বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২১ অপরাহ্ন

বিশেষজ্ঞদের অভিমত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে \ দরকার ব্যক্তি সচেতনতা ও সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে বর্তমানে ভয়াবহ রুপ নিয়েছে ডেঙ্গু জ্বর। প্রতিদিনই বাড়ছে এ রোগীর সংখ্যা। তবে মশা নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তার বলছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার সময়মতো মশা নিরোধক কার্যকরী ওষুধ ছিটিয়ে এডিশ মশার লাভা ধ্বংস করে সাফল্য দেখিয়েছে, এটা ইতিবাচক। আর ব্যক্তি পর্যায়ের মানুষকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে উদ্ধুদ্ধকরণের মাধ্যমে বাড়ির আশপাশ স্বচ্ছ রাখাতেও ভুমিকা রেখেছে। তাই বাংলাদেশেও প্রয়োজন ব্যক্তি পর্যায়ের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করে গড়ে তোলা। এর সঙ্গে দরকার সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ। কিন্তু এ দু’ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে সিটি করপোরেশনগুলো। নি¤œমানের ওষুধ কেনা এবং সেগুলোও যথাযথ প্রয়োগ না করাও ব্যর্থতার কারণ। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। রাজধানীসহ সারাদেশেই জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। শনিবার (২০ আগস্ট) পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩৩৪ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ হাজার ৮৯৬ জন। চলতি বছরে গতকাল পর্যন্ত মারা গেছেন ১৮ জন। রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ডেঙ্গু রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার ব্যক্তিকে সচেতন করা। ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিশ মশার দুটি প্রজাতি রয়েছে, এরা হলো এডিডাস এজিপিটি ও এডিডাস আলবোপিটাস। তবে বাসা বাড়িতেই এডিডাস এজিপটি সবসময় থাকে। বলেন, আপনি আমি সচেতন থাকলে এবং নিজের বাসা পরিস্কার রাখলে ডেঙ্গু হবে না। এজন্য সবাই মিলে চেষ্টা করা উচিত। মশা নিয়ন্ত্রন করা সিটি করপোরেশনের কাজ। তারা সঠিকভাবে করছে বলে আমরা কার্যকরভাবে দেখতে পাই না। তবে সরকার যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে। হাসপাতালগুলোতে এ রোগের দক্ষ চিকিৎসক রয়েছে। তাই কারো জ্বর হলে এ সময়ে তিনি যেনো ডাক্তারের পরামর্শ নেন। এ রোগটি নির্ণয়ের পর দ্রুত চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হলে রোগী মারা যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও হেলথ অ্যান্ড হোপ কেয়ার হাসপাতালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: লেলিন চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ এবং যে মশাটি ডেঙ্গু ছড়ায় এটা একটা এডিস মশা। এই মশা জন্ম নেয়ার জন্য দরকার হয় জমে থাকা স্বচ্ছ পরিস্কার পানি। টানা তিন থেকে পাঁচদিন খোলা পাত্রে পানি জমা থাকলে সেখান থেকে জন্ম নেয়া মশার কামড়ে ডেঙ্গু হতে পারে; এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, আষাড়, শ্রাবন ও ভাদ্র এ তিনমাস বৃষ্টির কাল। তাই এ মৌসুমে ডেঙ্গু বাড়বে এটা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আগেই সতর্ক বার্তা দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিরোধের জন্য দুটি কাজ দরকার। একটি হচ্ছে, -যেখানে মশার ডিম পাড়ে বা লার্ভার শুককিট তৈরি হয় সেগুলোকে ধ্বংস করা। পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্ক (উড়ন্ত) মশা ধ্বংস করার জন্য ওষুধ ছড়ানো। এগুলো ধ্বংস করার জন্য লার্ভে সাইট নামে ওষুধ স্প্রে করতে হয়। পাশাপাশি মশা প্রজনন ঘটতে পারে এমন স্থানগুলোকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যেনো পানি জমে না থাকতে পারে। এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, মশা মারার জন্য যুগপৎ ডারবিসাইট এবং বড় মশা মারার জন্য ওই অংশের উপরে স্প্রে ছিটাতে হবে। কিন্তু ২০০০ সাল থেকে যখন ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব শুরু হয় তখন এটা মারার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়। ওষুধ কেনা হয়। বাজেট বাড়ে। কিন্তু মশা আর মরে না। এ কারণেই বছরের পর বছর এটা চলছে। বলেন, যদি আমরা ডেঙ্গুর সমাধার করতে চায় তাহলে আমাদের আন্তরিকভাবে কাজটি করতে হবে। যেটি আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ডেঙ্গু ভাইরাসের তিনটি প্রজাতি রয়েছে, যথা: ডেন ওয়ান, ডেন টু ও ডেন থ্রি। এডিস মশাবাহিত তিন ধরণের ভাইরাসের যে কোন একটির সংক্রমণে যে অসুস্থতা হয় সেটাই ডেঙ্গু রোগ নামে পরিচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ১৯৫০ সালে ডেঙ্গু ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ডে মহামারি আকারে দেখা দেয়; কিন্তু বর্তমানে একশোটিরও বেশি দেশে ডেঙ্গু জ্বর হতে দেখা যায়। প্রতিবছর এ রোগে কয়েক কোটি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রথম ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। প্রথম বছরেই ডেঙ্গুতে মারা যান ৯৩ জন ২০১৯ এ ১৫৬ জন, ২০২১ এ ১০৫ জন এবং এ বছর এখন পর্যন্ত ১৭ জন মারা গেছেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ২২৮ জন। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৫৮১ জন মারা গেছেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯২ জন রোগী। এরই মধ্যে শনিবার (২০ আগস্ট) পালিত হয়েছে বিশ্ব মশা দিবস। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত¡বিদ, গবেষক অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার তার এক গবেষণায় বলেছেন, ঢাকা ডেঙ্গুর জন্য সবচেয়ে বড় হটস্পট। কিন্তু আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, এটি ঢাকা থেকে বিস্তৃত হচ্ছে অন্য জেলায়। প্রতিবছর প্রায় একই সময়ে ডেঙ্গু আঘাত হানছে আর আমরা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছি। এ প্রসঙ্গে এই গবেষক বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে তদারকি কমিটির কার্যক্রম বাড়ার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি মূল্যায়ন কমিটি করার পরামর্শ দেন তিনি। আর কীটতত্ত¡বিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে ফুলহাতা শার্ট, হাতে পায়ে মোজা, দিনে মশারির ভেতর ঘুমানো এবং অফিসে প্রতিদিন সকালে অ্যারোসেল ব্যবহার করতে হবে। আরও পরামর্শ দিয়ে এই কীটতত্ত¡বিদ বলেন, যে এলাকায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাবে সেখানে ক্রাশ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com