এফএনএস : আজ পবিত্র মাহে রমজানের ২৭তম দিবস। রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজান। তাছাড়া রমজান হচ্ছে কঠোর পরিশ্রম ও শ্রম সাধনার প্রশিক্ষণের মাস। পরবর্তী এগার মাসে আলাহর আদেশ ও নিষেধ মানার জন্য এই মাসে বার্ষিক প্রশিক্ষণের ৩০ দিনব্যাপী দীর্ঘ কোর্স সমাপ্ত করতে হয়। এটা হচ্ছে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ কোর্স। যে কোন কাজের জন্য পরিশ্রম প্রয়োজন। যে যত বেশি পরিশ্রম করবে তার সাফল্যও ততবেশী হবে। গোটা বছরের ইবাদত তথা নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত সহ অন্যান্য ইসলামী দায়িত্ব পালনেও কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন। রোজা মানুষকে এই কঠোর শ্রমের ট্রেনিং দেয়। দুনিয়ায় মানুষের চেষ্টা-তদবীরকে দুইভাবে ভাগ করা যায়। প্রথম ভোগ-বিলাসের জন্য কামাই-রোজগারের চেষ্টা। দ্বিতীয়তঃ পারলৌকিক শান্তি ও মুক্তির জন্য আলাহর ইবাদতের চেষ্টা-প্রচেষ্টা। মানুষ সাধারণত: প্রথমোক্ত কাজেই নিজের বেশিরভাগ সময়, মেধা ও যোগ্যতাকে ব্যবহার করে। উদ্দেশ্য হলো, গাড়ি-বাড়ি ও শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সম্পদের প্রাচুর্য অর্জন করা। আর এ সকল কিছুর মূলে হচ্ছে, ভালভাবে পানাহার করা, সুস্বাদু ও ভাল খাবার গ্রহণ করা এবং নিজের রসনা পূর্ণ করা ও ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণ করা। কিন্তুু রোযা মানুষের এই সর্বাধিক প্রিয় চাহিদার লাগাম টেনে ধরে পুরো দিন সুস্বাদু খাবার থেকে বিরত থাকতে বলে। যেই খাবারের জন্য গোটা দুনিয়ায় মানুষ হন্যে হয়ে ঘুরছে এবং লড়াই-ঝগড়া মারামারিতে লিপ্ত রয়েছে, সেই মানুষকে খাবার থেকে পুরো দিন বিরত রাখা যে কি কষ্ট তা আমরা অন্য মাসে তুলনা করে বুঝতে পারবো। অন্য মাসে সকালের নাস্তা কিংবা দুপুরের খাবার যদি নির্ধারিত সময়ের চাইতে ১/২ ঘণ্টা দেরী হয় তখন আমরা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ি এবং আর কাজ করা যাবে না বলে মত প্রকাশ করি। তখন খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকেও আমরা খাওয়ার কথা বলে বিরতি নিতে পারি। একবেলা খাওয়া বন্ধের প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া কি হবে তা দেরীতে খাবারের ক্লান্তি ও দুর্বলতার মানসিকতা থেকেই সহজে অনুমান করা যায়। অথচ রমজানে একাধারে দুই বেলা খাওয়া বন্ধ রাখা হয়। এতে অবশ্যই কষ্ট আছে। কিন্তুু সেই কষ্ট ২দিন, ৪দিন কিংবা ১ সপ্তাহ পর্যন্ত হলেও মনকে শান্ত্বনা দেয়া যেত। কিন্তুু দীর্ঘ ১টি মাস এভাবে পরিশ্রম করতে হয়। পানির পিপাসার কষ্ট তো খাবারের চাইতেও মারাÍক। কোন পরিশ্রম বা কাজ করে আসার পর খানা একটু দেরীতে হলেও চলে। কিন্তুু পিপাসায় বুকের ছাতি ফেটে যায়। রোদ থেকে আসলে তো আরো ভয়াবহ অবস্থা! কিন্তুু রোজার মধ্যে তো দিনে খাদ্য ও পানীয় নিষিদ্ধ। দীর্ঘ ৩০ দিন যাবত একটানা এত কঠোর পরিশ্রম। এ ছাড়াও রয়েছে মানুষের পরবর্তী প্রিয় ও প্রয়োজনীয় বিষয় যৌন বাসনা পূরণ করা। কিন্তুু রোজার মধ্যে দিনে তা নিষিদ্ধ। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাঁধার প্রাচীর তুলে নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকার অভ্যাস সৃষ্টি করা হয় দীর্ঘ এক মাসব্যাপী এই রমজানে। সন্ধ্যায় সূর্য ডুবার সাথে সাথে ইফতার। কিন্তুু শরীরের অবস্থা হচ্ছে খুবই দুর্বল ও অবসাদগ্রস্ত। তখন যদি ইফতারের পর শুয়ে আরাম করা যেত, কতইনা ভাল হতো! কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই একামতে বলা হচ্ছে, ‘কাদ কামাতিস সালাহ’ অর্থাৎ নামায শুরু হয়ে যাচ্ছে। ক্লান্তির দাবি ছিল, মাগরিব না পড়া ও রমজানে তা মাফ করে দেয়া। কিন্তুু তাতো হয়নি। মাগরিব থেকে আসার পর শরীরের দাবি হচ্ছে, পূর্ণ বিশ্রাম ঘুম। কিন্তুু এশা পড়াই দায়, সেখানে আবার বয়েছে তাবারীর মতো অতিরিক্ত নামাযের ব্যবস্থা। বলতে গেলে পরিশ্রমের উপর পরিশ্রম এবং কষ্টের উপর কষ্ট। তারাবীর নামায শেষ করে ফিরে এসে ফজর পর্যন্ত একটানা শুয়ে থাকা হচ্ছে ক্লান্ত শরীরের অনিবর্য দাবি। কিন্তুু তাও পূরণ করা যাচ্ছে না। ভোর রাত্রে উঠে সেহরী খাওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে রাত জেগে জেগে ইবাদত ও তাহাজ্জুদ পড়ার তাগিদ। এর দ্বারা কি এ কথা বুঝা যায় না যে, রমজানে আরামের সর্বশেষ চিহ্নটুকুকেও মুছে দেয়ার চেষ্টা কর্যকর আছে? পরিশ্রমের উত্তম কর্মসূচি এর চাইতে আর কি হতে পারে? দীর্ঘ একমাস একটানা এই কঠোর শ্রম-সাধনার পেছনে আলাহর যে ইচ্ছা কাজ করে, তা হলো, মুসলিম মিলাত কখনো অলস, শ্রম বিমুখ ও নিষিক্রয় হবেনা। তাহলে, আলাহর কোন আদেশ নিষেধই তাদের কাছে কঠিন মনে হবে না। তাই আলাহ বলেছেন ঃ মুনাফিকরা নামাঝকে কঠিন মনে করে অথচ মুমিনদের কাছে তা কঠিন নয়। একাকী ও ব্যক্তিগতভাবে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এই প্রশিক্ষণের সুযোগ দিলে কারো পক্ষেই ৩০ দিনব্যাপী রোজা রাখা সম্ভব হতো না। কিন্তুু রমজানের বরকতে আলাহ এ সকল কষ্ট এতো সহজ করে েিয়ছেন যে, রমজান কিভাবে শেষ হয়ে যায়, রোজাদাররা তা টেরও পায় না।