রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

বিশ্বে করোনার প্রার্দুভাব \ আপাতত স্বস্তিতে তবে ঝুঁকিমুক্ত নয় দেশ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ বাংলাদেশ এই মুহুর্তে প্রাণ-সংহারী নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ও মৃত্যুর দিক থেকে কিছূটা স্বস্তিতে থাকলেও ঝুঁকিমুক্ত নয়। কারণ বিশ্বের অনেক দেশে করোনা সংক্রমণ উধ্বমূখী। সোমবার একদিনেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের হিসাবে ধরে নেওয়া হয়, এর বাইরে আরও ২৫ লাখ লোক আক্রান্ত হয়েছে। তাই করোনা বহন করা ৩০ লাক লোকের মাধ্যমে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে এই প্রাণঘাতি রোগের সংক্রমণ বাড়তে পারে। তাই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা বিশ্ব থেকে বিদায় নেয়নি। এটার সঙ্গে মানুষের আজীবন বসবাস করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানায় সচেতন ও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও হোপ অ্যান্ড হেলথ কেয়ার হাসপাতালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশে এখন নিয়ন্ত্রিত। গত বেশকিছু দিন ধরে সংক্রমণের চিত্র তাই বলছে। এটা বিশ্ব প্রেক্ষাপটে কাঙ্খিত বা প্রত্যাশিত বিষয়। বলেন, আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ার বস্তুগত কোনো অবস্থা তৈরি হয়নি। তবে, চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। আমাদের ভূ-অঞ্চলে এটি এখনও বাড়ে নাই। তবে, -এমনিতেই একটা আশঙ্কা রয়েছে, – আগামী জুন-জুলাইয়ের দিকে ভারতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার একটা পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, সেটি নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও একটু পড়তে পারে। কিন্তু স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, – এখন পর্যন্ত যে ভ্যারিয়েন্ট এক্সই, ওমিক্রম বা ডেল্টার সংমিশ্রণ বলি এতো তীব্র না যে, আবার আগের মতো দুরবস্থা তৈরি করবে। এর মধ্যে আমাদের এই ভূ-অঞ্চলে অধিকাংশ মানুষ ইতিমধ্যে দুইডোজ টিকা নিয়েছেন। আর একডোজ টিকা নিয়েছেন ৭০ শতাংশের উপরে মানুষ। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে একটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা বলতে পারি, টিকা নেওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে; এটি অতিক্রম করার জন্য অতি ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন কোন ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তি না ঘটে, – তাহলে করোনার প্রকোপ বেড়ে গিয়ে জন-দুর্ভোগ বা পূর্বের অবস্থা তৈরির আশঙ্কাটা অনেক কমে যাবে। জনস্বাস্থ্য এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, আমাদের টিকা কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের টার্গেট থাকবে যতদ্রুত সম্ভব দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের বেশি মানুষকে দুইডোজ টিকা দেওয়া। এ লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত এ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের বুন্টার ডোজ অগ্রাধিকারভিত্তিতে দিতে হবে। শুধু আমাদের না চারপাশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশকেও এ কাজটিই করতে হবে। তা না হলে নতুন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভাবনের সম্ভাবনা বেশিই থাকবে। রোগতত্ত¡, রোগ নিরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বাংলাদেশে যেটা দেখছি, করোনা সংক্রমণ ও প্রাণহানীর দিক থেকে তুলনামূলকভাবে আমরা একটা স্বস্তির জায়গাতে এই মুহুর্তে আছি। হঠাৎ করে একজন মারা যাওয়ায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ পুরনো রোগী আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন ওই কারণে মৃত্যু ঘটতে পারে। কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ করোনায় আক্রান্ত হয়ে যে মানুষটি মারা গেছেন, তিনি একডোজ ভ্যাকসিন-ও নেননি। এ ধরণের লোকদের আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। তিনি বলেন, গত একসপ্তাহ ধরে সংমক্রণের হার ১ শতাংশের নিচে আছে। আমাদের জন্য এটা একটা খুবই স্বস্তিদায়ক ব্যাপার। কিন্তু সারা পৃথিবীতে করোনার অতিমারীর কারণে অনেক রোগী পাওয়া যাচ্ছে। সোমবারও প্রায় ৫লাখ রোগী সনাক্ত হয়েছে। গবেষকদের ভাষ্যমতে, যদি দিনে ৫ লাখ করোনা রোগী পাওয়া যায়; এর বাইরে আরও ২৫লাখ আক্রান্ত হয়েছেন এটা ধরেই নেওয়া হয়। সারা পৃথিবীতে যদি এখনও ৩০ লাখ মানুষ করোনা নিয়ে বেঁচে থাকেন, তাহলে প্রতিনিয়ত তারা এই প্রাণঘাতি রোগ ছড়াচ্ছেন। বলেন, এতো মানুষের করোনা যখন থাকে, – তখন বলা হয়; ভাইরাস ট্রান্সমিশনটা অনেক বেশি হচ্ছে। এটি (ভাইরাস) পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনায় বেশি দেখা যায়। গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে ভাইরাস পরিবর্তনের খবর আমরা দেখতে পারছি। এই পরিবর্তনের মধ্যে দুইটি দিক থাকতে পারে; একটি দুর্বল হয়ে করোনা সংক্রমণ কমতে পারে এবং অন্যটি শক্তিশালী হয়ে আরও বেশি আক্রান্ত হতে পারে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে আমরা যেটা দেখেছি, ওমিক্রন বিএটু ভ্যারিয়েন্টটি ১০ থেকে ১২ ভাগ কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হওয়ার ঝূঁকিই বেশিই। বলেন, – হয়ত ওই সব দেশের মানুষের বেশি হারে টিকা দেয়া আছে। তাই সংক্রমণ কম এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগছে না। এগুলো এখন গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, করোনা থেকে রক্ষা পেতে সর্তক হওয়ার বিকল্প নেই। আমাদের অত্যন্ত সর্তক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যদি আমরা না মানি তাহলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যে বিপদে পড়ছে আমরাও পড়তে পারি। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন ও হংকংয়ে করোনার প্রার্দুভাব বেড়েছে। এসব দেখে আমাদের সর্তক হতে হবে। বর্তমান এই পরিস্থিতিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। তা না হলে ডায়রিয়ার মতো রোগগুলো হাতের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে অসুস্থ হতে পারে। আর হাত ধোঁয়া ছাড়া কোনো খাবার স্পর্শ করা যাবে না, যোগ করেন আইইডিসিআরের এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মলয় কান্তি মৃধা বলেন, আমরা এখনও বলতে পারব না করোনা বিদায় নিয়েছে। যেহেতু করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আছে। আপনারা জানেন ইউরোপ কিংবা ইউকে’তে নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যাবে না, – এটা বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে। আরও বলেন, করোনা যেহেতু চলে যায়নি; তাই এটা নিয়েই আমাদের থাকতে হবে। অন্যান্য ফ্লুর মতই এটা থেকে যাবে। তাই সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখে চলা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এবং ঘন ঘন হাত-ধোয়ার যে পদ্ধতি বর্তমানে আমরা অনুসরণ করছি এটি হাইজিন পদ্ধতি ও ভালো প্যাকটিস এগুলো মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নিলেই করোনা হবে না, – এটা ঠিক না। তবে প্রাকটিসটা থাকতে হবে। এতে আক্রান্ত হলেও ক্ষতির পরিমাণটা কম হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com