বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫০ অপরাহ্ন

মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা তরুণদের প্রাণহানি ও পঙ্গুত্ব বাড়াচ্ছে

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২

এফএনএস : মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা দেশের তরুণদের প্রাণহানি ও পঙ্গুত্ব বাড়াচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় অনেকে কিশোর বয়সেই পঙ্গু হচ্ছে। মূলত ভয়ঙ্কর এক যানবাহনে পরিণত হয়েছে মোটর সাইকেল। রাজধানীসহ সারাদেশেই বেপরোয়া গতি ও নানা অঙ্গ-ভঙ্গিতে মোটর সাইকেল চালানোর কারণে সড়কেই ঝরে পড়ছে তাজা প্রাণ। দ্রুত গতিতে চলাচল করার কারণে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় অনেক পথচারীও নিহত হচ্ছে। তাছাড়া মোটর সাইকেল চালক ও সাথে থাকা আরোহীকেও দুর্ঘটনায় ট্রাক, বাস, কাভার্টভ্যান ও বড় কোন যানবাহনের ধাক্কায় প্রাণ হারাতে হয়। আশঙ্কাজনকহারে দেশে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর সংখ্যাও। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং স্পাইন এন্ড অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতিদিনই গড়ে ১ হাজারের বেশি রোগী জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) আসছে। আর তাদের অধিকাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। মোটর সাইকেলে দুর্ঘটনার শিকার রোগীরা বেশিরভাগই কিশোর বয়সী। অথচ কিশোর বয়সেই অনেকের পা কেটে ফেলতে হয়েছে। অনেকে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণ করছে। ঈদ ও ঈদ-পরবর্তী সময়ে মোটর সাইকেল নিয়ে দলবেধে ঘুরতে গিয়েও অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় অকালেই ঝরে পড়ছে তাজা প্রাণ। তাতে নিহতের পাশাপাশি অনেকেই গুরুতর আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী মোটর সাইকেলের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা আহতের বেশিরভাগই কিশোর, যাদের বয়স ২০ বছরের কম। রাজধানীর বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অধিকাংশ মোটর সাইকেল চালকের নিবন্ধন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তাদের অনেকে রাজনৈতিক পরিচয়ে অথবা প্রভাবশালী পরিচয়ে রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সূত্র জানায়, দেশে দিন দিন বেশি সিসির মোটর সাইকেল আমদানি হচ্ছে। আর তরুণ প্রজন্মও বিভিন্ন ডিজাইন ও গতির উপর নির্ভর করেই নতুন নতুন মোটর সাইকেল কিনছে। আর ওসব বেশি সিসির মোটরসাইকেল অনুমোদন দেয়া সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ইতোমধ্যে ৩৬ লাখের বেশি মোটর সাইকেল নিবন্ধনের অনুমোদন দিয়েছে। তার বিপরীতে ২৩ লাখ ৫০ হাজারের মতো ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া চালকের সংখ্যা। বাকি চালকদের মোটরসাইকেল চালানোর অনুমোদন নেই। সরকার মোটর সাইকেল উৎপাদন ও আমদানির ক্ষেত্রে সরকার নানা প্রকার সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। ফলে দেশে মোটর সাইকেলের ব্যবহার ব্যাপকহারে বাড়ছে। সূত্র আরো জানায়, গঠনগতভাবে মোটরসাইকেল অপেক্ষাকৃত একটি অনিরাপদ বাহন। ওই যানটি সাধারণত যুবক বা উঠতি বয়সীরা বেশি ব্যবহার করে। তাদের মধ্যে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর প্রবণতা খুব বেশি। যে কারণে সম্প্রতি দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এবারের ঈদযাত্রায় গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ঈদুল আজহায় যাতায়াতে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ৭৭৪ জন। বিগত ঈদুল আজহার তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ২৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং নিহত বেড়েছে ৩১ দশমিক ৪১ শতাংশ। বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটর সাইকেল। এবারের ঈদে ১১৩টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত ও ৬৮ জন আহত হয়েছে, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫ দশমিক ৪২ শতাংশ, নিহতের ৩২ দশমিক ৯১ শতাংশ। যদিও এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তে¡ও ১৫৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১২৩ জন, যা ঈদযাত্রায় মোট নিহতের ৩৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বিগত ৪ ঈদুল আজহার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার রেকর্ড ভেঙেছে। এদিকে মোটর সাইকেল প্রসঙ্গে সেভ দ্য রোড’র মহাসচিব শান্তা ফারজানা জানান, দেশে ৩৮ লাখের মতো মোটর সাইকেল চলাচল করে। সড়কের বেহাল দশা ও বিপজ্জনক গণপরিবহনের কারণেও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধে সরকারে মনিটরিং বাড়ানো প্রয়োজন। উন্নত দেশের মতো আলাদা সড়কে মোটর সাইকেলের জন্য বাইক লেন করা দরকার। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, এদেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো মোটরসাইকেল চালানোর জন্য উপযোগী নয়। তবে এখন মহাসড়কে আলাদা মোটর সাইকেলের জন্য লেন করা, গতি নির্দিষ্ট করার উদ্যোগ নেয়া সময়ের দাবি। পঙ্গু হাসপাতালে প্রতিদিন ২০০ মতো এবং ঢাকার বাইরে হাসপাতালগুলোতে যেসব দুর্ঘটনার রোগী ভর্তি হয় তার অধিকাংশই মোটর সাইকেলে দুর্ঘটনায় অক্রান্ত। গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন না হওয়ায়, ভোগান্তি ও যানজট থেকে বাঁচতে মানুষ বিকল্প হিসেবে ওসব ছোট পরিবহনের ব্যবহার অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়েছে। মোটরসাইকেল কখনো গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে দেশে বর্তমানে মোটর সাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা ক্যান্সারের মতো বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান জানান, উন্নত দেশে মোটরসাইকেল চালানোর সময় বিশেষ পোশাক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এদেশে ওই রীতি নেই। প্রতিবছর ৫ লাখ মোটর সাইকেল বিপণন করে কোম্পানিগুলোর ৫ হাজার কোটি টাকা আয় হলেও দুর্ঘটনায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। বেশি সিসির মোটরসাইকেল অনুমোদন দেয়ায় সিদ্ধান্ত দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে। জরুরি ভিত্তিতে মোটর সাইকেল ও ইজিবাইক আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা প্রয়োজন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com