জিএম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়ে মাঠ অফিসের কর্মকর্তাদের উপরে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে প্রতিপালনের মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ন্যায় সঙ্গত কাজ করতে গিয়ে যে কোনো ধরণের বাধার সম্মুহীন হলে তাৎক্ষণিক কমিশনকে অবহিত করলে আইন ও বিধির আলোকে তা সমাধানে সচেষ্ট থাকবে কমিশন বলেও তাদের আশস্ত করা হয়েছে। তবে, সবাইর আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সবাইকে নিবেদিত ভাবে কাজ করার জন্য কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে। একজন ভোটারযোগ্য নাগরিক যাতে তালিকা থেকে বাদ না পড়েন সেজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার কার্যক্রম সম্পন্ন করার উপরে জোর দেয়া হয়েছে। যৌক্তিক কাজের বাইরে কেউ অনৈতিক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কমিশন, সে বিষয়ে সর্তক থাকতে মাঠ অফিসের কর্মকর্তাদের হুশিয়ারি বার্তা দেয়া হয়েছে। সর্বপরি পুরনো ইমেজ ফিরিয়ে আনতে কমিশনের কার্যক্রম সরকারি কর্মকর্তা—কর্মচারি হিসেবে এমন ভাবে কাজ করতে হবে যাতে অন্য যেকোন সরকারি অফিস থেকে নির্বাচন কমিশনের মর্যাদা অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। ইসির মাঠ অফিসের সঙ্গে প্রথম মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন কমিশনের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার কর্মকর্তাদের এমনিই বার্তা দেয়া হয়েছে বলে সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন। ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এর সঞ্চালনায়, ইসির যুগ্মসচিব ও তিনজন উপসচিব এবং কমিশনের মাঠ অফিসের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাগণ জুম এর মাধ্যমে সভায় অংশ নেন। পরিচিতিমূলক এই সভাটি সকাল ১১টায় শুরু হয়ে সাড়ে ১২টায় শেষ হয়। মাঠ অফিসের চারজন কর্মকর্তা তাদের সমস্যা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। তবে সিইসি ও চারজন কমিশনার দিক—নিদের্শনামূলক বক্তব্য রাখেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেন। সভার সূত্রমতে, কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার দিকনিদের্শনামূলক বক্তব্য রাখেন। বলেন, আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এয়োদশ সংসদ নির্বাচন করার সম্ভাব্য ডেডলাইন। তাই চলমান কর্মযজ্ঞ সমুন্নত রাখতে যার উপরে যে দায়িত্ব অর্পণ করা আছে, সেগুলো আপনারা সঠিকভাবে এবং যথাযথভাবে পালনে সচেষ্ট থাকবেন। এই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে মাঠ পর্যায়ে কেউ বাধার সম্মুখীন হতে পারেন। যদি কেউ এ ধরণের সংকটে উপনীত হন তাহলে তাৎক্ষণিক আমাদেরকে জানাবেন, আমরা আইন ও বিধির আলোকে তা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করব। কর্মকর্তাদের হুশিয়ারি করে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, অনুরোধ করব কেউ অনৈতিক কাজে জড়াবেন না। যদি কারো বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ বা অভিযোগ আসে তাহলে তার বিরুদ্ধে কমিশন কঠোর ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হবে না, সভায় এমনিই বার্তা যোগ করেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেন। সভার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সব চেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে ভোটার তালিকা প্রণয়ন কার্যক্রম নিয়ে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে একটা নিভুর্ল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ সবাইকে নিতে হবে। আমাদের লক্ষ্য এই তালিকা থেকে যাতে একজনও ভোটার যোগ্য নাগরিক বাদ না পড়েন, সে বিষয়ে সর্তকতার পাশাপাশি দায়িত্বশীল ভাবে নিজের উপরে অর্পিত দায়িত্ব পালন করার জন্য আহবান জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। সভায় আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে ভোটার হালনাগাদ শুরু করা হবে বলে কর্মকর্তাদের নিদের্শনা দেয়া হয়। সেখানে জানানো হয়, এই কার্যক্রমের আগে খসড়া ভোটার তালিকা ২ জানুয়ারি প্রকাশ করা হবে এবং ২৬ জানুয়ারির মধ্যে তা সম্পন্ন করা হবে। এ উপলক্ষ্যে ভোটার তালিকা রিভাইজিং অর্থরিটি কতৃর্পক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সেখানে দায়িত্ব বন্টন করে বলা হয়েছে, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় চীফ এক্সিকিউটিভ প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে, মেট্টোপলিটন এলাকায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং জেলা ও অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রিভাইজিং অর্থরিটির দায়িত্বক পালন করবেন। এই খসড়া ভোটার তালিকা দৃশ্যমান করে প্রচার করার জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যাতে নতুন হালনাগাদ শুরু হলে মানুষ আগ্রহ নিয়ে ভোটার হন এবং তথ্য সংগ্রহকারীদেও কাজে সহায়তা করেন। সভায় নির্বাচন কমিশনার কমিশনার ব্রি. জে. (অব) আবুল ফজল মো সানাউল্লা ভোটার তালিকা প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ভোটার তালিকায় ক্রটি চার ধরণের বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। এর মধ্যে একটি একটি নিভুর্ল ভোটার তালিকা প্রণয়নে আমাদের সক্ষমতার দুর্বলতা। দ্বিতীয়টি ছিলো,— এই কাজে অতীতে একটা গ্রুপের ইলমোটিভ অর্থাৎ খারাপ বা নেতিবাচক মনোভাব যাতে একটি গোষ্ঠির বাইরে অন্য কেউ ভোটার হতে না পারেন। তৃতীয়টি,— যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করা এবং চতুর্থটি ইনোভেটিভ চিন্তার অভাব। এগুলো কাটিয়ে উঠা সম্ভব হলে একটি নিভুর্ল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা সম্ভব বলে সভায় তিনি মন্তব্য করেন বলে জানান একাধিক সূত্র। এদিকে, সূত্র আরও জানিয়েছে, কমিশনের ইমেজ সংকট উত্তরণে সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার উপরে জোর দেয়া হয় মতবিনিময় এই সভায়। সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিগত সময়ে নির্বাচনসহ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে ইসির ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে। সংকট উত্তরণ করে কমিশনকে সম্মানজনক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আমাদের সবাইকে বদ্ধপরিকর হয়ে কাজ করতে হবে। সঠিক ও ন্যায়—সঙ্গত কাজের মাধ্যমে ইমেজ পুনরুদ্ধারে সব কর্মকর্তাকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সবাই সরকারের কর্মকর্তা—কর্মচারী। তাই এ হিসেবে আমরা এমনভাবে কাজ করব যেনো অন্য যেকোন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা থেকে নিজেদের অন্য উচ্চতায় আসীন করতে সক্ষম হয়। এই কাজটির জন্য সিইসি সেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগ—অনুযোগ শোনার জন্য পাবলিক হিয়ারিং ডে এবং প্রত্যেক অফিসে অভিযোগ বাক্স স্থাপনের নিদের্শনা দিয়ে সেই আলোকে কাজ করার জন্য কর্মকর্তাদের নিদের্শনা প্রদান করেন বলে সভার সূত্র নিশ্চিত করেন। সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা সিইসির নতুন এই উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানান। এদিকে, সভায় কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আমাদের সবাইর কাজ হবে, — ‘সিরাতুল মুসতাকিম’। অর্থাৎ সবাই সোজা পথে আপনারা চলবেন এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করবেন। অন্যায় বরদাশত করা হবে না। তিনি আরও বলেন, সীমানা বিন্যাস নির্ধারণ কার্যক্রমকে তরান্বিত করার জন্য প্রশাসনিক বিন্যাস কার্যক্রম সম্পন্ন করে মাঠ অফিসের কর্মকর্তাদের কমিশনকে অবহিত করার জন্য পরামর্শ দেন। পাশাপাশি হালনাগাদ ভোটারের সর্বশেষ তথ্য কমিশনকে অবহিত করার জন্য নিদের্শনা দেন। একই সঙ্গে পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে জনসংখ্যার শুমারির সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ করে কমিশনকে অবহিত করার জন্য স্ব স্ব শাখার কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিদের্শনা দেন বলে সভাসূত্র নিশ্চিত করেছে। নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের উদেশ্যে অভিন্ন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। তাই যার উপরে যে অর্পিত দায়িত্ব রয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে পালন করবেন। কাজে কোনো ধরণের শৈথিলতা মেনে নেওয়া হবে না। এদিকে, মাঠ অফিসের শতাধিক কর্মকর্তা অংশ নিলেও চারজন কর্মকর্তা সভায় তাদের সমস্যা তুলে ধেও বক্তব্য রাখেন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা তার বক্তব্যে বলেন, হালনাগাদ ভোটার তালিকা নিভুর্ল করার ক্ষেত্রে বিশেষ এলাকায় বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। এই এলাকায় যারাই ভোটার হবেন সবাইকে নাম অন্তভুর্ক্তির আগে বিশেষ কমিটির মাধ্যমে যাচাই—বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ফরিদপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, এবার হালনাগাদ ভোটার তালিকায় কয় বছরের ডাটা নেয়া হবে, সে সম্পর্কে আমরা এখনো কিছুই জানি না। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া হলে হালনাগাদ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সবাইর জন্য সুবিধা হতো। আর নরসিংদীর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, এবার তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে বেকার যুবকদেও অন্তভুর্ক্ত করা হলে কাজে সফল পাওয়া যেতো। মাদারীপুরের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, ‘ডাসার’কে তৎকালিন সময়ে উপজেলায় রুপান্তির করা হলেও অদ্যবদি সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার নিরসন হয়নি। এসব বিষয়ে কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম সম্পন্নের তাগিদ দেন তারা বলে জানা গেছে।