বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সাতক্ষীরা শহর জামায়াতের রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে জেলে বাওয়ালীদের লাইফ জ্যাকেট বিতরণ ও রেসকিউ বোটের উদবোধন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা : রাস্তায় মানুষের ঢল কালিগঞ্জে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্র’র সাথে অনৈতিক কাজের অভিযোগ শ্যামনগরে এসওডির উপর পুনরূজ্জীবিতকরণ রিফ্রেশার্স প্রশিক্ষন অনুষ্ঠিত কেশবপুরের হাসানপুরে তারুণ্যের ভাবনায় নতুন বাংলাদেশ শীর্ষক কর্মশালা, সমাপনী ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত আশাশুনি সিএস ও এসএ ম্যাপ অনুযায়ী নদী খননের দাবীতে মানববন্ধন কলারোয়ায় যুবদলের কর্মী সমাবেশ কলারোয়ায় স্কাউটস এর ত্রি—বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে কৃষকের মৃত্যু

ব্যয় ও সিস্টেম লস কমিয়ে লোকসান ঠেকাচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৫

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: অভ্যন্তরীণ ব্যয় ও সিস্টেম লস কমিয়ে লোকসান ঠেকাচ্ছে দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো। বিগত সরকারের আমলে দেশের চাহিদা বিবেচনা না করেই একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এমনকি জ্বালানির সংস্থান না থাকার পরও বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। ওই ধরনের হঠকারী পরিকল্পনার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। আর উচ্চ জ্বালানি ব্যয়ের কারণে এবং মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাড়ার কারণে গত দুই বছরে বিদ্যুতে খরচ অনেক বেড়েছে। ফলে ২০২২—২৩ ও ২০২৩—২৪ অর্থবছরে সব বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিই লোকসান করেছে। তবে এর আগের ২০২১—২২ অর্থবছরে পাঁচটি বিতরণ কোম্পানির মধ্যে লাভে ছিল তিনটি। যদিও একই সময়ে গ্রাহক পর্যায়ে চার দফা বাড়ানো হয়েছিল বিদ্যুতের দাম। আর দাম বাড়ানোতে গত অর্থবছরে চারটি কোম্পানির লোকসান কমে এসেছে। কেবল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর লোকসান বেড়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ পড়ছে ১১ টাকার বেশি। তবে ২০২২—২৩ অর্থবছরের শুরুতে এর বিক্রয়মূল্য ছিল পাইকারিতে ৫ টাকা ১৭ পয়সা। পরে তা তিন দফা দাম বৃদ্ধি করা হয়। এতে গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যহার দাঁড়ায় ৭ টাকা ৪ পয়সা। অর্থাৎ পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৩৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর ওই সময় বিতরণ পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয় ২৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। পাইকারির চেয়ে খুচরায় বিদ্যুতের দাম কম বাড়ায় বিতরণ কোম্পানিগুলো লোকসানে পড়ে। গত ফেব্রুয়ারিতে বিতরণ পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ডিমান্ড চার্জ বাড়ানো হয়েছে। তাতে গত অর্থবছর লোকসানের পরিমাণ ২০২২—২৩ অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। তবে ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম কমপক্ষে আরো ১০ শতাংশ বাড়ানো কথা বলছেন বিতরণ কোম্পানিগুলো। সূত্র জানায়, বর্তমানে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)। ওই দুই কোম্পানির মধ্যে ২০২১—২২ অর্থবছরে ডিপিডিসি মুনাফা করে ১৬৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর পরের ২০২২—২৩ অর্থবছরে কোম্পানিটি ৬৪৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা লোকসান করে। তবে অভ্যন্তরীণ ব্যয় সংকোচন ও সিস্টেম লস কমিয়ে আনার কারণে ২০২৩—২৪ অর্থবছর কোম্পানির লোকসান অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত অর্থবছর ডিপিডিসি লোকসান করেছে ৩০২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এখন ইউনিটপ্রতি ১৫ পয়সা করে লোকসান হচ্ছে। আর ট্যারিফ অ্যাডজাস্ট না হলে লোকসান মিনিমাম পর্যায়ে আনা সম্ভব হবে না। আর ঢাকার বিদ্যুৎ বিতরণের অন্য কোম্পানি ডেসকো ২০২১—২২ অর্থবছর লাভ করেছিল ৬৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আর ২০২২—২৩ অর্থবছর ৫৫৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা লোকসান করে। পরের ২০২৩—২৪ অর্থবছর লোকসান করে ৫১৮ কোটি ৪ লাখ টাকা। তাছাড়া দেশের দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ২০২১—২২ অর্থবছর লোকসান ছিল ৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ২০২২—২৩ অর্থবছর লোকসান বেড়ে ২৭৩ কোটি ৩ লাখ টাকা হয়। আর ২০২৩—২৪ অর্থবছর লোকসান কিছুটা কমে, যার পরিমাণ ২০৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। দেশের উত্তর—পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা নর্দান ইলেকট্রিসিটি কোম্পানি (নেসকো) ২০২১—২২ অর্থবছর মুনাফা করে ৩১ কোটি ১২ লাখ টাকা। পরের ২০২২—২৩ অর্থবছর লোকসান করে ৮৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আর ২০২৩—২৪ অর্থবছর লোকসান কমে দাঁড়ায় ২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। চার বিতরণ কোম্পানির বাইরে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্ব পালন করে পিডিবি নিজেই। এই কোম্পানিটি আগে থেকেই লোকসানে আছে। আর দেশের সবচেয়ে বেশি গ্রাহক হচ্ছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি)। মোট ৮০ সমিতির মাধ্যমে কোম্পানিটি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। ২০২১—২২ অর্থবছর সমিতিগুলোর একত্রিত লোকসান ছিল ৫২৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০২২—২৩ অর্থবছর তাদের লোকসান বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৪৯২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ২০২৩—২৪ অর্থবছর তা আরও বেড়ে হয় ২ হাজার ৭২৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। সূত্র আরো জানায়, বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিক্রি করায় দুই মাস ধরে লোকসান হচ্ছে। সামনে লোকসান কমে এলেও তা থেকে মুক্তি মিলবে না, যতোক্ষণ না বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। লোকসান কমাতে প্রতিটি কোম্পানি নিজ নিজ অভ্যন্তরীণ ব্যয় কমাচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের ট্যারিফ বাড়ানো হলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে জনমনে নেতিবাচক বার্তা যাবে। কারণ দেশের মানুষ এমনিতেই দ্রব্যমূল্য নিয়ে চাপে আছে। যদিও বিতরণ কোম্পানিগুলোর মতে, লোকসান আরো কমাতে হলে কোনো কোনো শ্রেণিকে চিহ্নিত করে দাম বাড়ানো যেতে পারে। এতে সাধারণ গ্রাহকদের ওপর চাপ তৈরি হবে না। বিদ্যুতের উৎপাদন পর্যায়ে ভর্তুকি দিলেও গ্রাহক পর্যায়ে কোনো ভর্তুকি দেয়া হয় না। এদিকে দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সহায়তা দিতে যে ঋণ দিয়েছে, তার অন্যতম শর্ত তিন বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে লোকসান শূন্যে নিয়ে আসা। কিন্তু বর্তমান সরকার ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম না বাড়ানোর কথা বলে। বরং লোকসান কমাতে সিস্টেম লস কমানো ও অভ্যন্তরীণ ব্যয় সংকোচনের কথা বলে। ওই প্রেক্ষিতে এখন সেদিকেই মনোযোগ দিচ্ছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম জানান, বেশি দামে কিনে কম দামে গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করায় বিতরণ কোম্পানিগুলোর লোকসান হচ্ছে। ওই লোকসান কমাতে হলে ট্যারিফ বাড়াতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর হলে গ্রাহকদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই লোকসান কমাতে নিজেদের (অভ্যন্তরীণ) ব্যয় ও সিস্টেম লস কমানোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। তবে তাতেও লোকসান থেকে যাবে। যদি ভবিষ্যতে সরকার মনে করলে বিশেষ ক্ষেত্রে কোনো কোনো শ্রেণির ট্যারিফ বাড়াতে পারে। যা একেবারেই সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। সরকারের তরফ থেকে নির্দেশনা দেয়া হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com