বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ১১:২৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
শান্তি আলোচনার পর ইউক্রেনে বৃহত্তম ড্রোন হামলা চালালো রাশিয়া সিরিয়ায় পুনরায় কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে বিশ্বব্যাংক অপারেশন সিঁদুর নিয়ে মন্তব্য, ভারতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক গ্রেফতার সৌদি আরবে অবৈধদের ধরতে অভিযান, গ্রেফতার ১৫ হাজার হায়দরাবাদের চারমিনারের কাছে ভবনে আগুন, শিশুসহ নিহত ১৭ যে কারণে ব্যর্থ হলো ভারতের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ভারতের জন্য আকাশসীমা আরও এক মাস বন্ধ রাখবে পাকিস্তান: রিপোর্ট ইরানে শিয়া মাজারে হামলার ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ—মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ টর্নেডোয় ২৭ জনের প্রাণহানি যে কারণে পেনাল্টি নেননি হালান্ড

মিঠা পানির ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে ১১৮টি বিপন্ন। জাহাঙ্গীর আলম কবীর

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩

প্রতিবছর মিঠা পানির দেশি প্রজাতির মাছ কমছে আশংকাজনক ভাবে। প্রায় ২৬০ প্রজাতির দেশি প্রজাতির মাছের মধ্যে ৬৪ প্রজাতির মাছ ইতিমধ্যেই মহা বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। আইইউসিএন বাংলাদেশের বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় বলা হয়, ১১৮ প্রজাতির দেশী প্রজাতির মাছ বিপন্ন অবস্থায় আছে। এভাবে বিলুপ্ত হতে থাকলে আগামী পঞ্চাশ বছর পর মিঠাপানির মাছ দেখতে জাদুঘরে যেতে হবে। এমন আশঙ্কা পরিবেশ বিজ্ঞানীদের। এর শূন্যে স্থান পূরণ করছে আগ্রাসী প্রজাতির বিদেশী মাছ। এর মধ্যে আবার কোন কোনটি রাক্ষসী মাছ। দেশী মাছের ক্রমাবিলুপ্তির কারণ খুঁজে বের করেছেন পরিবেশবিদরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচালিত গবেষণায় দেশী মাছ বিলুপ্ত হবার বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে আগ্রাসী প্রজাতির বিদেশি মাছের চাষাবাদ। দেশি প্রজাতির মাছের প্রতি অমনোযোগী হওয়া। প্রজনন ঋতুতে নির্বিচারে মা মাছ ধরা এবং মাছের চলাচল ব্যাহত হওয়া। মাছের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত মাছ ধরা। বাণিজ্যিক মাছ চাষের জন্য পুকুর জলাশয়ে বিষ প্রয়োগ এবং কৃষি জমিতে ঘের বা পুকুর করা। কৃষি জমিতে যথেষ্ট কীটনাশক ব্যবহার করা। উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাওয়া। কৃষি কাজের জন্য সেচ ব্যবস্থা। মাছ ধরতে বিল ও বাওড়কে পানি শূন্য করে ফেলা। কারেন্ট জালের সাহায্যে নির্বিচারে মাছ ধরা। মশারি জালে নির্বচারে পোনা নিধন করা। বন্যা প্লাবিত নিন্মাঞ্চল কমে যাওয়া। খাল নদী ভরাট এবং এগুলোর দূষণ বেড়ে যাওয়া। একই সাথে বৃষ্টিপাত কম হওয়া এবং মাছের বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়া। যেভাবে বাঁধ ও খাল নির্মাণ করা হয়েছে তা মিঠা পানির ছোট মাছের জন্য একটি বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্লাবনের সময় মুক্ত জলাশয়ের বহু মাছ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যায়। পরবর্তীতে প্রজননকালে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে আসার সময় তারা নানা ধরনের বাধার সম্মুখিন হয় আর ফিরে আসতে পারে না। এ সমস্ত স্থাপনায় যে সব ‘ফিশ পাস’ বা মাছ চলাচলের প্যাসেজ রাখা হয়েছে তা অপরিকল্পিত ও সংখ্যায় কম। মাছের গমন পথের ওপর গবেষণা করে এসব ‘ফিশ পাস’ নির্মিত হয়নি। বাংলাদেশে বিদেশি আগ্রাসি প্রজাতির মাছ চাষ শুরু হয় গত শতাব্দীর ৫০ দশক থেকে। ১৯৫২ সালে সিঙ্গাপুর থেকে আনা হয় সিয়ামীস গৌরামী। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান থেকে আনা হয় গোল্ডফিশ। ১৯৫৪ সালে থাইল্যান্ড থেকে আনা হয় তেলাপিয়া। ১৯৫৭ সালে একই দেশ থেকে আনা হয় গুপ্পী। ১৯৬০ সালে আনা হয় কমন কার্প। এটি কোন দেশ থেকে আনা হয় তা জানা যায়নি। ১৯৭০ সালে জাপান থেকে আনা হয় গ্রাস কার্প এবং সিলভার কার্প। ১৯৭৫ সালে থাইল্যান্ড থেকে আনা হয় লাইলোটিকা। ১৯৭৯ সালের নেপাল থেকে আনা হয় মিরর কার্প। ১৯৮১ সালে একই দেশ থেকে আনা হয় বিগ্রেড কার্প। ১৯৮৬ সালে থাইল্যান্ড থেকে আনা হয় থাই সরপুটি। আর ১৯৮৯ সালে একই দেশ থেকে আনা হয় আফ্রিকান মাগুর। আর আমেরিকা থেকে আনা হয় রাক্ষসী পিরানহা। এসব মাছের মধ্যে তেলাপিয়া, কমন কার্প, গ্রাস কার্প, সিলভার কার্প, লাইলোটিকা, থাই সরপুটি, আফ্রিকান মাগুর ও পাঙ্গাস, থাই কই পাবদা এখনো চাষ করা হচ্ছে। এসব বিদেশী আগ্রাসী প্রজাতির মাছ দেশি প্রজাতি মাছের পোনা খেয়ে ফেলে। এভাবে দ্রæতহারে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ ও তার বংশবিস্তার। গুলশা, বালাচাটা, পটকা, কাকশিয়াল, এক ঠোটা, মহাশোল, শোল, গজার, তিলা শোল, পিপলা শোল, ঘোড়া চেলা, চেলা, ছেপচেলা, দারকানা, কাশ খয়রা, মায়া, নান্দই, কালবাউশ, সরপুটি, চেলা পুটি, মোলা পুটি, জাত পুটি, তিত পুটি, নাপিত পুঁটি, কাঞ্চন পুটি, জাইতপুঁটি, রাজপুঁটি, কালা বাটা, রানী, গুতেল, মাগুর, গ্যাং মাগুর, অলুয়া, বোয়াল, পাবদা, মধু পাবদা, কালো পাবদা, খরকি মাছ, চেনুয়া, শিঙ্গি, চেকা, পাঙ্গাস, বাঁশপাতা, বাতাসী, বাছা, মুরি বাচা, রিটা, টেংরা, আইড়, ঘাঘট, বাজা টেংরা, তেলি, গাং টেংরা, দারি, ককসা, টিলা বা হিরালু, টিলা ককসা, বেতাঙ্গি, বেটি বা পুতুল মাছ, ঘর পোয়া, ঘর পইয়া, ঘোড়া মাছ, এলানগা, রিটা, গাঙ্গিনা বা চাকা মাছ, বট শিং, ঘাউড়া, গুজি আইড়, বাঘাআইড়, চিতল, ফোলুই, ফেশা, চাপিলা, তারা বাইন, বড় বাইন, চিরকা বাইন, শালবাইন, খোরশোলা, খলিসা, কই, পোয়া, নুনা বেলে, বেলে, মেনি/ভেদা, চান্দা, লালচান্দা, কড়ি চিংড়ি, ধলা চিংড়ি, বিল চিংড়ি, নন্দী বেলে, তারাবাইন, ছুঁচা বাইন, কুলপো টেংরা, কাচকী, গুতুম, বৈড়ালি, ভাগনা, গনিয়া, পিয়ালি বাগাড়, চরপমহাল, নাককাটা, শিং ওয়ালা রুই, কালাবাটা, শিলবাইলা, চ্যাং , টাকি, ভোটবাইলা, বইচা, চাটুয়া, নাপতানি, চাঁদা, নামা চাঁদা, গোল চাঁদা, বাইলা, তেলা টাকি, ফলি, চেলি, কানপোনা ও কাকিলা সহ অসংখ্য মাছ এখন বিপন্ন। জেলের সম্প্রদায় এসব সমস্যার সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। তারা জানেন দেশি মাছের ঘাটতির মূল কারণ কি এবং কিভাবে এই সমস্যাটির মোকাবেলা করা যায়। বিজ্ঞানী, পরিবেশ তাত্তি¦ক, উনয়ন চিন্তাবিদ এবং জেলে সম্প্রদায়ের মতামত, অভিজ্ঞতা ও লোকায়ত জ্ঞানের যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমেই দেশী মাছের ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com