এফএনএস আন্তজার্তিক ডেস্ক: ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও দাতব্য সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সদ্য পাশ হওয়া ওয়াক্ফ (সংশোধনী) আইন ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক ও সামাজিক অস্থিরতা। আইনটির সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ইতিমধ্যেই অন্তত ১৫টি মামলা সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার প্রাথমিক শুনানি আগামী ১৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানা গেছে।
এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে ‘ক্যাভিয়েট’ দাখিল করে অনুরোধ জানিয়েছে, মামলার চূড়ান্ত রায় দেওয়ার আগে যেন সরকারের বক্তব্য শোনা হয়।
ওয়াক্ফ অর্থাৎ মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে ব্যবহৃত জমি ও সম্পত্তি নিয়ে ভারতে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে একটি আলাদা আইনগত কাঠামো। নতুন ওয়াক্ফ আইনে সেই কাঠামোয় আনা হয়েছে বড় ধরনের পরিবর্তন।
প্রথমত, কোনও সম্পত্তিকে ওয়াক্ফ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে এখন মুখের ঘোষণা নয়, প্রয়োজন হবে বৈধ লিখিত প্রমাণপত্র। এছাড়া সরকারি মালিকানাধীন জমির উপর ওয়াক্ফ দাবি উঠলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার নিজেই।
দ্বিতীয়ত, ওয়াক্ফ বোর্ড ও ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে মুসলিম নন এমন ব্যক্তিদের অন্তভুর্ক্তির পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, ওয়াক্ফ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে আদালতের হস্তক্ষেপের সুযোগ রাখা হয়েছে, যা পূর্বে ছিল কেবল ওয়াক্ফ ট্রাইব্যুনালের আওতায়।
সবশেষে, সব ওয়াক্ফ সম্পত্তিকে একটি কেন্দ্রীয় নিবন্ধন ব্যবস্থার আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে ছয় মাসের মধ্যে সম্পত্তিগুলোকে নথিভুক্ত করতে হবে সংশ্লিষ্ট ওয়াক্ফ বোর্ডে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আইনটিকে এক “পালাবদলের মুহূর্ত” হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, “ওয়াক্ফ ব্যবস্থায় যুগ যুগ ধরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব ছিল। এই আইন শুধু স্বচ্ছতা বাড়াবে না, নাগরিকদের অধিকারও সুরক্ষিত করবে।” দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, “গরিব মুসলমান, নারী ও শিশুদের সুরক্ষার জন্য এই আইন এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলো একযোগে এই আইনটির বিরোধিতা করছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকাজুর্ন খাড়ে্গ বলেন, “এটি আসলে মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার খর্ব করার একটি সচেতন পদক্ষেপ। আইনটি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
আইনটির সবচেয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন এআইএমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসি। তিনি অভিযোগ করেছেন, “এই আইনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পর্যায়ে ওয়াক্ফ বোর্ডে অমুসলিমদের নিয়োগের সুযোগ তৈরি করে মুসলিমদের নিজস্ব ধর্মীয় সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।”
এই আইন ঘিরে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় পুলিশ—জনতা সংঘর্ষে কয়েকজন পুলিশ আহত হয়েছেন, পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মণিপুরেও দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। উত্তরপ্রদেশে পুলিশ শুরু করেছে মুসলিম বিক্ষোভকারীদের মুচলেকা নেওয়া।