শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ০৯:১৪ অপরাহ্ন

ব্রাজিলে প্রেসিডেন্ট প্যালেসে হামলা বিক্ষোভকারীদের

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২৩

এফএনএস আন্তর্জাতিক: মার্কিন ক্যাপিটলে প্রায় দুই বছর আগে ডনাল্ড ট্রাম্পের অনুসারীদের নজিরবিহীন নৈরাজ্যের পুনর্মঞ্চায়ন ঘটল ব্রাজিলে; দেশটির অতি-ডান সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর কট্টর সমর্থকরা তাণ্ডব চালালো প্রেসিডেস্ট প্রাসাদ, কংগ্রেস আর সুপ্রিম কোর্টের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। রয়টার্স লিখেছে, নির্বাচনের পর থেকে দু’মাস ধরে যে টানটান উত্তেজনা চলছি ব্রাজিলে; তারই বিস্ফোরণ ঘটল গত রোববার। পতাকার রঙে হলুদ-সবুজ পোশাকে হাজার হাজার বোলসোনারো সমর্থক প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে এই লঙ্কাকাণ্ডে অংশ নেয়। টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা বানের পানির মত সুপ্রিম কোর্ট ও কংগ্রেস ভবনে প্রবেশ করছে, স্লোগান দিচ্ছে, আসবাবপত্র ভাঙছে। অন্তত তিন হাজার মানুষ এই বিশৃঙ্খলায় অংশ নেয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের ধারণা। পুলিশের সাথে তারা সংঘাতেও জড়ায়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তিন ভবন থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। গ্রেপ্তার করা হয় অন্তত চারশজনকে। সেখানে হতাহতের কোনো খবর তাৎক্ষণিক খবর পাওয়া যায়নি, তবে হামলাকারীরা সবখানে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন রেখে গেছে। প্রেসিডেন্ট প্রসাদের ভাঙা আবসাবপত্র আর জানালার কাচ তাণ্ডবের সাক্ষ্য দিচ্ছে। কংগ্রেস ভবনের ভেতরে আগুন জ¦ালার কারণে স্প্রিংকলার সিস্টেম চালু হয়ে পানিতে ভেসে গেছে চারদিক। সুপ্রিম কোর্টের সেরিমোনিয়াল রুমগুলোও তছনছ করা হয়েছে।গত ৩০ অক্টোবরের ওই ভোটে বামপন্থি লুলা দা সিলভার কাছে হেরে যান বোলসোনারো। ১৩ ডিসেম্বর ব্রাজিলের নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ লুলার জয় অনুমোদন দেওয়ার দিনই বোলসোনারো সমর্থকরা রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় পুলিশ সদরদপ্তর দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল। নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিংয়ে জালিয়াতির অভিযোগ করেছিলেন বোলসোনারো। তার সেই অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও সমর্থকদের সহিংস বিক্ষোভের ইন্ধন জুগিয়েছে। রোববারের হামলা নতুন প্রেসিডেন্ট লুলার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এল, যিনি মাত্র আট দিন আগে সরকারের দায়িত্ব নিয়ে বলসোনারোর উগ্র জাতীয়তাবাদী মতবাদে বিভক্ত জাতিকে আবার ঐক্যবদ্ধ করার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন। বোলসোনারো সমর্থকরা যখন তাণ্ডব চালাচ্ছিল, প্রেসিডেন্ট লুলা তখন সরকারি সফরে সাও পাওলোতে। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এই ভাঙচুর করল, তাদের আমরা কি বলতে পারি… ধর্মান্ধ, ফ্যাসিস্ট। তারা আজ যা করেছে, এই দেশের ইতিহাসে এমন জঘন্য ঘটনা আর কখনও ঘটেনি।” এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে খুঁজে বের করে শাস্তির মুখোমুখি করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট লুলা। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানী ব্রাসিলিয়ার আইন-শৃঙ্খলা সামলানোর দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের হাতেই থাকবে। নির্বাচন নিয়ে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ তুলে সমর্থকদের সহিংসতার পথে উসকে দেওয়ার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোকে দায়ী করেছেন তিনি। নিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই দিন আগে ফ্লোরিডায় উড়াল দিয়েছিলেন বোলসোনারো। নির্বাচনে লুলার কাছে হার তিনি এখনও মেনে নেননি, নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেকেও যোগ দেননি। তার দিকে ইঙ্গিত করে লুলা বলেন, “এই গণহত্যাকারীৃ. মিয়ামিতে বসে সোশাল মিডিয়ায় সে উসকানি দিয়ে যাচ্ছে। সবাই জানে, সাবেক প্রেসিডেন্টের ও্সব বক্তব্যই সহিংসতায় ইন্ধন দিচ্ছে।” ব্রাসিলিয়ার ওই তাণ্ডব নিয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা নীরব ছিলেন বোলসোনারো। পরে তিনি টুইট করে লুলার অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেন। এই সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ গণতন্ত্রেই অংশ। তবে সরকারি স্থাপনায় হামলা এবং ক্ষতিসাধন করা হলে সেটা সীমা ছাড়িয়ে যায়। রয়টার্স লিখেছে, ব্রাসিলিয়ার এই সহিংসতা বলসোনারোর সামনে আইনি ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। আর তার ফ্লোরিডায় অবস্থান করার বিষয়টি মার্কিন সরকারের জন্যও মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। এরইমধ্যে ডেমোক্র্যাট আইন প্রণেতারা বলতে শুরু করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র আর বলসোনারোকে সে দেশে আশ্রয় দিতে পারে না। ব্রাসিলিয়ায় সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একে বর্ণনা করেছেন ‘গণতন্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার হস্তান্ত প্রক্রিয়ার ওপর আক্রমণ’ হিসেবে। তিনি বলেছেন, ব্রাজিলের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দমনে জননিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরকে বলেছে লুলার ওয়ার্কার্স পার্টি। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল দপ্তরের অনুরোধে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক আলেকসান্দ্রি জি মোরাইস সোমবারের প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ব্রাসিলিয়ার গভর্নর ইবানিস হসাকে তার পদ থেকে অপসারণ করেন বলে জানিয়েছে সিএনএন ব্রাজিল। এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা এক ভিডিওতে হসা দাঙ্গা দমনে ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন। ব্রাসিলিয়ার মার্কিন দূতাবাস এক টুইটে ‘যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের রাজধানীর ওই এলাকা এড়িয়ে চলার’ পরামর্শ দিয়েছে। গত শনিবার দাঙ্গার ষড়যন্ত্রের গুজব ছড়িয়ে পড়লে ব্রাজিলের বিচারমন্ত্রী ফ্লাবিও জিনো জাতীয় জননিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের অনুমতি দিয়েছিলেন। গত রোববার টুইটারে তিনি লেখেন, “জোর করে ইচ্ছে চাপিয়ে দেওয়ার এই অযৌক্তিক প্রচেষ্টা হালে পানি পাবে না।” লাতিন আমেরিকার নেতারা দ্রুততার সঙ্গে ঘটনার নিন্দা জানান। “আমার সমস্ত সংহতি লুলা ও ব্রাজিলের জনগণের সঙ্গে। ফ্যাসিবাদ একটি অভ্যুত্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে,” টুইটে বলেছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেদ্রো। চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাবরিয়েল বরিক বলেছেন, “গণতন্ত্রের ওপর এই কাপুরুষোচিত ও জঘন্য হামলার মুখে লুলার সরকারের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।” যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ের পর মার্কিন কংগ্রেসে এর অনুমোদন ঠেকাতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছিল ট্রাম্পের সমর্থকরা। ওই হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত হলেও হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com