দৃষ্টিপাত রিপোর্ট ॥ আমাদের প্রিয় সুন্দরবন, বিশ্বের অনন্য অসাধারন সৌন্দর্য আর সম্পদে ভরা আমাদের এই প্রিয় বন। প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা থেকে উপকুলীয় এলাকার জনপদকে প্রতিনিয়ত রক্ষায় তৎপর আমাদের সুন্দরবন। এই বন জাতীয় রাজস্ব উপার্জনের ক্ষেত্র হিসেবে যেমন বিবেচিত হয়ে আসছে অনুরুপ ভাবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনজীবিকার উৎস্য হিসেবেও চির অম্লান। সুন্দরবনের মধুর বিকল্প কেবলই এই বনের মধু। নানামুখি ঔষধী গুনের অধিকারী মধু মানব দেহের জন্য বহুমুখি উপকারী। এপ্রিল, মে ও জুন এই তিন মাস মৌয়ালরা সুন্দরবনে মধু সংগ্রহে থাকে। সদ্য শেষ হয়েছে মধু সংগ্রহের মৌসুম সুন্দরবন গহীন জঙ্গলে নানান ধরনের গাছ গাছালিতে পরিপূর্ণ বৃক্ষলতায় মৌমাছি বসবাস করে অর্থাৎ মৌচাক তৈরী করে। মৌয়ালরা জীবন বাজি রেখে বাঘের ভয়কে প্রত্যাখান করে অথবা জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি অবস্থানে থেকে মৌচাক হতে মধু সংগ্রহকরে থাকে। যে কোনমুহুর্তে মৌয়ালরা বাঘের আক্রমনের শিকার হতে পারে আর এমন ঘটনাও অহরহ ঘটে থাকে। এপ্রিল মাসে সুন্দরবন সংলগ্ন জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে যারা মধু সংগ্রহে যায় তারা তাদের পরিবার পরিজন হতে বিদায় নিয়ে আসে। মৌয়ালরা দৃশ্যতঃ বাঘের রাজ্যে বাঘের সাথে যুদ্ধে যায়। কেউ বা মধু নিয়ে পরিবার পরিজনের কাছে ফেরে আবার কেউবা বাঘের খাদ্যে পরিনত হয়। সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রাম গুলোতে তাই বাঘ বিধবার সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। সুন্দরবনের মধু আমাদের দেশের ঐীতহ্য এবং অর্থনীতিতে এই মধু অনবদ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। সুন্দরবনের লোনা পানি মাটিতে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন ধরনের গাছে মৌমাছিরা মৌচাক তৈরী করে সেইমধু বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ব ব্যবস্থায় পৌছে দেশের সম্মানকে উচ্চতায় নিচ্ছে। সম্প্রতি সুন্দরবন অভ্যন্তরে মধূ সংগ্রহে যাওয়া মৌয়ালদেরকে প্রশিক্ষন দেওয়া হচ্ছে যথা সময়ে মধু সংগ্রহ করা, মধু সংগ্রহের নিয়ম সেই সাথে মধু সংগ্রহের সময়ে মৌমাছির যেন মৃত্যু না হয় বা আঘাত প্রাপ্তনা হয় এই এই বিষয়টি বিশেষ ভাবে বিবেচ্য। দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃত্রিম ভাবে মৌমাছি পালনের মাধ্যমে মধু চাষ হয় উক্ত মধুর গুনাগুন অপেক্ষা সুন্দরবনে প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদিত মধুর গুনাগুনের শেষনেই। সুন্দরবনকে মৌমাছির অভয়ারন্য গড়ে তুলতে হবে। মৌমাছি পালনে এবং পরিচর্যায় অতি যত্নশীল হতে হবে। মৌমাছির ঝাক যেন আগুনে বা ধোয়ায় পুড়ে মুৃত্যু পতে না যায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সুন্দরবনের মধু সংরক্ষন করতে হবে। এই মধু সংরক্ষন করা গেলে অর্থনৈতিক ভাবে বিশেষ লাভবান হওয়া সম্ভব। বিশ্ব বাজারে সুন্দরবনের মধু রপ্তানীর মাধ্যমে বৈদেশিকমুদ্রা উপার্জনের অবারিত ক্ষেত্র সৃষ্টি করা সম্ভব। সব কিছুর পূর্বে যে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে তা হলো যে মৌমাছির কল্যানে মধু সংগ্রহ সেই মৌমাছির পরিপূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করন। সুন্দরবন অভ্যন্তরে মৌসুমে প্রায় চার হাজার মৌয়ালমধু সংগ্রহে নামে। সকলকে সতর্ক এবং দায়িত্বশীলতার সাথে মৌচাকের মধু সংগ্রহ করতে হবে। সাম্প্রতিক সময় গুলোতে কথিত মৌয়ালরা কৃত্রিম মধু সুন্দরবনের মধু বলে বিক্রি করার অপচেষ্টা করছে। স্থানীয় ভাবে চিনি সহ বিভিন্ন ধরনের মেডিসিনের মাধ্যমে ভেজাল মধু তৈরী করার অনৈতিকতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সুন্দরবনই শেষ কথানয় সুন্দরবন একই সাথে মধুবন মধু বনের মধুর ঐতিহ্য, সম্মান এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যেন কোন ভাবে হ্রাস না পায় সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবেন এমন প্রত্যাশা সুন্দরবনের মধু প্রেমিকদের।