বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১১:৫১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

ব্যাপক প্রস্তুতি রেলের, তারপরও কাটেনি শঙ্কা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪

এফএনএস : এবার ঈদ যাত্রায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা বজায় রাখা ও শিডিউল বিপর্যয় ঠেকাতে গঠন করা হয়েছে মনিটরিং সেল। সেই সঙ্গে রাখা হয়েছে পেট্রোলিংয়ের ব্যবস্থা। দুর্ঘটনাস্থলে দ্রুত সময়ে পৌঁছাতে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে রিলিফ ট্রেন। এছাড়া যুক্ত হচ্ছে অতিরিক্ত ট্রেন ও কোচ। ঈদযাত্রা শুরুর আগেই এসব কোচ ও ইঞ্জিন সংস্কার শেষে যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত। এবার ১৬টি আন্তঃনগর ট্রেন এবং ৭২টি কোচ যুক্ত করা হবে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বেশ কয়েকটি সেকশনে অতিরিক্ত কোচ ও ইঞ্জিন রাখা হচ্ছে। এছাড়া টিকিট কালোবাজারি রোধে এবারই প্রথম ওয়ান টাইম পিন (ওটিপি) ব্যবহার করা হচ্ছে। ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রিও শেষ। তবে এতকিছুর পরও কিছু শঙ্কা কাটেনি। ঈদযাত্রায় রেলে যে বাঁধভাঙা ভিড় লক্ষ করা যায়, তা নিয়ন্ত্রণে প্রতিবছরই হিমশিম খেকে হয় কর্তৃপক্ষকে এবং শেষ পর্যন্ত গিয়ে তা আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না। চলতি বছরও ঈদুল ফিতরে এই আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও হাজার হাজার যাত্রীর বিপরীতে কর্তৃপক্ষ আসনভিত্তিক টিকিট বিক্রি করে। তবে যাত্রার দিন অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে ২৫ শতাংশ সিটবিহীন টিকিট বিক্রি করা হয়। এবার ঈদযাত্রায় ৩ থেকে ৯ এপ্রিল এবং ১৩ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থায় ট্রেন চলবে। এসব ট্রেনের ৩৩ হাজার ৫০০ টিকিটের বিপরীতে প্রতিদিন কয়েক মিনিটের মধ্যে লাখ লাখ মানুষ টিকিট কাটতে অনলাইনে হিট করে। বিনাটিকিটের যাত্রী ঠেকাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। নানা কারণে ঈদযাত্রায় যাত্রী নিয়ন্ত্রণে রেলের হিমশিম অবস্থা দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সীমিত আসন থাকায় সবাইকে কাক্সিক্ষত টিকিট দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে শুধু যাত্রার দিন অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে ২৫ শতাংশ সিটবিহীন টিকিট বিক্রি করা হবে। যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবারও ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কমলাপুর স্টেশন চত্বর থেকে প্ল্যাটফর্ম গেট পর্যন্ত বাঁশের অস্থায়ী বেড়া এবং স্টেশনে যাত্রী প্রবেশের চারটি পথ তৈরি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঈদযাত্রায় স্টেশনে এবং অধিকাংশ ট্রেনে কার হাতে টিকিট আছে অথবা কার হাতে নেই তা দেখা সম্ভব হয় না। টিকিট যাচাই করার অনুকূল পরিস্থিতিও থাকে না। প্রচণ্ড ভিড়ে আবার ট্রেনে টিটিইরাই চলাফেরা করতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে লেন তৈরি করা হচ্ছে। যাতে যাত্রীদের সারিবদ্ধভাবে স্টেশনে প্রবেশ করানো যায়। এতে কিছুটা হলেও টিকিট যাচাই করা সম্ভব হবে। রেলওয়ে পুলিশ ও আরএনবি সূত্র বলছে, প্রায় ৯৫ শতাংশ রেলওয়ে স্টেশন উন্মুক্ত থাকায় স্টেশনে কড়াকড়ি করা যায় না। ট্রেন ছাড়ার পর স্টেশনে সামনে এবং আউটার থেকে বিনাটিকিটে যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে শত শত মানুষ ট্রেনে উঠে পড়ে, অনেকে ট্রেনের ছাদ, ইঞ্জিন ও দুই বগির সংযোগস্থলে অবস্থান নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শত চেষ্টা থাকলেও কিছু কিছু ট্রেনের ছাদে যাত্রী ওঠা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। কারণ শত শত মানুষ আগে থেকে স্টেশনের টিনশেডের ওপর অবস্থান নেয়। ট্রেন স্টেশনে প্রবেশ করতেই ওঁৎ পেতে থাকা মানুষ ট্রেনের ছাদে উঠে পড়ে। ওই সময় একেকটি ট্রেনের পুরো ছাদ লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা করে তাদের নামিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় না। শত প্রচেষ্টায়ও বিনাটিকিট রোধ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। প্রচণ্ড ভিড়ে টিকিটের যাত্রীদের অনেকে নির্ধারিত সিটে পর্যন্ত যেতে পারে না। এক প্রকার ঝুঁকির মধ্যেই বিশেষ করে ঈদযাত্রা পরিচালনা করা হয়। রেলওয়ে অবকাঠামো দপ্তর সূত্র জানা যায়, বিশেষ করে ঈদের তিন দিন আগে থেকে একেকটি ট্রেনে নির্ধারিত যাত্রীদের চেয়ে প্রায় ৫-৬ গুণ যাত্রী চলাচল করে। ছাদে যাত্রী ওঠায় ট্রেনের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। ওই সময় চরম ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালাতে হয়। শিডিউল বিপর্যয়ও ঘটে। এছাড়া ঝুঁকি নিয়ে চলা ট্রেনগুলোর গতি কমিয়ে চালাতে হয়। রংপুর, একতা, মোহনগঞ্জ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ, চট্টলাসহ অন্তত ২০টি আন্তঃনগর ট্রেনের ইঞ্জিনের দুপাশে যাত্রীর জটলা বাঁধে। কমলাপুর স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানান, মানুষের বাঁধ কি আইন বা ঘোষণা দিয়ে রোধ করা যায়। শুধু বিলম্বিত ট্রেন নয়, নির্ধারিত সময়ের ট্রেন পৌঁছতেই যাত্রীরা হুড়মুড় করে ট্রেনে উঠে পড়ে। ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম জানান, বিনাটিকিটের যাত্রী রোধে তিন স্তরের বিশেষ ব্যারিকেডের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টিকিট ছাড়া ট্রেনে ভ্রমণ দণ্ডনীয় অপরাধ। বিষয়টা সাধারণ মানুষেরও বোঝা উচিত। আমরা আশা করছি-টিকিট যার তিনিই ট্রেনে ভ্রমণ করবেন। ঢাকা রেলওয়ে থানা পুলিশের ভাষ্য, তাদের চেষ্টার ত্রুটি থাকে না। তবে শত শত মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তিনি আরও বলেন, দিন দিন ট্রেনের ছাদে মানুষের ওঠা কমে আসছে। ট্রেনে সংখ্যা বাড়লে এমনটা একসময় একেবারেই থাকবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com