এফএনএস বিদেশ : শুল্কযুদ্ধের নতুন পদক্ষেপ হিসেবে চীন দুর্লভ খনিজ, প্রাকৃতিক চুম্বক (ম্যাগনেট) সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করবে না তারা। চীনের এই পদক্ষেপের কারণে বিরল ধাতু, মৌল ও চুম্বকের সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধাক্কা লাগবে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে গাড়ি, অ্যারোস্পেস, সেমিকন্ডাক্টর ও সামরিক শিল্প বড় সমস্যায় পড়তে পারে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমে্সর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যযুদ্ধ মোকাবিলা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে আলোচনা করে এসেছে চীন সরকার। চীন থেকে কোন কোন জিনিস রপ্তানি করা হবে তা নিয়ে একটি নতুন বিধিমালা ব্যবস্থার খসড়া তৈরি করেছে চীন প্রশাসন। সেই খসড়া তালিকাতেই আছে বিরল খনিজ এবং চুম্বকের কথা। একবার এই নতুন ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলে কয়েকটি কোম্পানিসহ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কনট্রাক্টরদের জন্যও স্থায়ীভাবে এই খনিজ এবং চুম্বক রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে বিপদে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, গাড়ি থেকে শুরু করে ড্রোন, রোবোট এবং ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত অনেককিছু তৈরিতেই চুম্বক অপরিহার্য। চীন প্রশাসন ইতোমধ্যেই বিভিন্ন চীনা বন্দরে চুম্বকের চালান পাঠানো বন্ধ করেছে। সেইসঙ্গে বিরল খনিজ পদার্থও রপ্তানি না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই খনিজ বৈদ্যুতিক গাড়ি থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সরঞ্জাম তৈরিতে কাজে লাগে। যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিরল খনিজ এবং চুম্বক আমদানি করে, যার বেশির ভাগটাই আসে চীন থেকে। অনেকেই বলছেন, চীন এই দুই জিনিস রপ্তানি না করলে চাপে পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিল্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল থেকে চীনের পণ্যে যে শুল্ক কার্যকর করেছেন তার জবাবেই চীনের এমন পদক্ষেপ। চীন এই সিদ্ধান্ত দুই মাস বহাল রাখলেই কাস্টমারদের গুদাম খালি হয়ে যেতে পারে। চীন সরকার গত ৪ এপ্রিলেই ছয়টি বিরল ভারী ক্ষারমৃত্তিকা—সহ বিরল চুম্বক রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। ওই বিরল ক্ষারমৃত্তিকাগুলো কেবল চীনেই পরিশোধন করা হয়। আর বিরল চুম্বকগুলোর ৯০ শতাংশই চীনে উৎপাদিত হয়। এই খনিজ এবং চুম্বকগুলোর চালান এখন কেবল বিশেষ রপ্তানি লাইসেন্স থাকলেই চীনের বাইরের কোনও দেশে যেতে পারবে। আর বাণিজ্যযুদ্ধ চলার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই লাইসেন্স পাওয়া কঠিন হবে। তবে চীন এখনও এই লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া তেমনভাবে শুরু করেনি। একারণে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের আশঙ্কা, এই প্রক্রিয়ায় কালক্ষেপণ হতে পারে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ পদার্থগুলো চীনের বাইরে যাওয়া কমে যেতে পারে। ২ এপ্রিল ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের ঘোষণার দিন থেকেই হাজারো সমস্যার সূত্রপাত। ২ এপ্রিলের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।