সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

বিষ দিয়ে মাছ শিকার \ মৎস্য শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১ মার্চ, ২০২৫

এম আবু ইদ্রিস \ সোনালী অতীতে বাংলাদেশী মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বাঙালিপণার, রীতিনীতি উজ্জ্বল ঐতিহ্যের একটা অংশ ছিল মাছে ভাতে বাঙালি। রীতিমতো তিন বেলা ভাতের প্লেটে মাছ থাকতেই হবে। মাছ বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য তালিকায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এজন্যই আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। আজও ম্লান হয়নি এ ঐতিহ্য। তবে ঐতিহ্যের আলোক ঝটিকা কিছুটা কমেছে। প্রাকৃতিকভাবে মাছ চাষ, অল্প সময়ে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় প্রাকৃতিক খাদ্য দিয়ে মাছ দ্রুত তাজা ও বৃদ্ধিকরন, এতে মাছের প্রাকৃতিক স্বাদ হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়াও মনুষ্য সৃষ্টি সংকটের কারণে প্রাকৃতিকভাবে মাছ প্রজনন ও উৎপাদন কমে যাওয়াই প্রাকৃতিক মাছের পরিমান কমে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক মাছের বাজার মূল্য বেশ চড়া হওয়াই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য মাছ কিনে খাওয়া দুঃসাধ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চড়ামূল্য ও চাষী মাছের স্বাদের কমতির কারণে ভোজন প্রিয় বাঙালি জীবনে মাছ খাওয়ার পরিমান কিছুটা কমেছে। সামুদ্রিক ইলিশতো এখন সোনায় সোহাগা। চড়া বাজার মূল্যের কারণে নিম্ন, মধ্যবিত্ত পরিবারে কিনে খাওয়ার কোন উপায় নেই। মাছের একাল —সেকালের বৈষম্যের এই দায়ভার জেলেদের। মূলত সাগর বা নদীতে কিংবা অভ্যন্তরীণ খাল বিলে মাছ নিধনে মনুষ্য সৃষ্ট অসংখ্য কারণ আছে। সাগর বা নদীতে জেলেরা নিষিদ্ধ নেট জাল চুরি করে ব্যবহার করছে। দীর্ঘক্ষণ এ জাল পেতে রাখার কারণে, জোয়ারের পানির স্রোতের তীব্রতায় বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান সাদা মাছের ডিম ও রেনুপোনা জালের ভিতরেই বিনষ্ট হচ্ছে। তার উপরে জেলেরা চর বা সমতল ভূমিতে যেটা ধরে নিয়ে আসে সেগুলো শুকনো জায়গায় ফেলে মেরে দেয়। এ ভাবে তারা নেট জাল পদ্ধতি ব্যবহার করে কোটি কোটি রেনু পোনা বিনষ্টের মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় সামান্য কিছু বাগদা বা গলদা চিংড়ির রেনুপোনা সংগ্রহ করে ।এছাড়া জেলেরা সাদামাছ শিকারে অবৈধ ফাঁস জাল, কারেন্ট জাল ব্যবহার করে ছোট—বড় মাঝারি সব মাছ নির্বিচারে শিকার করছে। অসীম চাহিদা পূরণে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলে লাগামহীন অসহ— প্রতিযোগিতায় জেলেরা। এছাড়া মাছের অভয়ারণ্য নিষিদ্ধ এলাকায় জেলেরা সু কৌশলে গোপনে প্রবেশ করে মাছ শিকার করছে। প্রজনন মৌসুমে ও ৪০ কিলোমিটার কম গভীর পানিতে মাছ শিকার সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকলেও সে আইন লঙ্ঘন করে মৎস্য শিকারে নৈতিকতাহীন প্রতিযোগিতায় নেমেছে জেলেরা। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন জেলেদের নিষিদ্ধ নেট জাল, কারেন্টজাল, ফাস জাল, ট্রলিং বোর্ড আটক পূর্বক জেলেদের জেল জরিমানা করছে। জীবন—জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস মৎস আহরণ হওয়ায় মানবিক মূল্যবোধের কারণে আদালত তাদেরকে ছেড়ে দিচ্ছে। জেলেরা মা মাছ তো হরহামেশাই ধরছে। তারউপরে সাগর, নদীর জোয়ার ভাটা কে কাজে লাগিয়ে কীটনাশক বা বিষ প্রয়োগ করছে। তারা জোয়ারের সময় সাগর বা নদীর নির্জন এলাকায় যেয়ে বিষ প্রয়োগ করে। এ বিষ জোয়ারের পানিতে ছড়িয়ে পড়ে দূর দূরান্তে। ফলে অগণিত, অসংখ্য বিভিন্ন প্রজাতির রেনু পোনা সহ সাদা মাছ মারা যায়। এভাবে ডিম রেনুপোনা সহ সাদা মাছ সমূলে নিধন হচ্ছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলের সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি জানান এখন আর আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। আগে দুই থেকে তিন ঘন্টায় যে মাছ পাওয়া যেত এখন সে মাছ ধরতে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা সময় লাগে। দিন দিন মৎস শিল্প হুমকি মুখে পড়ছে। মাস শুন্য হয়ে পড়ছে আমাদের সাগর নদী। অথচ এই মৎস্য শিল্প আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে সরকারি রাজস্ব আয়ে একটা বিশাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ দেশগুলোতে এ দেশীয় ইলিশ, গলদা ও বাগদা চিংড়ির ব্যাপক চাহিদা আছে। পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও এদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি হয়। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা অপর সম্ভাবনাময় আমাদের এই মৎস্য শিল্প টিকিয়ে রাখতে জন সচেতনতার বিকল্প কিছু নেই। পাশাপাশি অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ কারী জেলেদেরকে কঠোরভাবে আইনি আওতায় আনতে হবে। বাধ্য করতে হবে সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে মৎস্য আহরণ করতে। তাহলে সাগর বা নদীতে প্রাকৃতিকভাবে মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধি হবে। আন্তঃ দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে আরো বহু গুনে মাছ বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। মাছের বংশ বিস্তার, বৃদ্ধি পেলে এদেশের মৎস্য শিল্প পুনরায় ফিরে পাবে সোনালী দিনের অতীত ঐতিহ্য।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com