ভারত বর্ষে সুন্দরবন ২১.৩২ ও ২২.৪০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.০ ও ৮৯.০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ রেখার মধ্যে অবস্থিত। এই বনের পশ্চিমে হুগলী নদী দিয়ে পূর্বে ইছামতি, কালিন্দী রায়মঙ্গল নদী। উত্তরে উধসঢ়রৎব ঐড়ফমবং রেখা ও দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর দিয়ে সীমায়িত। গঙ্গা ব্রহ্মপুত্রের মোহনা জুড়ে ভাগীরথী নদী থেকে মেঘনা পর্যন্ত বিস্তৃত। আবদী জমি যা বর্তমান পরগনা সুন্দরবন নামে অভিহিত। সে অংশ বাদ দিয়ে বর্তমান সুন্দরবন জঙ্গল বেষ্টিত ভুখন্ডের উত্তরে সাতক্ষীরা খুলনা বাগেরহাট জেলার সর্বশেষ থানা-শ্যামনগর, কয়রা, দাকোপ, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, কচুয়া। ছোট ছোট নদী খাল ও জনপদ, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। পূর্বে বলেশ্বর নদী ও পশ্চিমে ভারত বাংলাদেশের বর্ডার হাড়িয়াভাঙ্গা কান্দিী নদী ও রায়মঙ্গল অবস্থিত। বাংলাদেশে সুন্দরবনের অবস্থান ২১◦র্ হতে ৮৯◦র্ ৫৫ পুর্ব দ্রাঘিমাংশ এর মধ্যবর্তী। সমগ্র সুন্দরবনের আয়তন প্রায় দশ লক্ষ হেক্টর, তবে বাংলাদেশের অন্তর্গত এ বনাঞ্চলের আয়তন ৬,০০২৩৬. ৭২ হেক্টর। তার মধ্যে ৪,১৪,১৬৩.৩৪ হেক্টর স্থল এবং ১,৮৬.০৭৩.৩৮ হেক্টর জলাভূমি। অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন বর্তমানের প্রায় দ্বিগুন ছিল। তখন বন ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য ছিল কাঠ রপ্তানী করে রাজস্ব আয় করা। বৃটিশ শাসনের শুরুতে এ বনকে বহিরাগতদের মাঝে লীজ দেওয়া আরম্ভ হয়। ইউরোপীয়নরাও এই লীজ গহন করে অমুল্য এ বনাঞ্চলকে পরিস্কার করে আবাদী জমিতে রুপান্তর করতে থাকে। প্রায় অর্ধ শতক ধরে এ ধ্বংস যজ্ঞে সুন্দরবনের আয়তন ব্যাপক হারে কমতে থাকার পর সরকারের চেতনার পরিবর্তন ঘটে। আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর পূর্বে অনেক জরীপ ও তদন্তের পর ১৮২৮ সালে জরীপকৃত এক রেগুলেশনের মাধ্যমে সুন্দরবনের উপর সরকারের একচ্ছত্র মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন বনের অবশিষ্টাংশ রক্ষার তাগিদে ১৮৭৫ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন ঘোষনা করতঃ এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বন বিভাগের উপর ন্যাস্ত করা হয়। সুন্দরবনের প্রথম জরীপ কাজ হয় ১৭৬৯-১৭৭৩ সালে। মেসার্স রিচি রিচার্ডস এবং মার্টি এই জরীপ কাজ সম্পাদন করেন। সুন্দরবনে অভ্যন্তরীন নদীসমূহের গতিপথ নির্ধারণ এই জরীপের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল। ১৮২১-২৩ সাল লেঃ পিন্সেপ হুগলী থেকে যমুনা নদী পর্যন্ত সুন্দরবন সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী আবাদী ভূমির সীমানা জরীপ করেন। ১৮২৯ সালে লেঃ হেজেস বলেশ্বর নদী পর্যন্ত বিস্তৃত বনাঞ্চলের জরীপ কাজ সম্পন্ন করেন এবং এর দু’বছর পর ১৮৩১ সালে ০.৫ ইঞ্চি= ১ মাইল স্কেলে প্রথম সুন্দরবনের ম্যাপ প্রকাশিত হয়।