এফএনএস স্বাস্থ্য: আমরা সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ‘ডি’ পেয়ে থাকি। ক্যালসিয়ামের মাধ্যমে শরীরের হাড় গঠন ও মজবুত শরীর গঠনে এটির ভ‚মিকার কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি। কিন্তু ২০০০ সালের শুরুর দিকে শরীরে ভিটামিন ‘ডি’র অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। সেসব গবেষণালবব্ধ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে পাব মেড জার্নালে (চঁন গবফ লড়ঁৎহধষ)।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন ‘ডি’র ভ‚মিকা
সম্পূরক ভিটামিন ‘ডি’ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, শ্বাসতন্ত্রের কোষের ওপর ভিটামিন ‘ডি’র প্রভাব রয়েছে, যা জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন রোধে ভ‚মিকা রাখে। যেকোনো জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে ঢুকলে রোগ প্রতিরোধের অন্যতম উপাদান ম্যাক্রোফেজ সক্রিয় হয়ে ওঠে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে ভিটামিন ‘ডি’ এই ম্যাক্রোফেজকে আরো সক্রিয় করে দেয়, যাতে এটি দ্রুত সাড়া দেয়।
ম্যাক্রোফেজের পরিপূর্ণ গঠনেও সাহায্য করে ভিটামিন ‘ডি’।
ভিটামিন ‘ডি’ আমাদের শরীরে ক্যাথেলিসিডিন নামের একটি প্রোটিনের সংখ্যা বৃদ্ধি করে, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শ্বাসতন্ত্রকে য²ার জীবাণু, বিভিন্ন পজিটিভ, নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ‘ডি’র অভাবে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং এ জাতীয় অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা পরবর্তী সময়ে অ্যাজমার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যদি সম্পূরকভাবে ভিটামিন ‘ডি’ দেওয়া হয়, তাহলে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের হার কমে।
বয়স্কদের ওপর ভিটামিন ‘ডি’র প্রভাব
দীর্ঘমেয়াদি ভিটামিন ‘ডি’র অভাব বয়স্কদের যেকোনো ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে থাকে। বিশেষ করে যাঁরা করোনাসহ বিভিন্ন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন। হাড়ের জন্য ভিটামিন ‘ডি’ খুবই উপকারী। দীর্ঘমেয়াদি ভিটামিন ‘ডি’র অভাবে হাড়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয় এবং হাড় পাতলা হয়ে যায়। এই অবস্থাকে বলা হয় অস্টিওপোরোসিস।
শিশুদের ওপর ভিটামিন ‘ডি’র প্রভাব
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দুগ্ধপোষ্য শিশু থেকে বাড়ন্ত শিশু-সব পর্যায়ে ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতি রয়েছে। যেসব শিশু মায়ের দুধ খায় তাদের ভিটামিন ‘ডি’র দৈনিক চাহিদা ৪০০ আন্তর্জাতিক ইউনিট (আইইউ)। কিন্তু মায়ের দুধ খাওয়ার পরেও তাদের ঘাটতি থেকেই যায়। এসব শিশুর ভিটামিন ‘ডি’র চাহিদা পূরণের জন্য ছয় মাস পর ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ ফর্মুলা দুধ দেওয়ার কথাও বলেছে গবেষণাটি। এ ছাড়া বাড়ন্ত শিশুর দৈনিক চাহিদা ৬০০ আইইউ, যা পূরণ করতে হলে তাদের দৈনিক এক হাজার মিলি দুধ খেতে হবে। এই ঘাটতি দূর করার জন্য তাদেরও ভিটামিন ‘ডি’ সম্পূরক ডোজের দরকার আছে।
গর্ভবতী মহিলাদের ভিটামিন ‘ডি’র প্রভাব
গর্ভবতী মায়েদের ওপর ভিটামিন ‘ডি’র ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই গর্ভবতী মায়েদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে। এ কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন তাঁরা। তাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ‘ডি’ দরকার। এ ছাড়া তাঁদের প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম দরকার। আর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে ভিটামিন ‘ডি’র গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব গর্ভবতী মা ভিটামিন ‘ডি’র অভাবে থাকেন, তাঁদের সন্তানদের জন্মের পর শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার
স্যামন বা টুনা মাছ, দুধ, ডিম, চিজ, মাশরুম, অরেঞ্জ জুস, ইয়োগার্ট ইত্যাদি খাবারে ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায়।
প্রতিদিন কী পরিমাণ ভিটামিন ‘ডি’ দরকার
নির্ভরযোগ্য তথ্য মতে, প্রতিদিন ৪০০ ওট (ওট বা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট) ভিটামিন ‘ডি’র প্রয়োজন। তবে আপনার কী পরিমাণ ভিটামিন ‘ডি’ দরকার, সেটি নির্ভর করে রক্তে কী পরিমাণ ভিটামিন ‘ডি’ রয়েছে তার ওপর। গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বেশির ভাগেরই ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া ভিটামিন ‘ডি’র উৎস সহজলভ্য নয়। এ কারণে ঘাটতি পূরণে আমাদের স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি এক হাজার থেকে চার হাজার আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ সম্পূরকভাবে দৈনিক খাওয়ার কথা গবেষণায় প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ‘ডি’
ভিটামিন ‘ডি’র অত্যন্ত সহজলভ্য একটি উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। কিন্তু এটি থেকে কিভাবে ভিটামিন ‘ডি’ পেতে পারি এ বিষয়ে সঠিক তথ্য অনেকেরই জানা নেই। সূর্যালোক থেকে ভিটামিন ‘ডি’ পেতে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। আমাদের ত্বকের রং, শরীরের কোন অংশ সূর্যালোকে সংস্পর্শে আসছে, কত সময় সূর্যালোকে অবস্থান করছি-এসব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
গবেষণার তথ্য মতে, সাদা ত্বকের ক্ষেত্রে ১৫ মিনিট ও কালো বা বাদামি ত্বকের ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টা দিনের মধ্যভাগে এবং প্রখর সূর্যালোকে অবস্থান করলে পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায়। শরীরের পিঠের অংশ উন্মুক্ত থাকলে বেশি ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
লেখক চিফ কনসালট্যান্ট ও ব্যথা বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন, ঢাকা