মোঃ রফিকুল ইসলাম \ যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও শান্তিপ‚র্ণ পরিবেশে তুরস্কে ও সিরিয়ায় ভ‚মিকম্পে নিহত সকলের রূহের মাগফেরাত কামনা, মানবজাতির কল্যাণ, সমৃদ্ধি এবং ইহকালে শান্তি ও পরকালের মাগফিরাত এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা শরীফে পীরে-কামেল বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মোজাদ্দেদ, অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংস্কারক, প্রখ্যত সাহিত্যিক, সমাজ সেবক, আত্মাধিক সাধক, সমাজ সংস্কারক, জ্ঞান তাপস, মুসলিম রেনেঁসার অগ্রদুত, মুক্তবুদ্ধি ও অসা¤প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার অধিকারী, মনোচিকিৎসক, ঐতিহাসিক, দার্শনিক, ‘‘স্রষ্টার এবাদত ও সৃষ্টের সেবা” ব্রত নিয়ে চলা নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের প্রতিষ্ঠাতা সুলতানুল আউলিয়া কুতুবুল আকতাব গওছে জামান আরেফ বিল্লাহ হজরত শাহ্ ছুফী আলহাজ্জ খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রঃ) এঁর ৫৯ তম বার্ষিকী ৩দিন ব্যাপী পবিত্র ওরছ শরীফ। গতকাল ১১ ফেব্রæয়ারী শনিবার বাদ ফজর থেকে পাক রওজা শরীফ প্রাঙ্গণে মিলাদ শরীফ ও আলোচানা শুরু হয়ে সকাল সোয়া ১০ টায় আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলহাজ্জ অধ্যাপক ডাঃ আফম রুহুল হক’র সভাপতিতে নলতা শরীফ শাহী জামে মসজিদের খতিব আলহাজ্জ মাওলালা মো. আবু সাঈদ প্রায় আধা ঘন্টাব্যাপি আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন। উক্ত আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে নলতা শরীফ এলাকা ধর্মীয় উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। লাখ লাখ মুসল্লির আমিন, আল্লাহুমা আমিন ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে নলতা শরীফ। মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে অনুনয়-বিনয় করে দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দু’হাত তুলে মহান আল্লাহু রাব্বুল আলামিনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করা হয়। সর্বস্তরের মানুষ অশ্রæসিক্ত নয়নে মহামহিম ও দয়াময় আল্লাহু রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। সেই প্রার্থনার তরঙ্গ এসে মিলেছে দ‚র-দ‚রান্তে হাত উঠানো মানুষের মাঝেও। মোনাজাতে নিজেদের হৃদয়ের আবেগ-অনুভ‚তি আল্লাহর কাছে তুলে ধরেছেন। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ‘আমিন’, ‘আমিন’ ধ্বনি আর চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছেন তারা। ফজরের নামাজের পরই নলতা শরীফসহ আশপাশ এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। নলতা শরীফের এ বিশেষ মোনাজাত সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুক সহ বিভিন্ন মাধ্যমে সরাসরি স¤প্রচার করায় বাসাবাড়ি, দোকান, অফিস, আদালত যে যেখান থেকে পেরেছেন দেশ-বিদেশের মুসলমানরা মোনাজাতে শরিক হন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষ নিজ গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা শুরু করে। আগে যাওয়ার জন্য মুসল্লিরা তাড়াহুড়ো করতে শুরু করে। এতে সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ সড়ক এবং সংযোগ সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। পবিত্র আখেরী মোনাজাতে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্জ ড.আবদুল মজিদ, হবিগঞ্জ আহ্ছানিয়া মিশনের আবু তৈয়ব মো: মাহবুবে খোদা, খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইন্সটিটিউট এর মহাপরিচালক আলহাজ্জ এ এফ এম এনামুল হক। ভক্তের পত্র থেকে পাঠ করেন চট্রগ্রাম আহ্ছানিয়া মিশনের আলহাজ্জ রাশেদ আহমেদ। মিলাদ শরীফ ও ফাতেহা পাঠ করেন হাফেজ মাওলানা মুফতি আশিকুর রহমান। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন কুলিয়া জামে মসজিদের ক্বারী মো: কবিরুল ইসলাম এবং পবিত্র কোরআন শরীফ খতম করেন হাফেজ মো: হাবিবুর রহমান। মোনাজাত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা: আফতাবুজ্জামান, দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্জ মো: মুজিবর রহমান, কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রহিমা সুলতানা বুশরা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কালিগঞ্জ সার্কেল) মো: আমিনুর রহমান, কালিগঞ্জ এসিল্যান্ড মো: আজাহার আলী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আলহাজ্জ ডা: খলিলুল্লাহ, আলহাজ্জ অধ্যাপক ড.আবু তৈয়ব আবু আহমদ, জেলা তথ্য অফিসার মো: জাহারুল ইসলাম, আলহাজ্জ মাওলানা ওসমান গণি, নলতা পাক রওজা শরীফের খাদেম আলহাজ্জ মৌ. আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সাবেক সভাপতি আলহাজ্জ মুহাম্মদ সেলিমউল্লাহ, মিশনের সহ-সভাপতি আলহাজ্জ কাজী রফিকুল আলম, আলহাজ্জ সাইদুর রহমান শিক্ষক, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্জ মো. এনামুল হকসহ মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কেন্দ্রীয় ও দেশ-বিদেশ থেকে আগত আহ্ছানিয়া মিশনের কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, ব্যবসায়ীবৃন্দ, জেলা, উপজেলা, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ, ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবুন্দসহ বিভিন্ন শ্রেনীর পেশার পীর কেবলার ভক্তবৃন্দ আখেরী মোনাজাতে অংশত্রহণ করেন। আখেরি মোনাজাতের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলোয়াত, দুরুদ শরীফ পরিবেশন, হামদ-নাতে রাসুল, মুরশিদি ও কেয়াম পরিবেশন এবং কোরআন-হাদিসের আলোকে সহজ-সরল ভাষায় নিখুঁতভাবে আলোচনা করা হয়। পরিপূর্ণ ইসলামের মধ্যে নিহিত যে, শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফত রয়েছে তার ওপর। ধুলোবালি যাতে না ওঠে সেজন্য পানি ছিটানোর ব্যবস্থা ছিলো। উক্ত ৩দিন ব্যাপী ওরছ শরীফে আগতদের মধ্যে দেখেছি আনন্দ, উৎসাহ, উদ্দীপনা। দেখেছি ওরছ শরীফের সুস্বাদু তাবারক খাবার পর তাদের চোখে মুখে পরিতৃপ্তির ছাপ। কোন একজন মানুষও যেন তাবারক না খেয়ে যায়, সবাই যেন এক লোকমা তাবারক খেয়ে যেতে পারে, কোনরকম যেন তাদের অসুবিধা না হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা করে মিশন কর্তৃপক্ষ। আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকতে কোথাও একটু টান বা গরমিল দেখা যায় নাই। ৩দিন এভাবেই খানাপিনা চলেছে বিরামহীন। এই মহা নিয়ামত ও বরকতপূর্ণ তাবারক খেয়ে যে, কত মানুষের জটিল ও কঠিন অসুখ-বিসুখ, রোগ-শোক, জরা-ব্যাধি বালা-মসিবত, বদজীন-ভূতের তাছির থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায়ও অনেকে এই তাবারুক খেয়েছেন বলেও জানা গেছে। ৩দিন ব্যাপী এই পবিত্র ওরছ শরীফ মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে সুন্দর ও সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়েছে। আখেরি মোনাজাত শেষে বেলা ১২ টা থেকে নলতা শরীফ শাহী জামে মসজিদের নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।