এফএনএস এক্সক্লুসিভ: ভোজ্যতেল নিয়ে দেশে তেলেসমতি চলছে। সরকার ভোজ্যতেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে নানাভাবে চেষ্টা করেও সামাল দিতে পারছে না। সরকার ভোজ্যতেল আমদানিকারকদের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে দুই দফায় শুল্ক কমিয়েছে। তারপরও বিশ^বাজারে অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়াসহ ডলার সংকট ও বিনিময় মূল্য বৃদ্ধির কারণে সরকার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ায়। একইভাবে খোলা সয়াবিন তেল, খোলা পাম অয়েলের দামও বাড়ানোর প্রস্তাবও অনুমোদন করে। মূলত মিলগেট থেকে আমদানিকারকরা সরবরাহ কমিয়ে বাজারে সরবরাহ সংকট তৈরির পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম বাড়াতে সম্মত হয়েছিল। এখন বিশ^বাজারে দাম না বাড়লেও বাজারে কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে আবারো বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হচ্ছে। বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মিল মালিকদের বিরুদ্ধে দেশে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। তাদের এমন কারসাজিতে সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির এক মাসের ব্যবধানে ফের সরবরাহ সংকট দেখিয়ে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে এরই মধ্যে পাইকারিতে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) দগাম ৩০০—৩৫০ টাকা বেড়েছে। ওই হিসাবে কেজিতে প্রায় ১০ টাকা দাম বেড়েছে। সূত্র জানায়, সরকারি পর্যায়ে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির অনুমোদনের পর সয়াবিন তেলের পাইকারি দাম মণপ্রতি কমে ৬ হাজার ২৫০ টাকায় নেমে আসলেও এক সপ্তাহ ধরে তা বেড়ে আবার ৬ হাজার ৫৫০ থেকে ৬ হাজার ৬০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। মূলত মিলগেট থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার কারণে পাইকারি বাজারে এ পণ্যের দাম বাড়ছে। আর দেশের বাজারে দাম বাড়লেও সামপ্রতিক সময়ে বিশ^বাজারে সয়াবিন তেলের দাম নিম্নমুখী। গত ডিসেম্বরে বৈশি^ক বুকিং দর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে। গত মাসে কেনা অপরিশোধিত সয়াবিন তেল জানুয়ারির শেষার্ধে দেশে পৌঁছবে। কিন্তু পাইকারি বাজারে মিলগেট থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার পাশাপাশি ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার থেকে বিক্রি হওয়া এসও (সরবরাহ আদেশ) বাই—ব্যাক করায় বাজার দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। গত অক্টোবরে বিশ^বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের বুকিং দর ছিল ১ হাজার ৯৫ ডলার। নভেম্বরে ৫০ ডলার বেড়ে লেনদেন হয়েছে গড়ে ১ হাজার ১৪৫ ডলারে। কিন্তু ডিসেম্বরজুড়ে সয়াবিন তেলের বুকিং দর ছিল ১ হাজার ৬৪ ডলার। এক মাসের ব্যবধানে ৮১ ডলার কমলেও মিল মালিকরা বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ফের বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ফলে পণ্যটির দাম প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। সূত্র আরো জানায়, ভোজ্যতেলের দাম কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে জারি করা এক আদেশে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল কিংবা পাম অয়েল উৎপাদন ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে প্রযোজ্য মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ১৫ শতাংশ মওকুফ করে। ওই আদেশে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের ওপর আরোপিত মূল্য সংযোজন করও ছাড় দেয়া হয়। আরেক আদেশে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল কিংবা পাম অয়েল আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ভ্যাট ১৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। পৃথক দুটি আদেশের পরও পাইকারি বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ে লিটারপ্রতি অন্তত ১০—১৫ টাকা। দুই দফায় শুল্ক কমানোর পরও বাজারে দাম না কমায় লোকসান এড়াতে খোলাবাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ ডিসেম্বর বৈঠকের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিল মালিকদের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ভোজ্যতেলের নতুন দাম অনুমোদন দেয়। নতুন দাম অনুযায়ী বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৬৭ থেকে ১৭৫ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ এবং খোলা পাম অয়েলের লিটারও ১৪৯ থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়। তাছাড়া তখন বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮১৮ থেকে বাড়িয়ে ৮৬০ টাকা করা হয়। এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মাওলা জানান, সরকার দুই দফায় ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক কমিয়েছে। এরপরও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে দাম বাড়ানো হয়। এখন ফের দাম বাড়ছে। এক্ষেত্রে সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানিকারক পর্যায়ে মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ালে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল থাকবে।