এফএনএস : বিপুলসংখ্যক দামি গাড়ি কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ওসব গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন খোলা পড়ে থেকে অনেক আগেই চলাচলের উপযোগিতা হারিয়েছিলো। বাধ্য হয়েই এখন ওসব গাড়ি টুকরো টুকরো করে ২৪ টাকা কেজি দরে ৭৪টি গাড়ি নিলামে রি—রোলিং মিলের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রায় ১৫টি রি—রোলিং মিলের প্রতিনিধিরা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের নিলাম শাখায় উন্মুক্ত ডাকের মাধ্যমে ওই নিলামে অংশ নিয়েছেন। চট্টগ্রাম বন্দর কাস্টমস সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আমদানি করা গাড়ি ৩০ দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানিকারক খালাস করতে হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত ডকুমেন্ট ঘাটতি কিংবা মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে আমদানি করা ওই গাড়িগুলো বছরের পর বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে পড়েছিলো। প্রতিটি গাড়িরই একটা অর্থনৈতিক বয়স সীমা থাকে। কিন্তু ওই গাড়িগুলোর বেশিরভাগ খোলা আকাশের নিচে ছিল ১০ থেকে ১৫ বছর। ফলে লবণাক্ত আবহাওয়া ও বৃষ্টিতে সেগুলোতে মরিচা ধরে ৭৪টি গাড়ির সব পার্টস নষ্ট হয়ে গেছে। আর সেগুলো নিলামে কিনে পুনরায় ব্যবহারের পর্যায়ে না থাকায় তা ধ্বংস করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছিলো। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে বর্তমানে ২৯৭টি গাড়ি অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ওসব গাড়ির মধ্যে ১৯৫টি গাড়ির মামলা রয়েছে। আর মামলাহীন ১০২টি গাড়ির বিষয়ে বিআরটিএর মতামত চাওয়া হয়। আর বিআরটিএর রিপোর্টের ভিত্তিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদনক্রমে গত জুলাইয়ে গাড়িগুলোকে টুকরো করা হয়। ওসব টুকরো উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করতে সমপ্রতি অনুমোদন দেয়ার পর নিলামের আয়োজন করে কাস্টমস। আর উন্মুক্ত নিলামে ১৫টি রি—রোলিং মিলসের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ ২৪ টাকা ৫০ পয়সা কেজি দাম উঠেছে। ৫৮টি লটে ৭৪টি গাড়ি নিলামে বিক্রির জন্য কাস্টমস প্রতি টনের (১০০ কেজি) ভিত্তি মূল্য ৫৩ হাজার টাকা ধরেছিলো। অর্থাৎ প্রতি কেজি ৫৩ টাকা। কিন্তু নিলামে দর উঠেছে প্রতি টন ২৪ হাজার ৫০০ টাকা (কেজি ২৪ টাকা ৫০ পয়সা)। সূত্র আরো জানায়, গাড়ি ব্যবসায়ীরা আমদানি করা গাড়িগুলো কেটে কেজি দরে নিলামে বিক্রি না করে আগের অবস্থায় বিক্রির জন্য কয়েক দফা কাস্টমসকে অনুরোধ করেছিলো। কারণ গাড়িগুলোকে না কেটে নিলামে বিক্রি করা হলে ওসব গাড়ির পার্টস অন্য গাড়িতে ব্যবহার করা সম্ভব হতো। পার্টসগুলো ব্যবহারের পর গাড়িগুলোকে স্ক্র্যাপ আকার বিক্রি করা যেতো। কিন্তু এখন সেগুলো আর ব্যবহার করা যাবে না। এখন সেগুলো জায়গা রি—রোলিং মিলে হয়েছে। এর আগে একটি গাড়ি ৪৬ লাখ টাকায় বিক্রির অনুমোদন পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু মামলা জটিলতায় গাড়ি নেয়া যায়নি। এমনিভাবে বন্দর ইয়ার্ডের ভেতরে থাকা প্রতিটি গাড়ির মূল্য ১০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ লাখ টাকা পর্যন্তও থাকতে পারে। এদিকে সম্প্রতি নৌ—উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন চট্টগ্রাম কাস্টমস পরিদর্শনে এসে পুরনো সব গাড়ি নিলাম করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশনার আলোকে নিলামের মাধ্যমে সব জঞ্জাল পরিষ্কার করছে কাস্টমস কতৃর্পক্ষ। এখন ওসব গাড়ির টুকরো বিক্রি হয়ে গেলে বন্দরের ভেতরে থাকা গাড়িগুলো নিলাম শেডে এনে জড়ো করা হবে। অন্যদিকে এ বিষয়ে কাস্টমস নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার সাকিব হোসেন জানান, মামলাহীন গাড়িগুলো চলাচলের উপযোগী কিনা তা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো। তারা ওসব গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী বলে রিপোর্ট দিলে সেগুলোও একই প্রক্রিয়ায় নিলামে বিক্রি করা হতে পারে। অথবা সরকারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট কিংবা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে প্রশিক্ষণের জন্য দেয়া যেতে পারে। তাতে সরকারের যেমন লাভবান হবে, তেমনিভাবে গাড়িগুলোও কাজে আসবে।