এফএনএস : দেশে বিপুলসংখ্যক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম চালালেও নিবন্ধন প্রক্রিয়ার তোয়াক্কা করেনি। সম্প্রতি সরকার ওসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে গেলে দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের আসল রূপ বেরিয়ে আসে। ইতোমধ্যে অবৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনার দায়ে দেড় হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছে সরকার। সরকার এ বিষয়ে আরো কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লাইসেন্স ছাড়া কোনোভাবেই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। নতুন প্রতিষ্ঠান করার আগেই লাইসেন্স নিতে হবে। বর্তমানে সারাদেশে ১৮ হাজারের বেশি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তার মধ্যে ৬ হাজার ৯১৭টি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে এলেও নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করেনি। আর ৯ হাজার ৮৩টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠানের হাতে এখন বৈধ কোনো লাইসেন্স নেই। তাছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মে মাস থেকে চলমান অভিযানে দেড় হাজারেরও বেশি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর হিসাবের বাইরে হাজারো প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালালেও অধিদপ্তরের কাছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ওসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই। ফলে প্রতিনিয়ত রোগী ও তার স্বজনরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। এমনকি ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। সরকার স্বাস্থ্যসেবার নামে ওসব কর্মকান্ডে বন্ধে আরো কঠোর হচ্ছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে সারাদেশে নিবন্ধন ও লাইসেন্স নিয়ে ১১ হাজার ৮৩টি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাচ্ছে। তার মধ্যে হাসপাতাল রয়েছে ৩ হাজার ৭৬৭টি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭ হাজার ১৫৭টি ও ১৬২টি ব্লাড ব্যাংক। গত ১২ জুন পর্যন্ত লাইসেন্স ও নিবন্ধন নবায়নে ১৬ হাজার ৬০৬টি আবেদন জমা পড়েছে। অভিযানের ভয়ে শুধু মে মাসেই ৫ হাজারেরও অধিক প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আবেদন করা প্রতিষ্ঠানের কাজ দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি করতে চাচ্ছে। তবে সংস্থাটি জনবল সংকটের কারণে ৩১৫টি প্রতিষ্ঠানের আবেদনপত্রে এখন পর্যন্ত হাত দিতে পারেনি আর ২ হাজার ১৯৪টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যেতে পারেনি। তাছাড়া বেশ কিছু কাগজে সমস্যা থাকায় আটকে গেছে ২ হাজার ৬৪৬টির নিবন্ধন নবায়ন। তবে চলমান অভিযানের মধ্যেই ৪২৪টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষ করা হয়েছে। এদিকে এ প্রসঙ্গে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভ‚ঁইয়া জানান, এ সংগঠনের সদস্যদের সবাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত। নিয়ম মেনে লাইসেন্স নবায়নও করে। তবে অনেকেই দীর্ঘদিন আগে আবেদন করেও লাইসেন্স নবায়ন করতে পারেনি। আবেদন প্রক্রিয়াও অনেক জটিল। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নজর দেয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর জানান, মানসম্মত ও যথাযথ সেবা নিশ্চিতে আগে নিবন্ধন নিয়ে হাসপাতাল গড়ে তুলতে হবে। হাসপাতাল বা ক্লিনিকে গিয়ে কেউ যেন হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার না হয় সেদিকে মালিকদের লক্ষ্য রাখতে হবে। অবৈধ হাসপাতাল বন্ধে অভিযান চলবে। যারা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে তাদের কাজ দ্রুতই নিষ্পত্তি করা হবে।