এফএনএস : সমাপ্ত প্রকল্পের হাজার হাজার গাড়ি নিয়ম মেনে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে জমা পড়ছে না। এমনকি সরকার দফায় দফায় তাগিদ দিয়েও প্রকল্পের গাড়ির হিসাব নিতে পারছে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিগত ২০২১ সালের জানুয়ারি ও নভেম্বরে দু’দফা তাগিদ দিয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি লিখেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পের গাড়িসংক্রান্ত কোনো তথ্য জমা পড়েনি। যদিও বিগত ২০০৬ সালে প্রকল্পের গাড়ি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তৎকালীন সংস্থাপন (বর্তমানে জনপ্রশাসন) মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী প্রকল্প শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে গাড়ি সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে। কিন্তু জমা না পড়া সমাপ্ত প্রকল্পের হাজার হাজার গাড়ি অবৈধভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের কোষাগার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার জ¦ালানি তেল খরচ হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো গাড়ি সংক্রান্ত তথ্য জনপ্রশাসনকে দিতে আগ্রহী নয়। কারণ নিয়মমাফিক গাড়ি ব্যবহার করলে মন্ত্রী, সচিবদের চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি সরবরাহ করা যায় না। বরং নানাভাবে সমাপ্ত প্রকল্পের গাড়ি সুবিধা নেয়া হচ্ছে। আর ওসব বিষয়ে তথ্য না দেয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলো সবাই একাট্টা। অথচ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ২০০৬ সালে জারি করা এ-সংক্রান্ত পরিপত্র অনুযায়ী প্রকল্প শেষ হওয়ার ৬ মাস আগে গাড়িসংক্রান্ত তথ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ও সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরকে অবহিত করতে হয়। আর প্রকল্প শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে সেসব গাড়ি অধিদপ্তরে জমা দিতে হয়। কিন্তু ওই নিয়মের কোনো তোয়াক্কাই নেই। সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসে প্রকল্পের গাড়ির হিসাব নিতে তৎপর হয়। কিন্তু পরপর ৪ দফা চিঠি দিলেও তথ্য মেলেনি। তবে পঞ্চম দফা দেয়া কড়া চিঠির প্রেক্ষিতে ২৫টির মতো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের অধীনস্থ ৫ শতাধিক সমাপ্ত প্রকল্পের তথ্য জানিয়েছিল। বাকি অর্ধেকের বেশি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তখন তথ্য দেয়নি। ওই সময়ে আংশিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সরকার প্রায় ৯ হাজার গাড়ির হিসাব পেয়েছিল। তার মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মোটরসাইকেল, বাকি দুই-তৃতীয়াংশ জিপ, কার ও মাইক্রোবাস। আর এক দশক আগে অর্ধেক মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যানুযায়ী যদি ৯ হাজারের মতো গাড়ির হদিস মিলে, তাহলে গত এক দশকে প্রচুর প্রকল্পে কয়েকগুণ বেশি গাড়ি যুক্ত হয়েছে। কিন্তু ওসব গাড়ি সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী যানবাহন অধিদপ্তরে জমা পড়েনি। বরং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে অবৈধভাবে ব্যবহার হচ্ছে। ওসব গাড়িতে বিপুল পরিমাণ জ¦ালানি তেলও ব্যবহার হচ্ছে। প্রতিবছর ওসব গাড়ির পেছনে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার জ¦ালানি ব্যয় হচ্ছে। যা সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর দায়। সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০২১ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিবহণ শাখা থেকে অন্তত দু’দফা তাগিদ দিয়ে প্রকল্পের গাড়ির তথ্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই সংক্রান্ত কোনো তথ্য কোনো মন্ত্রণালয়ই দেয়নি। যদিও প্রকল্পের গাড়ির কীভাবে কী হবে তা পরিপত্রে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তা প্রতিপালন করছে না। এমনকি তাগিদ দিয়েও তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় দেড় যুগ আগে প্রণীত পরিপত্রে প্রকল্পের গাড়ি ঠিকমতো জমা না দিলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ কর্তাদের অনেকে নিজেরাই প্রকল্পের গাড়ি ও জ¦ালানির সুবিধা নিচ্ছে। ফলে ওই খাতে কোনো শৃঙ্খলাই নেই। এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রকল্পের গাড়ি অনিয়মে যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রকল্পের পরিচালকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। কারণ তেমন কিছু দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পারলে পরে সবাই পরিবহণ পুলে গাড়ি জমা দিতে বাধ্য হবে। সমাপ্ত প্রকল্পের গাড়ি পরিবহন অধিদপ্তরে জমা না দেয়া সুস্পষ্টভাবে সরকারি নির্দেশনার লঙ্ঘন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার উদ্যোগ নিতে পারে। আর কঠোর না হলে ওই উদ্যোগে সুফল আসবে না। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব নবীরুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের গাড়িসংক্রান্ত তথ্য কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আসছে না। ওসব গাড়ি কোথায় ব্যবহার হচ্ছে, কীভাবে জ¦ালানি পাচ্ছে তা জানা নেই।