মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি \ যশোরের মনিরামপুরে জনসেবা উৎপাদন ও বিপনন সমবায় সমিতি লি: নামে একটি সমবায়ী প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মাহাবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১২৫ জন গ্রাহকের জমাকৃত(ফিক্সড ডিপোজিট) দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মেয়াদ শেষে টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ভূক্তভোগীদের রোষানল থেকে রক্ষা পেতে সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। দেড় থেকে দুইগুন লভ্যাংশের প্রলোভনে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ফিক্সড ডিপোজিট করা ১২৫ গ্রাহক সর্বশান্ত হয়ে টাকা ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ধর্না দিচ্ছেন। জানাযায়, ২০১৬ সালে যশোর জেলা সমবায় অধিদপ্তর থেকে জনসেবা উৎপাদন ও বিপনন সমবায় সমিতি লি: নামের এ প্রতিষ্ঠানকে রেজিষ্ট্রেশন দেওয়া হয়(নিবন্ধন নং ৬৩/জে/২০১৬)। মনিরামপুর পৌরশহরের দক্ষিনমাথায় একটি সুসজ্জিত অফিস ভাড়া নিয়ে সমিতির কার্যক্রম শুরু করা হয়। নিয়োগ করা হয় একজন ম্যানেজার ও কয়েকজন মাঠকমীর্। আর এ সমিতির মোট সদস্য করা হয় ৩৫০ জনকে। যদিও সমিতিকে কোনপ্রকার ফিক্সড ডিপোজিট অথবা মাসিক মুনাফা ভিত্তিক স্কীম চালুর কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি সমবায় অধিদপ্তর থেকে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে সমিতির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান ও সেক্রেটারী এমএ গফ্ফার সমবায় আইন উপেক্ষা করে দেড় থেকে দ্বিগুন লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে চার বছর থেকে শুরু করে সাত বছর মেয়াদের ফিক্সড ডিপোজিট স্কীম এবং মাসিক মুনাফা ভিত্তিক ডিপোজিট স্কীম চালু করেন। ফলে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের মাছনা গ্রামের শারিরীক প্রতিবন্ধী শাহাদাত হোসেনের কাছ থেকে দ্বিগুন লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পাঁচ লাখ, শ্যামকুড় ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের ভাজা বিক্রেতা মাসুদুর রহমানের নিকট থেকে চার লাখ, আমিনপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক মনিরুজ্জামানের কাছ থেকে পাঁচ লাখসহ ১২৫ জন গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন হারে মোট দুই কোটি ফিক্সড ডিপোজিট করা হয়। সে মোতাবেক ডিপোজিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর লভ্যাংশসহ টাকা ফেরত নিতে আসলে গ্রাহকদের সাথে তালাবাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে টাকা পরিশোধের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হলে গত জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে রাতারাতি অফিস বন্ধ করে সাইনবোর্ড নামিয়ে সমিতির সভাপতি মাহাবুবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা পালিয়ে যান। অনুসন্ধানে জানাযায়, প্রতারক চক্রের মূল হোতা মাহাবুবুর রহমানের বাড়ি উপজেলার ঢাকুরিয়া ইউনিয়নের ব্রাম্মনডাঙ্গা গ্রামে হলেও তিনি পরিবার নিয়ে শ্যামকুড় ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে তার শ^শুর বাড়িতে ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করেন। ভূক্তভোগী গ্রাহক শাহাদাত হোসেন জানান, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় সমিতির সভাপতির কাছ থেকে বিভিন্ন হারে এ পর্যন্ত এক লাখ ২৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। বাকী টাকার জন্য মাহাবুবুর রহমান তাকে একটি চেক দেন। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে ব্যাংকে গিয়ে জানাযায় তার সেই একাউন্টে কোন টাকা জমা নেই। একই অভিযোগ করে মনিরুজ্জামান জানান, তাকেও একটি চেক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের সেই একাউন্টে কোন টাকা জমা নেই। এ দিকে জনসেবা সমিতির সেক্রেটারী এমএ গফ্ফার জানান, তিনি সেক্রেটারী হলেও সমিতির সকল টাকা পয়সা ছিল সভাপতি মাহাবুবুর রহমানের হেফাজতে। এসব টাকার দায়ভার মাহাবুরের ওপর চাপিয়ে এমএ গফ্ফার বলেন, ইতিমধ্যে তার(মাহাবুর) কাছ থেকে দায়মুক্তি হিসেবে একটি লিখিত নিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। এ দিকে ভূক্তভোগীদের রোষানল থেকে রক্ষা পেতে প্রতারক চক্রের মূল হোতা মাহাবুবুর রহমান, ম্যানেজার মনিরুজ্জামান, মাঠকমীর্ মোস্তাফিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা আত্মগোপনে চলে যান। তবে অনেক চেষ্টার পর মোবাইল ফোনে মাহাবুবুর রহমান জানান, তিনি অচিরেই তার সম্পত্তি বিক্রি করে পাওনাদারদের টাকা পারিশোধ করবেন। এ দিকে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম জানান, জনসেবা সমিতিকে কোনপ্রকার ফিক্সড ডিপোজিট অথবা মাসিক মুনাফা ভিত্তিক স্কীম চালুর কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি। এছাড়া সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০২৪ সালের জুন মাসে সমিতির রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করা হয় জেলা সমবায় অধিদপ্তর থেকে।