জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনশ সংসদীয় আসনের অর্ধেকটিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। অর্থাৎ ১৫০ আসনে ইভিএমে ও বাকি অর্ধেক আসন কাগজে মুদ্রিত স্বচ্ছ ব্যালট বক্সে ভোট হবে, – এটা নিশ্চিত করেছে কমিশন সচিবালয়। যন্ত্রে ভোটটি যাতে সহজে ও ঝামেলামুক্ত দিতে পারেন; ভোটারদের এ সম্পর্কে ধারণা দিতে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হাতে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে কৌশল নির্ধারণের জন্য সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) কমিশন সভা আহবান করা হয়েছে। সকাল ১১ টায় নির্বাচন ভবনে এ সভা বসবে। সভাতে সিদ্ধান্ত আসবে কিভাবে প্রচারের কর্ম-পরিকল্পনা বা পথনকশা অনুযায়ী এগোবে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। তবে, এ যন্ত্রে ভোটদানে কারচুপি, ভোট ডাকাতি-ছিনতাই ও কেন্দ্রদখলের সুযোগ নেই, -এমন নানা ইতিবাচক অনুষঙ্গ যুক্ত করে ব্যাপক প্রচার চালাবে ইভিএমের স্বপক্ষে কমিশন। এ জন্য বিভিন্ন নাট্য-ব্যক্তিত্বসহ গণ-মাধ্যমকে যুক্ত করে ইভিএমের স্বপক্ষে প্রচার চালানো সংক্রান্ত বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। খবর ইসির দায়িত্বশীল সূত্রের। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে রাজি হননি নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) আহসান হাবিব খান। বলেন, সোমবার এ সংক্রান্ত বিষয়ে সভা হবে; এর পর কথা বলা যেতে পারে। তবে, ইসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ইভিএমে ভোটদান হবে ১৫০ আসনে। এসব বিবেচনা করেই ক্রয় প্রক্রিয়াসহ সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ সংখ্যায় দু-একটি কম-বেশি হতে পারে। কেউ দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোটের কথা বলছে, কেউ একশ’র নিচে যন্ত্রে ভোট নেয়ার কথা বলছে, – এমন প্রসঙ্গে সংশ্লিস্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট হবে, – এ নিয়ে সংশয় থাকার কথা নেই। সচিবালয় এ ধরণের বিভ্রান্তিমূলক কথা বলতে পারে না। ঘোষিত দেড়শ আসন ধরেই চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইভিএম বিষয়ে ব্যাপক প্রচার চালানোর জন্য কমিশন সভা হবে; সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর প্রচারে নামা হবে ইভিএম বিষয়ে। মক ভোটিং চালানোসহ ভোটারদের প্রচারের মাধ্যমে যন্ত্রে ভোটদান সহজ সেটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে ইভিএমে ভোট নিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে দ্বিধা-দ্ব›দ্ব নেই। বিভাজন-ও নেই। তবে, জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে এ যন্ত্রে ভোট নিয়ে যত সঙ্কট, বিরোধীতা ও ভোট-কারচুপির বাক্স আখ্যা দিয়ে তা বর্জনে একট্টা একটি পক্ষ। আরেকটি পক্ষ ইভিএমের পক্ষে বরাবরিই সোচ্চার। এ নিয়ে সংলাপ আয়োজন করেছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধিন কমিশন। এতে বিরোধীতা কমেনি। বরং বেড়েছে। তবে সংলাপের এজেন্ডায় ৩৯ নিবন্ধিত দলের মধ্যে অংশ নেয়া ২৯ দলের মতামত উপস্থাপনে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। একটি রাজনৈতিক পক্ষের মতো ইসিও সু-কৌশলে জনমত ইভিএমের পক্ষে দেখিয়েছে। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঘোষিত রোডম্যাপে দেখা যাবে, সরাসরি আওয়ামী লীগসহ ১২টি রাজনৈতিক দল ইভিএমের পক্ষে, সরাসরি এর বিপক্ষে ৬টি দল এবং শর্ত-সাপেক্ষে যন্ত্রের পক্ষে মত দিয়েছে ১১টি দল; এ ধরণের তথ্য উপস্থাপন করা হয় পথনকশায়। ইভিএমের পক্ষে ভোটদানে দুই ধরণের শর্তের কথা বলা হয়েছে, -ইভিএমে ভিভিপ্যাট বা এ জাতীয় কিছু সংযোজন যাতে ভোটারগণ বুঝতে পারেন তারা কোন মার্কায় ভোট দিয়েছেন এবং ভোটারদের মাঝে এটিকে পরিচিত করা, কোন ম্যানিপুলেশনের সুযোগ না থাকলে ব্যবহার করা। এসব নানা সমীকরণ ধরে ইসির কাছে প্রতীয়মান হয়, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মত যন্ত্রের পক্ষে থাকায় এটা ব্যবহার না করা যুক্তি-সঙ্গত হবে না। তবে, ইভিএম ব্যবহার বেশি হবে ঢাকা বিভাগে, সিটি করপোরেশন, জেলা সদরের আসনগুলোতে। সূত্রমতে, সাধারন ভোটারদের সচেতন করার উদ্দেশ্যে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন ধরণের প্রচারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করবে ইসি। নির্বাচনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এ কার্যক্রমে দেশের জনপ্রীয় সাংস্কৃতিক কর্মী, নাট্যকার, অভিনেতা, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংবাদমাধ্যম এবং গণমাধ্যমকে ব্যবহার করা হবে। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ইভিএম প্রচার সংক্রান্ত সভায় পুরো বিষয়টির খোলাসা হবে। জানতে চাইলে ইভিএম প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম সম্পর্কে মানুষ সচেতন করার জন্য ব্যাপক প্রচার কর্মযজ্ঞ হাতে নেয়া হবে। এটার একটা পরিকল্পনা রয়েছে, যা অল্প কথায় এটার ব্যাখ্যা করা কঠিন। মোটাদাগে বলা যায়, ফলোড মিডিয়া, নাটক, সিরিয়াল, লিফলেট, ইউটিউব, ইনসুরেন্সের মাকেটিং, পেপারে বিজ্ঞাপন, স্কিপেবল অ্যাড এবং নন-স্কিপেবল অ্যাড আছে।এছাড়া গুগল ডিসপ্লে নেটওয়ার্ক অ্যাড আছে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের কাছে ১৩০টির মত ইভিএম রয়েছে, যা আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহারের উপযোগী। মজুদ ইভিএমে সর্বসাক্কুলে ৭০-৮০টি সংসদীয় আসনে নির্বাচন করা সম্ভব বলে ইসির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সিদ্ধান্ত নেয়া দেড়শ আসনে নির্বাচনের জন্য আরও দেড়শ ইভিএম কেনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ক্রয় করা এবং ক্রয় প্রক্রিয়ায় থাকা ইভিএম সংরক্ষণে জেলা সদরে গুড়াম ভাড়া নিয়েছে ইসি।