এফএনএস আন্তজার্তিক ডেস্ক: ভেনিজুয়েলার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিকোলাস মাদুরোর জয় প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী প্রার্থী অ্যাডমান্ডো গঞ্জালেস উরুতিয়াকে বিজয়ী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাসিত এই নেতাকে এবার আটক করতে তার সম্পর্কিত তথ্য চেয়ে পুরস্কার ঘোষণা করেছে ভেনিজুয়েলা সরকার। গত বৃহস্পতিবার এক লাখ ডলার পরিমাণ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এত দিন স্পেনে নির্বাসিত থাকা এ নেতা এখন আর্জেন্টিনার পথে আছেন বলে জানা গেছে। গত বছরের ২৮ জুলাইয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে পরাজিত করেছেন বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছিলেন গঞ্জালেস উরুতিয়া। পরে গত ১ আগস্ট মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এক বিবৃতিতে বলেন, পর্যাপ্ত তথ্য—প্রমাণের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে ভেনিজুয়েলার জনগণের কাছে এটি স্পষ্ট যে অ্যাডমান্ডো গঞ্জালেস উরুতিয়া সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে ২৮ জুলাইয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। এদিকে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের একটি সূত্র এএফপিকে বলেছে, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উরুতিয়া বুয়েন্স অ্যাইরেসে পেঁৗছবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে গঞ্জালেস উরুতিয়া লিখেছেন, ‘লাতিন আমেরিকায় আমাদের ভ্রমণ শুরু হলো। প্রথম স্টপেজ : আর্জেন্টিনা।’ এক্সে একটি বিবৃতিও শেয়ার করেছেন তিনি। সেখানে বলা হয়েছে, আজ শনিবার আর্জেন্টিনার নেতা জেভিয়ার মিলেইর সঙ্গে দেখা করবেন উরুতিয়া। আর্জেন্টিনার প্লাজা দে মায়ো চত্বরে সমবেত হতে ভেনিজুয়েলার নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ১০ জানুয়ারি অনুগত সামরিক বাহিনীর সমর্থনে নতুন মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাদুরোর শপথ নেওয়ার কথা। তবে ৭৫ বছর বয়সী উরুতিয়া সংকল্প করেছেন, দেশে ফিরে মাদুরোর জায়গায় তিনিই প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। ভেনিজুয়েলার পুলিশ গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বল্প পরিচিত সাবেক এই কূটনীতিকের একটি ছবি প্রকাশ করেছে। ছবির নিচে ‘ওয়ান্টেড’ শব্দটি লেখা আছে। বিচার বিভাগীয় সূত্র এএফপিকে নিশ্চিত করেছে যে ছবি–সংবলিত পোস্টারটি সারা দেশের বিমানবন্দর এবং পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে দেখানো হবে। গত জুলাইয়ে ভেনেজুয়েলায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাদুরো বিজয় দাবি করেন। দেশটির ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর কঠোর দমন—পীড়ন শুরু হলে গত সেপ্টেম্বরে বিরোধীদলীয় প্রার্থী গঞ্জালেজ উরুতিয়া স্পেনে পালিয়ে যান। ভেনেজুয়েলা কর্তৃপক্ষ উরুতিযার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ আনার পর গত ২০ ডিসেম্বর স্পেন তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আশ্রয় দেয়। ২০১৩ সাল থেকে ভেনেজুয়েলার ক্ষমতায় থাকা মাদুরো গত নির্বাচনে ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন বলে দেশটির নির্বাচনী সংস্থা ঘোষণা করে। তবে বিরোধী শিবির দাবি করে, ৯০ শতাংশ ভোট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মাদুরোর চেয়ে দ্বিগুণ বেশি ভোট পেয়েছেন গঞ্জালেজ। তিনি নির্বাচন—পূর্ব নিরপেক্ষ জরিপেও মাদুরোর চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। বিশ্বের বৃহত্তম তেলের মজুদ থাকা সত্ত্বেও ভেনেজুয়েলা অত্যন্ত দরিদ্র একটি দেশ। এর কারণ ভেনেজুয়েলায় মাদুরোর ১১ বছরের শাসনের মধ্যে দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক সংকোচন দেখা গেছে। গত কয়েক বছরে সামান্য উন্নতি সত্ত্বেও এখনো লাখ লাখ মানুষের পর্যাপ্ত খাবার ও ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই। জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক কমিশনের তথ্যমতে, মাদুরো ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সাল থেকে প্রায় ৭৭ লাখ মানুষ ভেনেজুয়েলা ত্যাগ করেছেন। খবর এএফপির।