বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সুন্দরবনে বিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৫ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর দেবহাটা বিএনপির সদস্য নবায়ন উদ্বোধনী আয়োজনে জেলা বিএনপির আহবায়ক রহমাতুল্লাহ পলাশ বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন যুবদলের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত কলারোয়ায যুবদল নেতার ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ মুন্সীগঞ্জে তাপদাহে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ শ্রীউলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশ সফল করতে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তুতি সভা ভাড়াশিমলায় ২৫০ প্রান্তিক কৃষানের মধ্যে সবজির বীজ বিতরণ খুলনার সাবেক মহিলা কাউন্সিলর গ্রেফতার বসন্তপুর ফকিরপাড়া জামে মসজিদে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল

বিশ্বে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শিকার ৮ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ : পর্যবেক্ষক সংস্থা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

এফএনএস বিদেশ : পুরো পৃথিবীতে গত বছর রেকর্ডসংখ্যক মানুষ নিজ দেশের ভেতরেই গৃহহীন হয়ে পড়েছে, অর্থাৎ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা পেঁৗছেছে ২০২৪ সালে ৮ কোটি ৩০ লাখে, যা জার্মানির মোট জনসংখ্যার সমান। তবে তারা কেউই সীমান্ত পেরোয়নি, দেশ ছেড়েও যায়নি। নিজের ভিটেমাটি, গ্রাম বা শহর সবকিছুই পেছনে ফেলে পালাতে বাধ্য হয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি) ও নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি)। গত বছর বিশ্বজুড়ে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা ছয় বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। আইডিএমসি এর প্রধান আলেক্সান্দ্রা বিলাক বলেন, “অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি এমন এক জটিলতা, যেখানে সংঘাত, দারিদ্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তন একত্রে আঘাত হানে। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরিদ্র, দুর্বল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।” প্রতিবেদন অনুসারে, বাস্তুচ্যুতদের প্রায় ৯০ শতাংশ বা ৭ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ সংঘাত ও সহিংসতার কারণে ঘরছাড়া হয়েছেন। এই সংখ্যা ২০১৮ সালের তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ সংঘাত ও সহিংসতার কারণে অন্তত ১০টি দেশের প্রতিটিতে তিন মিলিয়নের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলা সুদানের পরিস্থিতি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। দেশটিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের পেঁৗছেছে ১ কোটি ১৬ লাখে পেঁৗছেছে। যা একক কোনো দেশে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির রেকর্ড বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গত বছরের শেষের দিকে গাজা উপত্যকায়ও প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। যা ওই পুরো অঞ্চলের জনসংখ্যার প্রায় সমান। এরপর গত মার্চে ইসরাইল নতুন করে হামলার শুরুর পর সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে। ২০২৪ সালে মোট ৬ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ নতুন করে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির নথিভুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে একাধিকবার স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ কোটি মানুষ নিজ দেশে বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা আগের পাঁচ বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। সংঘাত ও সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে ২ কোটি ১ লাখ জনকে। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়েছেন ৪ কোটি ৫৮ লাখ। যা এক বছরে দুর্যোগজনিত বাস্তুচ্যুতির নতুন রেকর্ড। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে হেলেন ও মিল্টনের মতো হ্যারিকেনের কারণে প্রায় ১ কোটি মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। এই সংখ্যা বৈশ্বিক মোট দুর্যোগজনিত বাস্তুচ্যুতির চারভাগের একভাগ। ২০২৪ সালের দুর্যোগজনিত বাস্তুচ্যুতির ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশই আবহাওয়া সম্পর্কিত, যার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে এমন দেশের সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে, যেখানে একই সঙ্গে সংঘাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুতি ঘটছে। আবার সংঘাতজনিত বাস্তুচ্যুতদের প্রায় চারভাগের তিনভাগ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর নাগরিক। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাস্তুচ্যুতির কারণ ও প্রভাব প্রায়শই একে অপরের সঙ্গে জড়িত। ফলে সংকট আরো জটিল হয়ে ওঠে, ফলে বাস্তুচ্যুতদের দুর্দশা দীর্ঘস্থায়ী হয়। এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক মানবিক সহায়তার বেশিরভাগই বন্ধ করে দিয়েছেন, যার প্রভাব সরাসরি পড়ছে বাস্তুচ্যুতদের ওপর। এনআরসি প্রধান ইয়ান এগেল্যান্ড বলেন, “এবারের তথ্য আমাদের ঘুম ভাঙানোর জন্য যথেষ্ট। প্রতিবারই যখন মানবিক সহায়তার তহবিল কমে, তখন অনেক বাস্তুচ্যুত তাদের খাদ্য, চিকিৎসা, নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত হয়।” বাস্তুচ্যুত এসব মানুষ নিজের দেশ ছাড়েননি, তবু রাষ্ট্রের সীমার ভেতরেই তারা পরিণত হয়েছে আশ্রয়হীন, সুবিধাবঞ্চিত, এবং উপেক্ষিত উদ্বাস্তুতে। এ সংকট বড় হলেও তাদের প্রতি সহানুভূতি ও সহায়তাও ক্রমেই কমছে। এই সংকট শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি নীতিনির্ধারকদের জন্য চরম সতর্কবার্তা এবং মানবতার কাছে গভীর দায়ও।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com