত্র কুমার মুৎসুদ্দি বক্তব্য দেন। অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অনুসন্ধান কার্যক্রম অনীহার কারণেই আজকের এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া গ্যাস আমদানির প্রতি আমাদের অধিক হারে আগ্রহ দেখা গেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ভৌগলিকভাবে আমরা নাইজেরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রাকৃতিক গ্যাস মজুত স্থানে অবস্থান করছি। ফলে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে নিজেদের সম্পৃক্ত করার বিকল্প নেই। ড. ইজাজ হোসেন বলেন, জ্বালানির মূল্য যেন বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি করা না হয়, সে লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আলোচনা বাড়াতে হবে। স্থানীয় বাজারে ডলারের মূল্যের অস্থিতিশীলতার কারণে আমাদের জ্বালানি আমদানি আরও বেশি হারে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে মূল্যস্ফীতি ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে। ফলে নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান কার্যক্রম আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com