বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
জয়নগরে মন্দির ভিত্তিক স্কুলের সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের সাথে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় শ্যামনগরে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির কর্মি টি এস অনুষ্ঠিত তালায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত সাতক্ষীরায় বিজয় দিবসে সদর উপজেলা বিএনপির র্যালি কলারোয়ায় টালি মালিক সমিতির নব—কমিটি গঠন সভাপতি গোষ্ট পাল ও সাধারণ সম্পাদক তুহিন সাতক্ষীরায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত আশাশুনি রিপোর্টার্স ক্লাব ও আশাশুনি থানার বিজয় দিবস প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ নুসরাতের নৃশংস হত্যাকারী জনির ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন আশাশুনি আশার উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

বিলুপ্তির পথে বজ্রপাত প্রতিরোধক ও প্রকৃতির বন্ধু তালগাছ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৪

কাদাকাটি প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে। ঝড় কিংবা টর্নেডো মোকাবেলায় এবং বজ্রপাত জনিত মৃত্যুর হার কমানোর প্রধান সহায়ক হলো তালগাছ। এছাড়াও কথায় আছে তালগাছ মানেই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। আকাশ ছুঁই ছুঁই সারি সারি তালগাছ সেই আদিকাল থেকে গ্রামবাংলার শোভা বৃদ্ধিতে অকৃত্রিমভাবে ভূমিকা রেখে চলছে। সারি সারি তালগাছ দেখে মানুষের মন জুড়াতো। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় এবং শোভা সৃষ্টিতে তালগাছের জুড়ি মেলেনা। কাজেই তালগাছের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে সারা দেশে রাস্তার দুই পাশে তালগাছের চারা-আঁটি রোপণের জন্য ২০১৭ সালে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর কাবিখা-টিআর প্রকল্পের আওতায় তালগাছের চারা-আঁটি লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারপরও সেই তালগাছ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। বিশেষজ্ঞারা বলছেন, তালগাছে কার্বনের স্তর বেশি থাকায় তা বজ্রপাত নিরোধে সহায়তা করে। কারণ, তালগাছের বাকলে পুরু কার্বনের স্তর থাকে। তালগাছের উচ্চতা ও গঠনগত দিক থেকেও বজ্রপাত নিরোধে সহায়ক। তালগাছের পাশাপাশি নারকেলগাছ, সুপারিগাছের মতো উচ্চতা সম্পন্ন গাছ বজ্রপাত নিরোধে বেশ কার্যকরী। নিকট অতীতেও এ তালগাছ শোভা ছড়াতো গ্রামবাংলায় এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতো। প্রকৃতির সেই তালগাছ নিকট ভবিষ্যতে তেমনটি আর চোখে পড়েনা। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রক্ষায় সরকারি এবং বে-সরকারি পর্যায়ে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহন চোখে পড়ার মত হলেও গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের বাহক আর নানা উপকারি এই তালগাছ রক্ষায় তেমন কোন পদক্ষেপ না থাকায় ক্রমেই এটি হারিয়ে যাচ্ছে। আশ্রয় হিসেবে এ গাছ বাবুই পাখিদের বড়ই প্রিয় জায়গা। বাবুই ছাড়াও অঞ্জন, বাদুরসহ নানা প্রাণী আশ্রয় হিসেবে এ গাছটি বেছে নেয়। দেশে তালগাছ প্রায় বিলুপ্ত হওয়ায় মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। সাধারণত একটি তালগাছ ৯০ থেকে ১০০ ফুট উঁচু হয়। উঁচু গাছ হওয়ায় বজ্রপাত সরাসরি এ গাছের মাধ্যমে মাটিতে গিয়ে আমাদের রক্ষা করে। এ ছাড়াও ভূমিক্ষয়, ভূমিধস, ভূগর্ভস্থ পানির মজুত বৃদ্ধি ও মাটির উর্বরতা রক্ষা করে। তালগাছের আকর্ষণে বাড়ে মেঘের ঘনঘটা, ঘটে বৃষ্টিপাতও। তালগাছের শিকড় মাটির অনেক নিচ পর্যন্ত প্রবেশ করায় ঝড়ে হেলে পড়ে না কিংবা ভেঙে পড়ে না। যেখানে কোনো কিছু চাষ হয় না সেখানেও তালগাছ তার শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়। নতুন রাস্তার ল্যান্ডস্কেপ, বাঁধ ও নদীভাঙন ঠেকাতে এর রয়েছে সফল প্রয়োগ। এক সময় সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন গ্রামের আনাচে কানাচে আর বিভিন্ন সড়ক আর মহাসড়কের পাশে সারি সারি তালগাছ শোভা পেতে দেখা গেছে কিন্তু সেই চিরচেনা দূশ্য আর চোখে পড়ে না। এখন হঠাৎ কোন কোন রুপসী গ্রামবাংলায় দু’চারটি তালগাছ চোখে পড়ে কিন্তু সেসব তালগাছ আবার কারো লাগানো নয় এমনিতেই এসব তালগাছ ঝোপ ঝাড়ে বা জঙ্গলে বেড়ে উঠেছে। কেউ তাল খেয়ে তালের বীজ ফেলে রেখে গেছে সেই বীজ থেকেই মুলত হয়ে ওঠেছে এসব তালগাছ। অতীতে অপরিচিত মানুষের বাড়ী, জমি, পুকুর, মাঠ, মসজিদ, মন্দির, মঠ, গির্জা, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থান চেনানোর জন্য সেক্ষেত্রে বলা হত উচুঁ ঐ তালগাছটির পাশে। এমনকি সরকারি ও বেসরকারি কাজে নানান দিক নির্দেশনার ক্ষেত্রেও তালগাছের সহায়তা নেওয়া হত। তালের পিঠা, তালের গুড় আর তালের রস সব মানুষের নিকট খুবই মজাদার খাবার। বিশেষ করে তালের পিঠা দিয়েই অতীতে জামাইয়ের বাড়ী, শ্বশুর বাড়ী, বেয়াই বাড়ী, মেয়ের শ্বশুর বাড়ী, ছেলের শ্বশুর বাড়ীসহ নানান আত্নীয়তার বন্ধন রচিত হত। অতীত সময়গুলোতে তালপিঠা ছাড়া গ্রামবাংলায় আত্মীয়তা কল্পনাই করা যেতনা। এছাড়াও তালগাছের পাতায় তৈরি করা হয় নানা রঙের বা ডিজাইনের হাতপাখা। তালের গাছ ও পাতা ঘরের কাজে ও জ্বালানি কাজে ব্যবহার করা হয়। তালের পাতায় সুন্দরভাবে বাসা তৈরি করে সেখানে বসবাস করে। এগুলো আমাদের গ্রাম অঞ্চলের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধরে রেখেছে। এছাড়াও বাংলা ও বাঙালির জনপ্রিয় ফল তাল। ভাদ্র মাসের তাল না খেলে কালে ছাড়ে না বলে বাঙালি সমাজে প্রবাদও রয়েছে। তালগাছ মানুষ ও পাখি উভয়ের জন্যই উপকারী। সেই তালগাছ আজ প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com