সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
শুল্কমুক্ত সুবিধায় হাজার হাজার টন চাল আমদানিতেও বাজারে প্রভাব পড়েনি বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ শীতজনিত রোগীর চাপ রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি হাসপাতালে বাড়ছে সাতক্ষীরা পৌর—মেয়রের বরখাস্তের আদেশ অবৈধ: হাইকোর্ট স্কুল থেকে ফেরার পথে ট্রেনে কাটা পড়ে শিশুর মৃত্যু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপি নেতা নিহত মোবাইল—ইন্টারনেটে কর প্রত্যাহার না হলে এনবিআর ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি ভারত থেকে এলো ২৭ হাজার মেট্রিক টন চাল টিউলিপের উচিত ক্ষমা চাওয়া: ইউনূস বিজিবি—জনগণ ‘শক্ত অবস্থান’ নেওয়ায় ভারত পিছু হটেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মূল্যস্ফীতি হ্রাসে জনমনে স্বস্তি এসেছে -সংসদে প্রধানমন্ত্রী

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২৩

এফএনএস: সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে মূল্যস্ফীতির প্রভাব হ্রাস পাওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটোর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এ কারণে রাশিয়ার উপর বিভিন্ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে জ¦ালানি তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। এর প্রেক্ষিতে সরকারকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশেও জ¦ালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করতে হয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এবং গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রাকে স্বাভাবিক ও সচল রাখতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছি। পদক্ষেপগুলো হলো-আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ গত বছরের ৫ আগস্ট গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রলের মূল্য সমন্বয়/পুননির্ধারণ করে। পরবর্তীতে ২৮ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ডিজেলের উপর আরোপিত সমুদয় আগাম কর অব্যাহতি প্রদান এবং আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ পুননির্ধারণ করলে জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ২৯ আগস্ট ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রলের মূল্য লিটার প্রতি ৫ টাকা হ্রাস করে সমন্বয়/পুননির্ধারণ করে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে গত বছরের ফেব্র“য়ারি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের জ¦ালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পায় এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়, যা এখনও অব্যাহত। গত বছর ডিসেম্বর মাসেও আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের গড় মূল্য ১০৬ মার্কিন ডলার/ব্যারেল, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১ হাজার ২৭৫ টাকা। সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের জ¦ালানি তেলের চাহিদা বছরে প্রায় ৬৮ দশমিক ৮৭ লাখ মেট্রিক টন, যার ৭০ ভাগই (প্রায় ৪৮.৩২ লক্ষ মেট্রিক টন) ডিজেল বর্তমানে ডিজেল বিক্রয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) দৈনিক প্রায় ৩ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। যার ফলে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানি তেলের মূল্য হ্রাস পেলে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশেও লোকসান পূরণ করে জ¦ালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিরাজমান বৈশ্বিক সংকট সত্তে¡ও আপামর জনসাধারণের জীবনমান স্বাভাবিক রাখা ও দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে গৃহিত পদক্ষেপগুলো হলো- বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তদারকি অভিযান এবং জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মজুতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে তিন দফায় নীতি সুদহার বা রেপো (রিপারচেজ এগ্রিমেন্ট) হার বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম দফায় গত ২৯ মে থেকে রেপো হার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশে নির্ধারণ করে, পরবর্তীতে ৩০ জুন থেকে তা আরও ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ করে। সর্বশেষ ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে তা আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশে উন্নীত করে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ২ মার্চ আমদানি পর্যায়ে চিনির উপর প্রযোজ্য রেগুলেটরি ডিউটি ৩০ শতাংশ হতে কমিয়ে ২০ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়। ১৪ মার্চ সয়াবিন ও পাম তেলের উপর স্থানীয় উৎপাদন এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে প্রযোজ্য মূল্য সংযোজন কর সম্পূর্ণরূপে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৬ মার্চ সয়াবিন ও পাম তেলের উপর আমদানি পর্যায়ে আরোপিত মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়, যা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কার্যকর ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিদ্যমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বৃদ্ধি করা। সে জন্য সরকারি ব্যয় হ্রাসের উদ্দেশে কতিপয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন- বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলো এ/বি/সি ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়েছে। তন্মধ্যে ‘বি’ ক্যাটাগরি প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে জিওবি অংশের অনূর্ধ্ব ৭৫ শতাংশ ব্যয় করা এবং ‘সি’ ক্যাটাগরি প্রকল্পগুলোর অর্থ ছাড় আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রকল্প দ্রুত সমাপ্তির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামীতে সারা বিশ্বে খাদ্যের দারুণ অভাব দেবে, যার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে খাদ্যের দারুণ অভাব দেখা দেবে, যার কিছু আভাস আমরা পাচ্ছি। তবে আমাদের খাদ্য চাহিদা যেন আমাদের নিজেদের আওতায় রাখতে পারি সেই উদোগ আমরা নিয়েছি। আমি উৎপাদন বাড়াতে, কোনো জমি যাতে পড়ে না থাকে, যে যা পারে উৎপাদন করার আহŸান জানিয়েছিলাম। লক্ষ্য করা যাচ্ছে মানুষ সাড়া দিয়েছে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, রোজা বা উৎসবে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বিশ্বের কোথাও উৎসবের সময় জিনিসের দাম বাড়ানোর চেষ্টা হয় না। কিছু ব্যবসায়ী জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে চাহিদা বাড়ানোর চেষ্টা করতে চায়। তামাক চাষ বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া সম্পর্কে জাতীয় পার্টির সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারির সম্পূরক এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাভাবিকভাবে মানুষ যখন চাষ করে তখন অর্থকরি ফসলের দিকে দৃষ্টি দেয়। এ কথা ঠিক আমাদের অনেক জমি অনাবাদি পড়ে আছে। আমার এলাকার কথাই বলি, সেখানে অনেক অনাবাদি জমি আছে। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এসব জমি চাষের উপযোগী করার। ১০ হাজার একর জমি আবাদ করতে পারবো, সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। যেটা চাষ হচ্ছে সেটা বন্ধ করার থেকে যেটা অনাবাদি পড়ে আছে সেটা আবাদের চেষ্টা করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com