এফএনএস স্পোর্টস: টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে মূল ঘাটতির জায়গা দুটি- বাউন্ডারি পর্যাপ্ত আসে না, সিঙ্গেলস-ডাবলসও যথেষ্ট পরিমাণে হয় না। যেটির মানে দাঁড়ায়, ব্যাটিংয়ের কিছুই আসলে তেমন ঠিক নেই! ব্যাটিংয়ের কোন দিকটি নিয়ে আগে কাজ করবেন শ্রীধরন শ্রীরাম? বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট হিসেবে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্ন শুনে চোখ নাচিয়ে মুখে হাসি নিয়ে শ্রীরামের উত্তর, “ভালো প্রশ্নৃএটির জবাব আমরা দেব যখন মাঠে খেলব।” শ্রীরাম দায়িত্ব নেওয়ার পর এক সপ্তাহের কম সময়ে এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচটি খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এতটুকু সময়ে তিনি দলকে কতটা বদলে দেবেন, সেই সংশয় আছেই। তবে এভাবে ‘মাঠে জবাব দেওয়ার’ ঘোষণা দিতেও তো আত্মবিশ্বাস লাগে! আত্মবিশ্বাসের কমতি যে শ্রীরামের নেই, তা তার কথাতেই পরিষ্কার। কণ্ঠে এতটা জোর পাওয়ার আরেকটা কারণও তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন এই সংবাদ সম্মেলনে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ভুগছে, ধুঁকছে, উন্নতির লেশ খুব একটা নেই। কিন্তু সেটা তো শ্রীরাম জমানার আগে! সেই বাংলাদেশ দলের কোনো চিহ্ন, কোনো ক্ষত শ্রীরামের মনের ভেতর নেই। তার বিশ্বাস, নিজের দর্শন আর ঘরানা দিয়ে টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে তিনি নতুন পথের দিশা দিতে পারবেন। “আমি এসেছি নতুন দৃষ্টি নিয়ে। পেছনের কোনো কিছু বয়ে আনিনি। এখানে যা বলা হচ্ছে (এই সংস্করণে বাংলাদেশের বাজে পারফরম্যান্স), আমার কাছে তাই নতুন কিছু। আমি তাই এভাবে দেখছি না।” “আমি এসেছি নতুন ভাবনা নিয়ে, এসেছি নতুন ধারণা নিয়ে, নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে। আমি চাই দলকে একতাবদ্ধ করে নতুনভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে।” এই সংস্করণে নতুন পথের সন্ধান পেতে অনেকটা নাটকীয়ভাবে তাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এনেছে বিসিবি। ৬ বছর অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করার পর চাকরি ছেড়ে কিছুটা ফাঁকা সময় কাটছিল তার। আইপিএলে ব্যস্ততা থাকে তার অনেক, তবে সেটা তো ¯্রফে মাস দুয়েক। এই সময়টায় হুট করে বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পেছনের গল্প শোনালেন তিনি। “ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাজটা ছেড়ে দিয়ে আমি টিএনপিএলের (তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগ) ধারাভাষ্য দিচ্ছিলাম। সে সময় আমি খালেদ মাহমুদের (বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর) ফোন পাই। তারা আমার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়, আমি টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট হিসেবে যোগ দিতে পারব কি না (জানতে চায়)। এরপর সব কিছু খুব দ্রুত ঘটেছে। এই তো, এখন আমি এখানে আপনাদের সামনে।” ‘টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট’ ব্যাপারটিই অবশ্য বাংলাদেশে নতুন। ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টিতে এসব পদবি নিয়মিতই দেখা যায়। জাতীয় দলের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে কখনও কখনও। তবে বাংলাদেশে প্রায় প্রধান কোচের সমমর্যাদায় কনসালটেন্ট আগে দেখা যায়নি। শ্রীরাম নিজেও আগে সহকারী কোচ বা ফিল্ডিং কোচ কিংবা এই ধরনের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এশিয়া কাপের বাংলাদেশ দলে কোনো প্রধান কোচ নেই। তার দায়িত্বের ধরণটা নিয়েও তাই কিছু সংশয়-কৌতূহল আছে। শ্রীরামের অবশ্য দাবি, নিজের কাজের পরিধি নিয়ে তার ধারণা পুরোপুরি স্বচ্ছ। “ব্যাপারটা খুবই সাধারণ। নিজের ভ‚মিকার ব্যাপারে আমি পুরোপুরি পরিষ্কার। আমার কাজ হবে দলে যে সব সম্পদ আছে সেগুলোর সমন্বয় করা। দলে খুব ভালো কয়েকজন স্কিল কোচ আছেন। তাদের কাজে আমার পুরোপুরি আস্থা আছে।” “আমার কাজ হবে মূলত, অধিনায়ক, টিম ডিরেক্টর ও স্কিল কোচদের সঙ্গে কাজ করা এবং এই তিনটি উপাদানকে একসঙ্গে সমন্বয় করা। পাশাপাশি, অস্ট্রেলিয়া ও আইপিএলে আমার যে অভিজ্ঞতা সেটা কৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেন আমাদের যে সম্পদ আছে, যথাযথভাবে তা ব্যবহার করতে পারি। আমি বলছি না, দলকে নেতৃত্ব দেব। আমি মূলত সমন্বয় করব।” প্রথম আসরের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে নেই কোনো জয়। সবশেষ আসরেও হয়েছে ভরাডুবি। এই সংস্করণে সবশেষ ১৫ ম্যাচে জয় কেবল দুটি। এই বাজে ফলের পেছনের কারণ খতিয়ে দেখতে চান না শ্রীরাম! বাংলাদেশের মতো জায়গায় বিদেশি কোচ বা পরামর্শকদের শুরুর চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে এই দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি বোঝা, ক্রিকেটারদের ধরন ও মানসিকতাকে উপলব্ধি করতে পারা। শ্রীরাম ভারতীয় হওয়ায় এখানে সময় খুব বেশি লাগার কথা নয়। সঙ্গে তিনি যোগ করতে চান পেশাদারীত্ব। “বাংলাদেশের সংস্কৃতির মতো একটি জায়গায় এসেছি, আমি জানি এই ছেলেদের বেড়ে ওঠা কেমন, আমার জানা আছে তারা খেলাটাকে কীভাবে দেখে। পাশাপাশি ওই পেশাদারীত্বটাও যোগ করতে চাই। পরিষ্কার একটি লক্ষ্য আমি ঠিক করতে পারি যে পেশাদারীত্বের জায়গায় এই পর্যায়ে কী প্রয়োজন।” টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের আগের পারফরম্যান্সে শ্রীরাম পড়ে থাকতে চান না বটে। তবে সামনে এগোতে হলে তো পেছনের ঘাটতি শোধরানো জরুরি! সেই প্রস্ততি শ্রীরামের আছে বলেই জানালেন। “আমি পরিসংখ্যান দেখছিলাম। উইকেট নেওয়ার গড়ের দিক থেকে, প্রথম তিন উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের সেরা দলগুলির একটি। প্রথম পাঁচ উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা সম্ভবত বিশ্বের সেরা দলগুলির মধ্যে আছি। অনেক কিছুই তাই বাংলাদেশ ঠিকঠাক করেছে।” “তারা কোনটি ভালো করেনি, এসব মূল ব্যাপার নয়। যা কিছু তারা ভালো করছে, সেসবকে আরও শাণিত করতে হবে। এই সংক্ষিপ্ত সময়ে আমার মূল মনোযোগ থাকবে, ওদের শক্তির জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করা এবং সেখান থেকে দলকে গড়ে তোলা। যা কিছু আমরা ভালো করছি না, এসব এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে যদি আমরা ভালো দিকগুলোকে আরও ভালো করতে পারি।”