এফএনএস : তীব্র জ¦ালানি সঙ্কটেও দেশে ডিজেল ব্যবহার বাড়ছে। যদিও সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে ডিজেলের ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমায় লোডশেডিং করে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেই দেশে ডিজেলের বিক্রি ২০-৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। মূলত লোডশেডিংয়ের কারণে বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও অনেক কারখানায় জেনারেটর চালানোর কারণেই ডিজেলের চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে কমে আসছে মজুত। বর্তমানে ডলার সঙ্কটে ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে জ¦ালানি তেল আমদানি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর অধিকাংশ ভবনেই জেনারেটর রয়েছে। আগে ওসব জেনারেটর মাঝেমধ্যে চালানো হলেও এখন নিয়মিত প্রতিদিন ২/৩ ঘণ্টা চলছে। সেজন্য গ্রাহকদের বেশি ডিজেল কিনতে হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি হোটেল-রেস্টুরেন্টেও ডিজেলচালিত জেনারেটরের ব্যবহার বেড়েছে। তাছাড়া শিল্প-কারখানাতেও ডিজেলের ব্যবহার বেড়েছে। কারণ যেসব কারখানায় ক্যাপটিভ জেনারেটর রয়েছে তাদেরও এখন গ্যাস সঙ্কটে মাঝে মাঝে ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে। আর যেসব কারখানার জেনারেটর নেই তাদের লোডশেডিংয়ের সময় ডিজেল জেনারেটর চালাতেই হচ্ছে। সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ডিজেলের বিক্রি বাড়লেও বিতরণ কোম্পানির পক্ষ থেকে বরাদ্দ কামানোর কথা বলা হচ্ছে। পাশাপাশি আমদানি স্বাভাবিক না হলে তেল পাম্পগুলোকে গত মাসের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম দেয়া হতে পারে। আর বরাদ্দ কমলে গ্রাহকও তেল কম পাবে। মূলত এলসি সঙ্কটে জ¦ালানি তেলের আমদানিকারক বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তেল আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও বিতরণ কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা, যমুনার পক্ষ থেকে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, পাম্পগুলোতে চাহিদা অনুসারেই তেল দেয়া হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, গত ৩ মাসের (এপ্রিল থেকে জুন) জ¦ালানি তেল বিক্রির মাসিক গড় করে তা থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে পাম্পগুলোর জন্য বরাদ্দ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে পাম্প মালিকদের মৌখিকভাবে সরবরাহ কমানোর কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু গত সপ্তাহকাল ধরেই ডিজেল বিক্রি ২০-৩০ শতাংশ বেড়েছে। তবে এখনো কোনো এলাকায় সেভাবে সংকট দেখা যায়নি। কিন্তু বরাদ্দ কমিয়ে দিলে আগামী সপ্তাহ থেকে সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে দেশে ৪০ দিনের চাহিদা পূরণের মতো জ¦ালানি তেলের মজুত থাকে। কিন্তু এলসি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ওই মজুত ইতোমধ্যে কমে এসেছে। আগস্টের ৩ লাখ ৮০ হাজার টন চাহিদার বিপরীতে বিপিসি ১৯ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ১ লাখ টন ডিজেল আমদানির ঋণপত্র খুলতে পেরেছে। অথচ দেশে সরবরাহ করা জ¦ালানি তেলের ৭০ শতাংশ ডিজেল। বর্তমানে ডিজেল ৪ লাখ ৫ হাজার টন, ফার্নেস অয়েল প্রায় ৮২ হাজার ৮০০ টন, অকটেন ১৪ হাজার ৩০০ টন, জেট ফুয়েল ৫৮ হাজার ৭০০ টন, পেট্রোল প্রায় ১৭ হাজার ৬০০ টন এবং কেরোসিন ১৩ হাজার ৪০০ টন মজুত আছে। দেশে ডিজেলের মজুত ক্ষমতা ৬ লাখ টনেরও বেশি। অকটেন মজুত ক্ষমতা ৪৬ হাজার টন, পেট্রোল ৩২ হাজার টন, কেরোসিন ৪২ হাজার টন। আর ফার্নেস অয়েল মজুত রাখা যায় ১ লাখ ৫০ হাজার টন। পেট্রোল আর অকেটন বাদে বাকি জ¦ালানি তেল প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। পেট্রোল আর অকটেনের চাহিদার প্রায় পুরোটাই দেশে উৎপাদিত হয়। অন্যদিকে ডিজেল সঙ্কট প্রসঙ্গে পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ ইশবাল জানান, চাহিদা অনুসারেই পাম্পগুলো তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। মজুত ও সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই।