শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:০২ অপরাহ্ন

ভোট টানায় রাজনীতির যত কৌশল

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ বিএনপির ভোট বর্জন এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিতা রক্ষায় ভোট সম্পন্ন করার চ্যালেঞ্জে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে আরেকটি পক্ষ নির্বাচন কমিশন – ইসি। এ পক্ষটি ভোট সুষ্ঠু করায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ভোটারদের উদ্ধুদ্ধ করতে শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) ঢাকার বাইরের সফর সম্পন্ন করেছে। অপর কমিশনাররা দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগগুলোতে ধাপে ধাপে যাচ্ছেন। লক্ষ্য একটাই মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি করে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করা। তিন পক্ষের এই রাজনৈতিক কৌশলে এখনো এগিয়ে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ভোট বর্জনের ডাক এবং কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কমাতে লিফলেট বিতরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ দলটির কার্যক্রম। ভোটের আগে ১০ কোটি লিফলেট বিতরণের টার্গেট রয়েছে দলটির। দু’পক্ষের রশি টানাটানির মধ্যে আগামী ৭ জানুয়ারির ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। এর মধ্যে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বড় একটি ফ্যাক্টর। এই ফ্যাক্টরে উতরে যেতে কৌশলী পথে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের জয়-পরাজয় ভুলে কেন্দ্রে ভোটার টানার দিকেই নজর বেশি এখন দলটির। আসনওয়ারী হিসাবের বাইরে সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডের বিপরীতে ১০ থেকে ১২টি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি কমিটির টার্গেট নূন্যতম শতাধিক ভোটারকে কেন্দ্রে নিয়ে ভোট সম্পন্ন করা। তিনশ সংসদীয় আসনের বিপরীতে এ লক্ষ্যে আড়াই লাখের বেশি কর্মী মাঠে নামানো হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার ভোটার উপস্থিতি ৫০ শতাংশ হবে। সবসময় ৪০ শতাংশের মতই উপস্থিতি হয়। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলের কারণেই বাড়বে ভোটার উপস্থিতি। কারণ কর্মীরা সক্রিয়ভাবে কাজ করলে ভোটে ফল পাবে দলটি। আর দলটির এ ধরণের চিন্তা ইউনিক ও ইনোভেটিভ বলেও মনে করছেন দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিশেষজ্ঞরা। এদিকে, রাজধানী ঢাকাসহ প্রায় দেড়শটি আসনে ইতিমধ্যে রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ ক্যাম্পেইনের’ আওতায় কেন্দ্রে ভোটার হাজির করার কৌশলে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে ২ লাখ ৬৫ হাজার ১৬০ জন ভোট ‘প্রার্থনা’ কর্মী তৈরি হয়েছে। লক্ষ্য সব আসনের বিপরীতে ৬ লাখ কর্মী প্রস্তুত করা। ভোট প্রার্থনা কর্মী বা প্রচারকর্মী তৈরি করতে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে ‘অফলাইন ক্যাম্পেইন’ নামে একটি কর্মসূচি নেওয়া হয়। এর আওতায় সারা দেশে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের টানার কৌশল সম্পর্কে জানতে সাধারণ কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে আলাপ হয় এ প্রতিবেদকের। তাদেরই একজন নোয়াখালির বাসিন্দা ও রাজধানী ঢাকায় হার্ডওয়্যারের মালিক বাচ্চু বলেন, জ্বি, জানি। এবার নির্বাচন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির নির্বাচন। কয়েকটি কৌশল নিয়েছে জানেন, জানিয়ে ওই নাগরিক বলেন, প্রথম কৌশল সাধারণ ভোটারদের বোঝানো আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট; আপনারা সবাই কেন্দ্রে আসবেন। দ্বিতীয়টি বিএনপির পদে নেই কিংবা দলটিকে সমর্থন করে তাদের নানা ধরণের ভীতি দেখিয়ে কেন্দ্রমুখী করানো এবং সর্বশেষটি জোরপূর্বক ও প্রয়োজনে টাকা দিয়ে কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করা। তাদের লক্ষ্য, বিদেশীদের দেখানো কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ভালো। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন। এ ছাড়া ভোট দিয়ে এসে পুনরায় লাইনে দাঁড়িয়ে পড়া। বাচ্চুসহ সাদ্দাম, মনির এবং জামালের বক্তব্য বলা যায় অভিন্ন। আর রাজধানীর পল্লবী এলাকার আওয়ামী লীগের পদধারী ‘এলাহী; ছদ্মনাম কমিটি গঠন বিষয়ে স্বীকার করেন প্রতিদিনের সংবাদের কাছে। বলেন, আমাদের এই ৯১ নং ওয়ার্ডেই স্ট্রিয়ারিংসহ ১০-১২টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সবাইকে ভোটের দিন নূন্যতম ২০০জনকে কেন্দ্রে হাজির করানোর বিষয়ে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। তবে, এর বেশি কিছু বলা যাবে না। কলামিস্ট মোনায়েম সরকার বলেন, রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিবেশ সত্বেও এবার ভোটার উপস্থিতি হতে পারে ৫০ শতাংশের মতো। ভোট টানার এই কৌশলটা কাজে আসবে। কারণ আমাদের দেশে মহিলারা প্রচুর ভোট দিতে যান কেন্দ্রে। সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, দলটির কর্মীরা যদি উদ্যোগী হয় এবং কেন্দ্রীয়ভাবে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিত করার যে কৌশল নিয়েছে সেটা দায়িত্ব মনে করে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন তাহলে এবার ভোটার উপস্থিতি অবশ্যই বাড়বে। বলেন, বিভিন্ন নির্বাচনের ভোট পড়ার শতাংশ হিসাব করলে ৪০ শতাংশ ভোটও বেশি। আর এবার প্রতিকূল পরিবেশে ৩৫ শতাংশ ভোট পড়লেও অনেক বেশি। কারণ আওয়ামী লীগের যে বিশাল সংযোগ ও অবকাঠামো রয়েছে তাতে এই সংখ্যা কম হওয়ার কোনো কারণ নেই। বলেন, মানুষকে যদি নির্ভয় করা যায় ভোট দেয়া ও ভোট নেয়ার, তাহলে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। জানিপপের চেয়ারম্যান ড নাজমূল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, এই যে কৌশলটা খুবই ব্যতিক্রমী ও ইনোভেটিভ। এদের মূল কাজ হচ্ছে ভোটারদের পুল করে কেন্দ্রে হাজির করা। কাজটি খুব কঠিন না।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com