এফএনএস : পবিত্র মাহে রমজানের আজ বাইশতম দিবস। একে একে ফুরিয়ে যাচ্ছে রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজানের দিনগুলো। আর মাত্র ৭/৮ দিন আছে এই বরকতময় মাসের। এ মাসে মুসলিম মিলাত আলাহ ও রাসুলের আনুগত্য করেছেন এখলাসের সাথে। সকল প্রকার ইবাদত, আনুগত্য ও নেক কাজ কবুলের জন্য শর্ত হলো ইখলাস। ইখলাস ছাড়া যে কোন কাজ এমনকি নেক আমলও ধ্বংস টেনে আনে। এখলাস অর্থ হচ্ছে, একমাত্র আলাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের মুক্তির উদ্দেশ্য নেক কাজ করা। অন্য কোন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য নেক কাজ করা যাবে না। সাময়িক ও জাগতিক স্বার্থে কিংবা কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল, সম্প্রদায়, সংস্থা ও কোন নেক লোকের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য কোন নেক কাজ করা যাবে না। আলাহকে সন্তুষ্ট করলে বান্দাগণও সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। বান্দাকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে আলাহকে সন্তুষ্ট করা যাবে না। আলাহর সন্তুষ্টির জন্য কোন মাধ্যমকে সন্তুষ্টি করার টার্গেট করা যাবে না। কোরআন, হাদীস এবং ইসলামী শরীয়ত ছাড়া আলাহর সন্তুষ্টি লাভের আর কোন উসিলা নেই। কোন নেক ব্যক্তির কবর, আস্তানা, দেবতা, পুরোহিত এবং দরবেশ আলাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি ও তার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম হতে পারে না। তাদের কাছ থেকে ইসলামের বিপরীত নয় এমন সব শিক্ষাই শুধু গ্রহণ করা যেতে পারে, এর বেশি নয়। কোরআন ও হাদীসের বর্ণিত পন্থায়ই কেবল আলাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে। রমযান হচ্ছে, প্রশিক্ষণের মাস। তাই রাসূলুলাহ (সা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও কেবলমাত্র সওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে রমযানের রোযা রাখে, আলাহ তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেন। এখানে কেবলমাত্র সওয়াবের কথা বলার উদ্দেশ্য হলো, এখলাসের সাথে রোযা রাখতে হবে। সওয়াব ও আলাহর সন্তুষ্টি এবং পরকালের মুক্তির নিয়ত ছাড়া রোযা রাখার পেছনে আর কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারবে না। যেখানে এখলাস ও একনিষ্ঠতা থাকবে সেখানে ‘রিয়া’ বা লোক দেখানোর মনোভাব থাকতে পারবে না। লোক দেখানোর উদ্দেশ্য কোন নেক কাজ করলে আলাহ তা কবুল করেন না। রমযানের রোযা আমাদেরকে লোক দেখানোর মনোবৃত্তি দূর করার ট্রেনিং দেয়। যে কোন এবাদত অন্য লোক দেখতে পায়। যেমন- নামায, যাকাত, হজ্জ, কোরআন পাঠ ইত্যাদি। এমনকি গোপনে দান করলেও দাতা এবং দান গ্রহীতা কমপক্ষে দুই ব্যক্তি জানতে পারে। কিন্তুু রোযার বিষয়টি বান্দা ও আলাহ ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না। কেউ রোযার মাসে গোপনে কিছু খেলে, কিংবা পানিতে ডুব দিয়ে পানি পান করলে কারুর দেখার সাধ্য নেই। একমাত্র আলাহর ভয় এবং তার সন্তুষ্টির জন্যই মানুষ রোজা র খে। সেখানে লোক দেখানোর উদ্দেশ্য নয় বরং এখলাসের ভিত্তিতে পুরস্কার লাভ করাই উদ্দেশ্য। আমাদের অতীতের নেক বান্দাগণ এখলাসের কারণে নেক কাজকে গোপন রাখতেন। হাম্মাদ বিন যায়েদ প্রখ্যাত তাবেঈ আইউব সাখাওয়নী সম্পর্কে বলেছেন, আইউব হাদীস বর্ণনা করার সময় খুবই নরম হয়ে যেতেন এবং একদিকে মোড় নিয়ে নাকের শ্লেষ্মা পরিস্কার করতেন। তিনি বলতেন, কি কঠিন সর্দি। কান্না গোপন করার কারণেই বাহ্যিকভাবে মনে হতো যে তার সর্দি হয়েছে। মোহাম্মদ বিন ওয়াসে বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে এমন পেয়েছি যিনি তার স্ত্রীর সাথে একই বালিশে শয়ন করতেন। তার চোখের পানিতে বালিশ ভিজে যেত কিন্তুু স্ত্রী টেরও পেতেন না। আমি আরো এমন ব্যক্তিকে দেখেছি যিনি একই কাতারে নামায পড়ছেন, চোখের পানিতে তার গাল ভেসে গেছে কিন্তুু পার্শের মুসলি আদৌ টের পাননি। তাবেঈ আইউব সাখতিয়ানী সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন, তিনি তা গোপন করার জন্য সকাল বেলায় এমনভাবে আওয়াজ দিতেন যেন তিনি এইমাত্র ঘুম থেকে জেগেছেন। মোখলেস লোকদের সম্পর্কে আলাহ বলেন: ‘যারা তাওবা করে’ সংশোধন করে, আলাহকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরে এবং নিজেদের দ্বীনকে এখলাস ও নিষ্ঠাপূর্ণ করে, তারা মোমিনদের সাথে রয়েছে। আলাহ শীঘ্রই মোমিনদেরকে মহান বিনিময় দান করবেন। ’ এই আয়াতে আলাহ এখলাস সহকারে নেক কাজের মহান বিনিময়ের কথা ঘোষণা করেছেন। এখলাসের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুলাহ (সা) থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি একমাত্র লা-শারীক আলাহর উপর এখলাস, নামায কায়েম ও যাকাতের উপর দুনিয়া ত্যাগ করে আলাহ তার উপর সন্তুষ্ট।’ আবু ইমরান থেকে বর্ণিত, মোয়াজ (রা)-কে যখন ইয়েমেনের গভর্ণর করে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় তখন মোয়াজ বলেন: ইয়া রাসূলুলাহ! আমাদের উপদেশ দিন। রাসূলুলাহ (সা) বললেন, তোমার দ্বীনকে এখলাসপূর্ণ করো, তাহলে কম আমলও তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।’ সাওবান (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুলাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি, মোখলেস লোকদের জন্য সুসংবাদ। তারা হেদায়াতের বাতি এবং তাদের উপর থেকে সকল অন্ধকারাচ্ছন্ন ফেতনা কেটে যায়। দাহহাক বিন কায়েস থেকে বর্ণিত, রাসূলুলাহ (সা) বলেছেন: হে, লোকেরা! তোমারা তোমাদের আমলকে এখলাস ও নিষ্ঠাপূর্ণ করো। আলাহ এখলাস ছাড়া কোন আমল কবুল করেন না।, আবু উমামাহ (রা) বর্ণিত, রাসূলুলাহ (সা) বলেছেন: আলাহ একলাস ও তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য নিবেদিত আমল ছাড়া অন্য কোন আমল কবুল করেন না। কাজেই পরিস্কার হয়ে গেল যে, ইখলাস ছাড়া কোন আমল গ্রহণযোগ্য হবে না, তাই এই মহান রমজান মাসে ইখলাস ও একনিষ্ঠতা অর্জনের প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের সবাইকে মোখলেস হতে হবে।