সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৫২ পূর্বাহ্ন

বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংকটের শঙ্কা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২৫

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সঙ্কটের শঙ্কা রয়েছে। কারণ ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ওপর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা এখনো বড় আকারে নির্ভরশীল। আর ওসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বেশিরভাগই বেসরকারি মালিকানাধীন। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ বেসরকারি মালিকানাধীন ওসব বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের (আইপিপি) ৮ হাজার কোটি টাকা পাওনা বকেয়া আটকে রয়েছে। তার মধ্যে ফার্নেস অয়েল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পাওনা বকেয়ার পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তার অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকা বকেয়া পাওনা দ্রুত পরিশোধ না করা হলে আসন্ন সেচ, রমজান ও গ্রীষ্ম মৌসুমে ফার্নেস অয়েলচালিত ওসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরবরাহ ঠিক রাখা যাবে না বলে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিআইপিপিএ) এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত বছরের গ্রীষ্ম, রমজান ও সেচ মৌসুমে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি উঠেছিল। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েল কেন্দ্রগুলো থেকে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের ব্যবহার সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত উঠেছিলো। দেশে ফার্নেস অয়েল কেন্দ্রগুলোর এখন মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৬ হাজার ৮৮৫ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। এগুলো শীতে খুব বেশি ব্যবহার না হলেও বিপিডিবি গ্রীষ্ম, রমজান ও সেচ মৌসুমে ব্যবহার করে। সূত্র জানায়, ফার্নেস অয়েল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে আসন্ন সেচ, রমজান ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। সেজন্য এখনই ঋণপত্র (এলসি) খোলা জরুরি। কারণ এলসি খোলা সাপেক্ষে দেশে ওই ধরনের সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল পৌঁছতে অন্তত ৪০—৪৫ দিন সময় লাগে। সেক্ষেত্রে এখন এলসি খোলা হলে ওই জ্বালানি তেল আসতে মার্চের প্রথম সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। আর মার্চের প্রথম দিকে রমজানও শুরু হবে। এর আগে সেচের ভরা মৌসুম। এর মধ্যে যদি অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায় তাহলে বিপাকে পড়তে হবে। আর বিপিডিবিও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি সংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। ফলে জ্বালানি তেল আমদানি করা না গেলে বিদ্যুৎ চাহিদার ভরা মৌসুমে দেশে লোডশেডিং ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, আইপিপিগুলো তাদের বকেয়া যে পরিমাণ অর্থ চাচ্ছে ওই পরিমাণ অর্থ এখন বিপিডিবির কাছে নেই। যদিও অর্থ বিভাগের কাছে ভতুর্কির টাকা চাওয়া হয়েছে। ওই অর্থ পাওয়া গেলে সেখান থেকে কিছু অর্থ পরিশোধ করা হবে। তবে ঠিক কী পরিমাণ ওই বিষয়ে এখনই নিশ্চয়তা দেয়া যাচ্ছে না। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার ৮২০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সবচেয়ে বেশি সক্ষমতা। তবে গ্যাস সংকটের কারণে অন্তত সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াট বছরের বেশির ভাগ সময় বসিয়ে রাখতে হয়। আর কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোও জ্বালানি সংকটের কারণে পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না। এদিকে বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) পক্ষ থেকে ৮ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দেয়া হয়। ওই চিঠিতে ১০ দিনের মধ্যে বিদ্যুতের বকেয়া বিল পরিশোধ করা না হলে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কার কথা জানানো হয়। বিশেষত সেচ, শিল্প—কারখানা, বাসাবাড়ি এমনকি খাদ্যনিরাপত্তায়ও হুমকি তৈরি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। এবার দেশের বেজলোড—ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চায় বিপিডিবি। তাছাড়া জ্বালানি তেলভিত্তিক ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের খরচ কমিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমানোরও পরিকল্পনা সংস্থাটির রয়েছে। বকেয়া অর্থ দ্রুত পরিশোধের তাগাদা দিয়ে বিআইপিপিএ প্রতিনিধিরা বিপিডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। একই সঙ্গে জ্বালানি তেল আমদানি ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রাখার বিষয়টি নিয়েও বিপিডিবি চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে তারা। সেক্ষেত্রে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বকেয়া পাওনা পরিশোধের তাগাদা দিয়ে বিপিডিবিকে দেয়া এটি হবে চতুর্থ চিঠি। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিআইপিপিএ সভাপতি ও মিডল্যান্ড পাওয়ারের চেয়ারম্যান কেএম রেজাউল হাসানাত জানান, বকেয়ার বিষয়টি জানিয়ে বিপিডিবির কাছে সর্বোচ্চ অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেচ, রমজান ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জ্বালানি আমদানিতে জরুরি ভিত্তিতে আড়াই হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই পরিমাণ টাকার বিষয়ে কোনো সাড়া মেলেনি। বিপিডিবি অর্থ বিভাগের টাকা ছাড়ের অপেক্ষার কথা জানিয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে আশান্বিত হওয়ার মতো কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম জানান, অনেক আগে থেকেই বিপিডিবির আর্থিক সংকট রয়েছে। তারপরও সবার বকেয়া পরিশোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে একবারেই পরিশোধ করা যাবে, বিষয়টি এমন নয়। এবারের মৌসুমে বিপিডিবির পরিকল্পনা হলো ব্যয়সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। সেভাবেই পরিকল্পনা করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com