এফএনএস আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে বার্ড ফ্লুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের ফলে ডিমের উৎপাদন সংকটে পড়েছে এবং বাজারে ডিমের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে দেশটিতে ডিমের চাহিদা পূরণে সহযোগিতা করতে তুরস্ক ১৫ হাজার টন ডিম রপ্তানি করছে।
বার্ড ফ্লুর সংক্রমণের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খামারে লক্ষ লক্ষ মুরগি মারা গেছে। কোনো খামারে ভাইরাস শনাক্ত হলে, সংক্রমণ প্রতিরোধে পুরো ঝাঁক ধ্বংস করে ফেলা হয়, যার ফলে ডিমের সরবরাহ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে এই মহামারির ফলে ১৬ কোটি ২০ লাখ মুরগি, টার্কি এবং অন্যান্য পাখি নিধন করা হয়েছে।
বার্ড ফ্লুর পাশাপাশি ডিম উৎপাদনের ব্যয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। খাদ্য, জ্বালানি ও শ্রম ব্যয় বৃদ্ধির কারণে খামারিরা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যে খাঁচামুক্ত ডিম বিক্রির বাধ্যবাধকতা, যা ডিমের সরবরাহ সংকটকে আরও তীব্র করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ডিমের মূল্যবৃদ্ধি দেশটির সামগ্রিক খাদ্য মূল্যস্ফীতির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত জানুয়ারিতে মার্কিন বাজারে এক ডজন গ্রেড—এ ডিমের গড় মূল্য ৪.৯৫ ডলারে পৌঁছায়, যা দুই বছর আগের ৪.৮২ ডলারের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অনেক জায়গায় এক ডজন ডিমের দাম ১০ ডলারের বেশি হয়েছে, বিশেষ করে অর্গানিক ও খাঁচামুক্ত ডিমের ক্ষেত্রে এই দাম আরও বেশি।
বিশে^র শীর্ষ ১০ ডিম রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে তুরস্ক অন্যতম। চলতি মাস থেকে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে ডিম রপ্তানি শুরু করেছে, যা আগামী জুলাই পর্যন্ত চলবে। তুরস্কের ডিম উৎপাদনকারী কেন্দ্রীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম আফিয়ন জানিয়েছেন, ৭০০ কন্টেইনারে প্রায় ১৫ হাজার টন ডিম রপ্তানি করা হবে।
এই রপ্তানির মাধ্যমে তুরস্ক প্রায় ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের প্রত্যাশা করছে। মার্কিন বাজারে ডিমের সংকট সাময়িকভাবে কমানোর লক্ষ্যে দেশটির ইউনাইটেড এগ প্রডিউসারস—এর প্রধান নির্বাহী চাড গ্রেগরি জানিয়েছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ডিম সরবরাহে যে চাপ পড়েছে তা কমাতে আমরা সাময়িক আমদানিকে স্বাগত জানাই।”
যুক্তরাষ্ট্রে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। গত মার্চে টেক্সাসে প্রথমবারের মতো দুগ্ধজাত গবাদি পশুর মধ্যে বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর থেকে অন্তত ৭০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী কয়েক মাসে ডিমের চাহিদা আরও বাড়তে পারে, বিশেষ করে ইস্টারের সময়, যা বাজারের সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। মার্কিন কৃষি বিভাগের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ডিমের দাম আরও ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।